শব্দেরা ঠান্ডা লেগে মরে না।


মুল রচনা : কেদারনাথ সিং


রূপান্তর : নির্ঝর মুখোপাধ্যায়


শব্দেরা ঠান্ডা লেগে মরে না
তারা মরে যায় ভয়ে
গুমোট ভ্যাপসায় পচে যায়


একবার আমাদের গ্রামের
নদীর ধারে ঝোপে
উজ্জ্বল লাল পাখির মতো
একটা শব্দ দেখেছিলাম
আমি তাকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম
কিন্তু যেই আমাদের বাড়ির চৌকো কাঠের দরজাটা দেখা
হঠাৎ সে এতো ভয় পেয়ে গেল
আর বাঁচানো গেলো না তাকে


তারপর থেকেই শব্দে আমার ভীষণ ভয়
কোন ভাবে তাদের ঘাড়ে পড়লে
এক ছুট্টে পালিয়ে আসি ফিরে
বেশ ঝাঁকড়া চুল ওলা উজ্জ্বল রঙের কোনো শব্দ
আমার দিকে যদি দেখি আসছে
ভয়ে দু চোখ বন্ধ করে থাকি


তবে ধীরে ধীরে খেলাটা জমে গেল বেশ
একদিন কি সুন্দর দেখতে একটা শব্দকে
মারলাম এক ঢিল
শব্দটা সর সর করে সাপের মতো
একটা খড়ের গাদায় লুকিয়ে পড়লো
এখনো মনে পড়ে তার ঝকঝকে অপূর্ব দুই চোখ


যতদিন যায়
আমারও ভয় কমে যায়
এখন দেখা হলে
আমরা একে অপরের কুশল জিজ্ঞাসা করি,
শব্দদের লুকোনোর ঠেকগুলো
এতদিনে মোটামুটি চিনে গেছি আমি
তাদের গায়ের রংগুলোও জেনে গেছি আমি
এখন আমি জানি---
সব চেয়ে সাদাসিধে শব্দ গুলো
বাদামি আর হাল্কা হলুদ রঙের,
মারাত্মক সব শব্দেরা গোলাপী কিংবা ফ্যাকাসে হলদে,
খুব দুঃখ আর বেদনার জন্য জমিয়ে রাখা
সব শব্দ, ঠিক সেই সময়েই অশ্লীল হয়ে যায়


এবার তাহলে কি করি ?
আমি তো জেনে গেছি---
আস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়া
জঘন্য রঙের কোনো কম্মের নয় সব শব্দ
বিপদের দিনে
তারাই তো সব চেয়ে বিশ্বাসী বন্ধু !


এই তো গতকালেরই ক্থা---
একটা অন্ধকার রাস্তায়
হঠাৎ  কোথা থেকে ছ সাতটা
সুন্দর স্বাস্থ্যবান শব্দ
আমাকে ঘিরে ধরেছিল
ভয়ে বাক্যহারা হয়ে যখন
দর দর করে ঘামছি আর ঠক ঠক করে কাঁপছি
পালাবো বলে যেই না পা টা তুলেছি,
কোথা থেকে একটা ছোট্ট শব্দ
সারা গা রক্তাক্ত তার
হাঁফাতে হাঁফাতে এসে আমায় বলল,
'আসুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই।'


(কেদারনাথ উত্তর প্রদেশ থেকে আগত একজন স্বনাম ধন্য হিন্দি ভাষী কবি। বেনারাস  হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে পড়া শোনা শেষ করে গোরক্ষ্পুরে অধ্যাপনার জীবন শুরু। কর্ম  জীবনের শেষ চোদ্দ বছর জহরলাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা। সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও আরো বহু সম্মানে ভূষিত।)