বিষন্ন ঝরাপাতার গুচ্ছ চিরকুট
নিপুন নগরী
১.
"জীবিত না মৃত! কোন দলে"
---
শোষনের কোন দ্বিতীয় অনুশব্দ নেই?
পায়তারা করে বেড়ানো কথাগুলো মনে নেই?
এক রাজ্য জাহির করা কথা গুলোর মত -
স্বাধীন কথা গুলো কেঁড়ে নিয়েছে যারা।
তাদের সাথে মিছিলে কি করো; স্বপ্ন খুঁজ?
কখনও কখনও শোষণের থেকে জীবন বড় হয়।
জীবনের কোন অনুশব্দ নেই!
জীবত না মৃত! কোন দলে -
আঙুলের ছাপ রচনা করে গড় ইতিহাস
রচনা কর বাকস্বাধীনতার মৃত্যু।
যে স্বাধীনতা এঁকে রক্তের বলয়ে রচনা করা
শক্তিমত্তার বার্তা চালাচ্ছে যারা।
তাদের সাথে মিছিলে কি কর?
নিজেকে গড়ে তোল! না নিজেকে জাহির কর।
শক্তিমত্তার প্রলোভন দেখিয়েছে অতীত ছোবল।
আর না; অনেক হয়েছে।
এবার থামো; ক্যালকুলেশন করে করে দিন শেষে
কোথায় গিয়ে থামো, এ্যালকাহোলের দোকানে।
এত নেশা, এত মরণ নেশা তোদের।
নেশায় পড়ে ভুলে যাস মানুষ না জীব!
মৃত্যুর রক্ত খেলা বন্ধ কর।
নতুবা তোদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে;
একদিন বাংলা ঘিরে রচনা হবে সোনালী
ফসল, সাম্য আর স্বচ্ছতার গান গাইবে।
কৃষকেরা আঙ্গুলের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পাবে
আবারো মানচিত্রে প্রাণের বাংলা ।।
'নিহত আরার ও বিষন্ন চিরকুট হতে'
২.
"উঠনে পাতা রোদ"
---
মুখোমুখি বসে দেখ কি অবেলায় বারণ করেছি তোমায়, তুমি ফিরে যাও রক্তক্ষরণ দেখতে
যুদ্ধের প্রযোজন নেই।
জানালার পাশে রক্তজবার বসবাস।
দক্ষিণের বারান্দা খোলা।
রাতের উঠনে পাতার মিহি শব্দের আবাসন।
তোমাতে ভ্রান্তিহীন কোন স্বপ্নের সমাধি
রচনা করে, সমাধিফলকের শান্ত নিবিড়
পরিচর্যা চলে বুকের ফলকে অবরুদ্ধ কারাগার।
রাত্রি সকল তুলে রেখে ভোরের স্বপ্নের আরোপ করে এমন তার সীমারেখা যেখানে ঘুম নেই।
সমান্তরাল ভাবে ভিন্ন কোন পথে জীবনের সুখ।
আমাকে মোহগ্রস্ত করে, আবার ফিরে যায়।
পুরোনো বন্দরে পরিচিত নোঙ্গর ডাঙ্গার হাসি
অভিলাষ ব্যক্ত করে যায় অভিমানের চড়াই-উতরাই
যেখানে সমাধি সেখানে চাষ কর।
যেখানে ভুল আর রাগ সেখানে সমুদ্র একে দেও।
বৃষ্টির গান শুনে অবারিত রাত, কিছুটা মুহূর্ত তুলে
দেও ফুরসত দেও মুক্তি, দেও নীড়।
ঘুমন্ত কোন রাজপুরী জেগে উঠুক সূরেলা চর জাগা
নতুন পাড়, ভাঙা গড়ার খেলায় এক প্রস্থ
জমিন কিনে দেও, দেও উঠান যেখানে রোদ এসে বলে যাবে ভালো আছি ।।
'শরৎ সকালের চিরকুট হতে'
৩.
