শিবপ্রকাশের কয়েকটি কবিতা


( এইচ এস শিবপ্রকাশ কন্নড় ভাষার কবি। তিনি ইংরেজীতেও কবিতা লেখেন। তাঁর কবিতা দেশে বিদেশে বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কবি বার্লিনে টেগর সেন্টারে ডাইরেকটর হিসেবে নিযুক্ত হন। সারা পৃথিবী ঘুরে তিনি রসিক মহলে কবিতা পাঠ করে শুনিয়েছেন। একই সঙ্গে শৈব্য ভক্তিধারা আর মার্কসবাদকে নির্দ্বিধায় বুকের মধ্যে লালন করে চলেন। তিনি নামে শিব, মনে প্রাণেও যেন নীলকণ্ঠ । কণ্ঠে বিষ। গলায় বিষধর সর্পালঙ্কার। চোখে বিরাজিত শান্তি। হৃদয়ে মানব দরদী কবির বেদনা। )


। । ১। ।


আজ রাতে


আজ রাতে
খুন হয়ে গেছে যারা
ধর্ষিতা হয়ে গেছে যারা
তারা কেউ মৃত
কেউ অর্ধমৃত
কিন্তু সকলেই ঘুমায় এখন।


আজ রাতে
খুন করে গেছে যারা
ধর্ষণ করে চলে গেছে যারা
তারা সকলেই পাপী
কিন্তু নিশ্চিন্ত নিদ্রামগ্ন।


আজ রাতে
শুধু অভিশপ্ত কবি
শিবপ্রকাশের চোখে ঘুম আসে না---


কবি মৃতর জন্য কাঁদে
কবি ধর্ষিতার জন্য কাঁদে


কবি খুনীর জন্য কাঁদে
খুনী  সে তো নিজেকেই খুন করে চলে ,
কবি ধর্ষকের জন্য কাঁদে
ধর্ষক সে তো নিজেকেই দিনরাত ধর্ষণ করে ।


কবি নীলকণ্ঠ শিবপ্রকাশ
কবি প্রণত মহাদেবে
কবি সর্প দংষ্ট্র জর্জরিত বিষে


। । ২। ।


মাটি আর জল


একজন জল আর একজন মাটি
শুভ পরিণয়ে মেঘ-পুরোহিত ডাকি
মেঘ বলে চির সাথী জল আর মাটি।


ভেসে যায় মেঘ দুরে
মহাকাশে উড়ে উড়ে।


একজন জল আর এক জন মাটি
দুজনের বিচ্ছেদে মেঘকেই ডাকি।


ভেসে ভেসে যেতে যেতে
বলে যায় মেঘ—


চির বিচ্ছেদ্য জল আর মাটি
নিয়তির পরিহাস দুজনার জুটি।


মেঘ দুরে ভেসে যায়
উড়ে যায় মেঘ


একজন জল আর একজন মাটি
দুরে চলে যেতে চায়
তবু তারা থেকে যায়
নিয়তির পরিহাস দুজনার জুটি !


।।৩ ।।


পদ্ম


সেই পদ্ম শুধু মাত্র এই দীঘিতেই ফোটে
অথচ ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে চারিধার
কুয়াশা কাটবে বলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার কাল
কেটে গেলে দেখি
পদ্ম নয় প্রস্ফুটিত অপরূপ মুখশ্রী তোমার ।


রাত্রির ঘন তমিস্রা  কেটে যাবে তাই
ভোরের সূর্য ওঠার অপেক্ষায়
কত ক্ষণ বসে আছি ঠায়
অবশেষে পুবের দিগন্তে
রক্ত জবার মতো আলোকিত করেছে
সূর্য নয় প্রস্ফুটিত অপরূপ মুখশ্রী তোমার ।


মেঘেঢাকা সন্ধ্যায় চাঁদকে সাজাবে বলে
এক আকাশ তারার অপেক্ষায়
কেটে যায় কাল
অবশেষে মেঘ গেলে ভেসে
তারাদের দল তোমারই মুখশ্রী জুড়ে
চন্দন আল্পনা আঁকে ।


