রোজ স্বপ্ন দেখি,
একদিন সহস্রতম কবিতাটি লিখে ফেলবো।
সেই শিশুকাল থেকে ধরেছি কবির হাত;
ঘুরেছি সাগর, নদী, বিম্বিসার, মিশরের জলপ্রপাত।


কবি, এই শিশুর হাত ধরে,
কোমল পায়ের দ্রুতি হয়ে,
নিয়ে গেছেন কোথায়।
জানি না... চিনি না... বুঝি না...
শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকেছি।


কখনো মাঝপথে তিনি হাত ছেড়ে দেন।
সবুজ দেওয়ালের ঘেরাটোপে
পড়ে থাকে একা শিশুমন।


আবার হঠাৎই ফিরে আসেন—
ভোরের নিভু নিভু আলোয়,
কপোতাক্ষ কিম্বা ধানসিড়ির তীরে।


কখনো চোখে কলমের খোঁচা দিয়ে ঘুম তাড়ান।
আবার কখনো নিজেই, কোলের নরম বালিশে
মাথা চেপে ধরেন।
চোখে শান্ত উচ্ছ্বাস এনে দেন,
স্বরবৃত্তের গান শোনান।



রোজ স্বপ্ন দেখি,
একদিন ঠিক বড়ো হয়ে যাবো।
কবির সাথে আবার দেখা হবে...


আচম্বিতেই হিচড়ে টেনে ধরেন চুলের মুঠি!
ভিতরের কর্দমাক্ত আত্মাটাকে নিংড়ে দেন।
গরিমা জর্জরিত হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে,
মারণ রোগের শল্যচিকিৎসক হয়ে ওঠেন।


কখনো ছুড়ে ফেলেন আমায় অট্টালিকার বাইরে।
ঘুরে ঘুরে দেখান, আফ্রিকার ঘামাচি ধরা মাঠ।
ভিনদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় মত্ত যুবকের স্বপ্ন ভাঙা কাচ।
অকালে মরে যাওয়া প্রদীপের উদ্বৃত্ত সম্ভাবনা।


তিনি শোনান,
মানুষের মাঝে মানুষেরই পর হয়ে যাওয়া গল্প।
রক্তের জলপ্রপাতে ঠেলে ফেলে দেন!
বিদীর্ণ বক্ষের আর্তনাদ স্বরূপ অট্টহাসি হাসেন।


আমি দেখি, শুধুই খুনোখুনি।
বিবিধের মাঝে মিলন খুঁজে পাইনা আমি।
কবির দেখানো মৃত্যু-উপত্যকায় আমার দম আটকায়।
কবির মাতৃভূমিকে কোথাও পাইনা খুঁজে।



আবার স্বপ্ন দেখি,
কবির কাছে গল্প শোনার।
তিনি আয়না নিয়ে এসে, মুখের উপর কালো রঙ ছিটিয়ে দেন।
কলঙ্কিত মুখ দেখে, গর্জে ওঠা আমি
শূন্যে প্রশ্ন ছুঁড়ি।


কবি হারিয়ে যান...


নিজের আচরণই হাতড়ে ফেলে চারিত্রিক শংসাপত্র।
কবি আয়নার ভিতর থেকে নিঃশব্দে হেসে ওঠেন।



রোজ ধৃষ্টতা পোষণ করি!
কবির মতো অমর হওয়ার সাধ বাঁধি বুকের তন্তু জুড়ে।
খ্যাতির লালসা মিশ্রিত স্বাদু জলে, নিমজ্জিত আমার নিস্তেজ জিহ্বা!


কলমের এক কোঁপে বলি হয়ে যায় শত শত স্বাদকোরক।
রক্তজোয়ারে ভেসে যায় মুখগহ্বরে পোষিত কটুবাক্যের সংসার।


কবি ধূর্ত শকুনির মতো, চোখ দুটো উপড়ে নেন। ছুঁড়ে দেন পড়শি ব্রহ্মাণ্ডের ছায়াপথে।
কবি মনের তীব্র নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে
নিষ্পলক, প্রাণহীন, সচেতন দুটি চোখ।
বিচ্ছুরিত রশ্মির সাথে মিশে যায় আলোকের আলোলিকা।


কবি ক্ষণিকের খ্যাতির আড়ালে, চিরস্থায়ী দুঃখ দেখান।
বর্ধিষ্ণু নস্বরতার বাগে শুকিয়ে যাওয়া জীবন দেখান।
চিনিয়ে দেন, পৃষ্ঠপোষক ভিড়ে গা ঢাকা দেওয়া গুটি কয়েক আপনজন।
কবি খুঁজে দেন, নির্ভেজাল পথের দিশা।



ঘুম ভেঙে যায়।
সহস্রতম কবিতাটি লেখার সংকল্প নিয়ে,
নবজাগরণের আলো মাখে দুটি চোখ।


শিশুর ত্বকে আবৃত, দক্ষ আঙুলগুলি
তুলে নেয় পরিণত কলম।
পশ্চিমের অ্যাসিড ঝলসানো দেওয়ালে,
চতুষ্কোণী কাচের ভেতর থেকে—
কবির জোড়া পলক জুড়ে প্রজ্জ্বলিত হয়,
সম্ভাবনাময় স্ফুলিঙ্গ!