"সুনীল সমুদ্রের জনপদ"
---
তবে তুমি যদি হও কোন মরন ক্ষুধা তবে যদি হও পিপাসা; আর্তনাদ করে যদি তোমার শরীর।
মরন যদি বাঁধে বাসা।
তবে হও জল হও ঝরো আরো অবিরত,
সাদা পানির মত।
ঝরে পরো কান্নার মত নোনাধরা স্বাদের পিপাসা
মেটানো জলের প্লাবন।
কান্নার কোন দ্বিতীয় অর্থ আমার জানা নেই।
নয়তো হও কোন বুকের ব্যাথা;
কষ্টের উপসর্গ খারিজ কর।
বুকের পেন্ডুলামের মতো গুনে গুনে দেও হৃদস্পন্দন তবে কি তুমি মরন সুধা রক্তাক্ত কারবালা, নহরে প্লাবিত; তৃষ্ণার কথা বলে এসে ধরা পরে আবার কি বলো- প্রিয়জন হারানো ব্যাথা, নতুবা আত্মকথা।
তবে হও, হও মহীয়ান গড়ে তুলো ইতিহাস,
যুদ্ধ স্মৃতি; বিষন্ন স্মৃতির এক এপিটাফ গড়ে তুলো সাম্রাজ্যের শাসন রাজ দরবার।
পানশালা আর মদের বোতলে জমানো কষ্ট
তিলে তিলে মরার থেকে, মরে যাওয়া ভালো।
তবে কি তুমি ধ্বংস শহর, মৃতের আশ্রয়, নাকি তুমি-
সংশয়, মিথ্যে কথার আদলে গড়া ঘুমন্ত রাজপুরী!
--
মিথ্যে সকল ছুড়ে ফেলো, দাঁড় খুলে তুলে নেও অশ্রু! কষ্ট আঁকড়ে চলে যাও সমুদ্রের কাছে।
একবুক অশ্রুজল লুকিয়ে ঘুমিয়ে আছে যে ফেলিন-
সমুদ্র; আর কতটা নীল চাই তোমার, আর কতটা।
ঘুড়ে দেখো ফেলে আসা সৈকতে তোমাকে কেউ ডাকেনি কেউ তোমাকে বলেনি, এ কষ্টটুকু আমার গভীরের ছিল।
--
চোখের স্বাধীনতা টুকু বাঁচতে শিখুক, কথা বলে উঠুক সমস্ত কান্না গুলো, সমুদ্রের গভীরে, হতাশা আর ক্লেশ- দুটো পথ খুজে চলুক, সমুদ্রের কাছে।
এই কান্না আবারিত হয়ে ধরা দিবে বিশালতার মাঝে; এক ক্ষুদ্র জনপদে।
সমস্ত কিছু দূরে ঠেলে দিয়ে চলে যাও আরো গভীরে; সুনীল ক্লান্ত শরীরে কি দেখতে পাচ্ছো! আরো একটু- অবারিত কর দু'চোখ বন্ধ কর; চোখ খুলে দেখ তোমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে তোমার কষ্ট আর হতাশা।
চারিদকে তাকিয়ে দেখ, আবারিত জনপদ কতটা একা-কতটা নিঃসঙ্গতার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে নিজেকে; কতটা গভীর সে বিষন্নতা আর সঙ্গহীন এক নিরবতা; নিশ্চুপ থেকে নিজের কথা গুলো বলে উঠো; সবকিছু।
এক বিস্তৃত একা বিশালতার আড়ালে হারাবো সব।
তাকিয়ে দেখ কি অবারিত নিঃসঙ্গতার মাঝে হারাবে- তোমার মনের এক অস্তিত্বের জনপদ তোমার জমা কান্না হারাবে সকল অতীত, তার বাহনকে সমস্তটা; সমুদ্রের কাছে তাকিয়ে দেখ তোমার নিজের বলে কিছু নেই এক সুনীল সমুদ্রের কাছে হারাবে তোমার জনপদ ।।
'সমুদ্রের জলসিক্ত চিরকুট হতে'