সেই থেকে
আমার দিকে চেয়ে আছো তুমি
দিনে রাতে স্বপ্ন জাগরণ জুড়ে
অপরূপ মুখশ্রী তোমার
এই মাটি,পৃথিবীর মতো সুন্দর,
এই ধরিত্রীর মতো যন্ত্রনাকাতর
অপলক দেখতে থাকে আমায়


এই ভোরে আধো ঘুমে
আমার বিছানা এক উড়ন্ত স্ট্রেচার ---
এক অবগুন্ঠিতা পরী
আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে
আমার খাটের নিচে
দিন, রাত, সকাল, সন্ধ্যা,
নক্ষত্র খচিত আকাশ,
রক্তাক্ত রণক্ষেত্র,
পবিত্র দেবালয়,
সাম গানে ভরপুর অভয়ারণ্য


এক আবিল সুগন্ধে ভোরে ওঠে চারপাশ
আমার অস্তিত্ব আধো ঘুম থেকে
ধীরে ধীরে পাড়ি দেয় পূর্ণ জাগরণ পানে।
ভোরের আলোয় মিলিয়ে যায় পরী,
দৃষ্ট, শ্রুত, ঘ্রাত, অনুভূত নিসর্গ
দূরে মিলিয়ে যায়
এখন জাগরিত আমি ।


।।৪।।


একটি এন্টি কবিতা


( সৌজন্যে : মারাঠি কবি বিন্দা কারিন্ডিকার )


" সে ছোকরা শৈশবে আরব সাগরে হিসি করে দিয়ে, কতটা জলস্তর বাড়লো, সেই হিসেবটা কষতে কষতে জীবন কাটিয়ে দিলে ।”


তারপর


যৌবনে হিমালয়ের পাদদেশে মলত্যাগপূর্বক,
পৃথিবীর জ্ঞানী গুণী মানুষ যতজন
সবাইকে এত্তেলা দিলে ----
এই যে পামির মালভূমি থেকে
মায়ানমার পর্যন্ত চিৎপটাং হিমালয়
এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা
দেখোতো বাপু একটু মাপজোক করে।
আহা এত্তেলা তো নয়
যেন এক মহা সংগীত,
অর্ধস্ফুট মহামন্ত্র, অমৃতময় বাণী !
যেই না শোনা সেই বাণী ( নাকি আদেশ?)
যেখানে যত যে বিষয়ের পন্ডিত ছিলো
সেই ঐতিহাসিক মলত্যাগোত্তর ক্রমবর্ধমান হিমালয়ের
কি দৈর্ঘ্য, কি প্রস্থ কি উচ্চতা
মাপজোক নিমিত্তে নিত্যনতুন
যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনে নিমজ্জিত হোলো ।
আর যারা মহা পন্ডিত
তারা আজও বসে বসে ভেবে চলেছে
এ কি গভীর বাণী !
দেশে বিদেশে বিভিন্ন ভাষায়
অনুবাদিত সেই বাণীর নিহিতার্থ
আজও গবেষণার বিষয় ।
আজও ক্রমান্বয়ে ব্যর্থতার ইতিহাস
রচিত হয়ে চলে,
জ্যোতিষীরা নতুন নতুন পঞ্জিকায়
মলত্যাগের মুহূর্তে সঠিক গ্রহ নক্ষত্রের
অবস্থান নির্ণয়ে ব্যস্ত নিরবধি ।
ঠিক কোন সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষিতে
এই মলত্যাগ তা ভাবতে আজও ব্যাস্ত
কত সমাজতাত্বিকের দল।
ঠিক কি জীবনচর্যার অনিবার্য ফল
এই ঐতিহাসিক ইয়ে
ভেবে ভেবে হয়রান কত শত ভ্রূণ তাত্বিক মশাই।
সব থেকে বড় কথা
নৈশব্দ - বিসারদের দল
আজও নিঃশ্বাস বন্ধ করে ভেবে চলেছেন
কোন সে অধিবিদ্যার রহস্যে
সেই মহা মলত্যাগি সেই থেকে
আজও তাঁর সব সৃষ্টি স্থগিত রেখে
নিশ্চুপ মহা বিরাজমান ।