সদ্য কিশোরী থেকে যৌবনে পড়েছে
পাহাড়ী ঝর্ণা।
এখনই সময়! নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে গড়ে তুলবে।
খোলা আকাশের নিচে। ছড়িয়ে দেবে
নিজের স্বচ্ছতা সম্মপূর্ণ প্রেমের কাছে,
সেই প্রেমের গভীর থেকে গভীরতর
পর্যায়ে পৌঁছাতে চাইছে পাহাড়ী ঝর্ণা।
এমন সময়, তার পাহাড়ী বাপ
ভয় পেয়ে যায়
ঝর্নার যৌবনের লাবন্য দেখে;
পাহাড়ী- ঝর্ণাকে বোঝায় সে
নিরাপদ নয়, হিংস সমাজের কাছে  ।
কিন্তু সে মানবে কেন!
সে আপন বেগে বইতে চাইছে।
ঝর্না তার পাহাড়ী বাপের কথা
না শুনেই দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে;
তার প্রেমের কাছে পৌঁছাবে বলে।
বহুবার চেষ্টা করে তার বাপ
তাকে বাধা দেওয়ার ।
কোনো বাধাই মানবে না ।
ঝর্না। তার বাপকে বলে - ' তুমি আমাকে
আটকে রেখো না। পারবেও না বেশিক্ষণ,
কারণ আমার গতি নিম্নগামী
আমাকে যেতে দাও; আমার প্রেম যে অপেক্ষায় আছে! '
পাহাড়ী ঝর্ণা আবার চলতে শুরু করে।
দিনরাত একাকার -
তাকে নিচে নামতেই হবে,
দুর্গম পথ, তাকে যেতেই হবে।
কারণ সে স্বপ্ন দেখে ছিলো।
তার জন্য অপেক্ষায় আছে সমতলের সমুদ্র !
রাতের অন্ধকার, টিম টিম
করে জ্বলছে আকাশের তারাগুলি।
পাহাড়ী ঝর্ণা আবার ভাবতে শুরু করে,
সমতলের সমুদ্র - র সঙ্গে
যখন দেখা হবে, তখন এমনই রাতের তারাগুলি
সাক্ষী হয়ে থাকবে!
হটাৎ কিছু শব্দ শুনতে পায়, জঙ্গলের
মধ্যে দিয়ে বইছে ঝর্ণা;
জঙ্গলের বুড়ো গাছ গুলো পাহাড়ী ঝর্নাকে
ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছে
আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে
- ' দ্যাখ...দ্যাখ কতখানি সুন্দরী স্বচ্ছ বয়ে চলেছে।
আগে তো কখনো দেখিনি।'
- ' এই মাগী তুই কোথা যাস? আয় আমাদের
কাছে, তোকে রানী করে রাখবো!
কি অপূর্ব তোর চলন।'
- আমি দাঁড়াতে পারবো না,
একজন অপেক্ষায় আছে আমার।'
কি ভয়ঙ্কর !
কি বিশাল বিশাল চেহারা তাদের ;
যেন গিলে খেতে চায় পাহাড়ী ঝর্ণা কে।
পাহাড়ী ঝর্ণা ভয় পেয়ে যায় সামান্য ,
তবে থেমে থাকেনি। আরও দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে।
চলতে চলতে কত গ্রাম , কত শহর পেরিয়ে এলো।
তবে এখনও পৌঁছাতে পারেনি
সমতলের সমুদ্রে কাছে!
হতাশা গ্রাস করেছে তাকে, এমন সময়
একটি পাখি আলাপ করতে এলো....
- ' এই নদী তুমি কোত্থেকে এলে? '
- ' আমি পাহাড়ী ঝর্ণা, আমি নদী নই...
-  ' আমি জানি, সব....জানি! তুমি সমতলের
সমুদ্র কাছে যেতে চাও? '
- ' হ্যাঁ ,
আমি আমার প্রেমের কাছে পৌঁছাতে চাই; তবে
আমি সমতলে এসে পথ পাচ্ছি না!
তুমি আমায় বলে  দিতে পারো? '
- ' হ্যাঁ পারি, ওই দূরে দেখো, যেখানে ডুবে যাচ্ছে সূর্য
সেই দিকে এগিয়ে যাও। তোমার সমুদ্র ওখানেই! '
পাখি আকাশের বুকে মিলিয়ে গেলো;
পাহাড়ী ঝর্ণা নিজ বেগে
এগোতে শুরু করে। অবশেষ সে
দেখতে পায় তার স্বপ্নে দেখা সমতলের সমুদ্রকে!
- ' হে প্রিয় , তোমার কাছে পৌঁছাতে
হলে আর কত নিচে নামতে হবে!
নামতে নামতে তলিয়ে যাচ্ছি... '
- ' নাহ , প্রিয়া , আর নয়, আমি জানতাম তুমি....'
পাহাড়ী ঝর্ণা আরও এগিয়ে যেতে লাগলো,
সমুদ্র তাকে আলিঙ্গন করতে শুরু করলো..
আসতে আসতে মিশে গেলো পাহাড়ী ঝর্ণা
তার প্রিয় সমতলের সমুদ্রের সাথে!
সমুদ্রের কাছে ভাসিয়ে দিতে লাগলো,
নিজের ঝর্ণা থেকে নদীতে রূপান্তরের গল্পগুলি....
এখন রাত; টিমটিম করে জ্বলছে আকাশে
তারাগুলি , তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে...!



✒️কলমে - অভিলাষ