(ইতিহাস না জানা এবং ইতিহাস ভুলে যাওয়া, বিস্মৃতিপ্রবণ বাঙালির কাছে স্বল্পপরিসরে মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস রসঘনপথে বর্ণনা করার জন্যই আমি পালাগানের আদল গ্রহন করেছি। তাই বেদনাদীর্ণ বহু ঘটনাকে আমি পরিবেশন করেছি কিছুটা ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের মোড়েকে। ইয়াহিয়ার শোষনের বর্ণনার থেকে তার আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়েই শেষ হয় 'ইয়াহিয়াকাল'।)


আসরে বইছেন যতো হিন্দু মুসলমান
সবারে জানাই আমি প্রণাম-সালাম ;
আর যত আছেন প্রিয় বৌদ্ধ-খৃষ্টান
সবারে জানাই আমি প্রীতি-নমষ্কার ।
প্রতিটি কবিরই রয়েছে নিজস্ব ঈশ্বর,
কবির কবিত্ব সব তিনিই করেন দান ।
আমি সর্বাগ্রে বন্দনা করি তাঁর, পরে
ইয়াহিয়াকালের কথা করিবো বয়ান ।
আমার ইতিহাস-বর্ণনার পদ্ধতি হবে
এরকম---আপনারা উঠে প্রশ্ন করবেন,
আমি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিমু ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-প্রচারিত
এম.আর.আখতার মুকুল সাহেবের
লেখা 'চরমপত্র'-র ভাষা ও টেকনিক
আমি ব্যবহার করবানি মাঝে-মধ্যে ।
কেননা, ইয়াহিয়ার মতো 'চরমপত্র'ও
জানি এখন আমগো জাতীয় সম্পদ ।
আমি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিমু
কখনও কবিতায় কখনও গদ্যে-পদ্যে ।'


সবাই সমস্বরে বলবে :
জি ভাইজান, ঠিক হ্যায় ।
এইভাবে ভণিতা সম্পন্ন হওয়ার পর
শ্রোতারা একে-একে কবিকে প্রশ্ন করবে :
[তা এক বা দু'তিন জনও হতে পারে । ]
কবি ক্রমান্বয়ে সব প্রশ্নের দিবেন উত্তর ।


               *******


হেলালই-জুররত, নিশানই-পাকিস্তান,
এবং চিপ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
জেনারেল আগা মহম্মদ ইয়াহিয়া খান
ক্ষমতায় বসিয়া জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত
বেতার ভাষণে কী আশ্বাস বয়ান কিয়া ?


'আপনাদের বহুত-বহুত শুকরিয়া ।
আচ্ছা সাওয়াল আপ পুছ কিয়া ।
জেনারেল ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে
দেয়া তার ঐ প্রথম ভাষণে বললেন :
'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, হে
প্রিয় দেশবাসী, আসসালামালাইকুম ।
পাকিস্তানের এই চরম সংকট মুহূর্তে
আমি ক্ষমতা ভোগ করতে আহি নাই,
আমি আইছি পাকিস্তানের স্বাধীনতা
ও অখণ্ডতা হেফাজত করার জইন্য ।'


ভাষণ শুইন্যা সবাই হাততালি দিল,
সমস্বরে কইলো, --- ধন্য, ধন্য, ধন্য ।


তখন পর্যন্ত সামরিক শাসন বলতে
আমরা শুধু আইয়ুব খানরেই চিনি ।
ইনি নতুন মাল, অজ্ঞাত-কুলশীল ;
কী কারণে জানি না, ইয়াহিয়া সাবের
চেহারার সঙ্গে ছিল হনুমানজির মিল ।
পিরথিবীতে এতো সব দেশ থাকতে,
পাকিস্তানকে ধ্বংস করনের লাইগাই
আল্লাহপাক পঞ্চনদের দেশে তারে
পাঠিয়েছিলেন কি না, বলাডা একটু
কঠিনই হবে, যথার্থ গবেষণা বিনা ।


তবে দু'জনের মধ্যে পার্থক্যও আছে;
বীর হনুমান ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রর ভক্ত,
আর ইয়াহিয়া আছিলেন RUM-এর ।


      
(ক্রমশ...)


(কাব্যগ্রন্থঃ ইয়াহিয়াকাল । প্রকাশকালঃ জুন ২০১১। প্রকাশকঃ আবিষ্কার।)