আমাকে সেই বিগত যৌবনের আনন্দোচ্ছল দিনগুলি ফিরিয়ে দাও,
যখন আমি মনের আনন্দে গান গাইতাম
আর স্বতোৎসারিত ঝর্ণাধারার মতো অসংখ্য সুললিত সাবলীল ছন্দের স্রোত
অবাধে অপ্রতিহত বেগে বেরিয়ে আসতো আমার মন থেকে।
সেদিন এক শুচিশুভ্র কুয়াশার মোহপ্রসারী অবগুণ্ঠন সতত আচ্ছন্ন
করে রাখতো আমার সামনের জগতটাকে, আমার সকল ভাবনাকে।
সেদিন পথে-প্রান্তরে, বনে-জঙ্গলে যেদিকে তাকাতাম
সেদিকেই দেখতাম অজস্র অচিরোদগত কুসুমকোরক অস্ফুট লাবণ্যে টলমল করছে,
অমিত পরিমাণে এক স্বর্গীয় সুবাস ছড়াচ্ছে চারিদিকে।
এক তরল বিস্ময়ে ভরে যেতো আমার মন।
ফিরিয়ে দাও আমার সেই দিনগুলো, আমার ফেলে আসা যৌবন।
যৌবনে মানুষের এমনই হয়,
দুচোখ ভরা স্বপ্ন, মুখে বিস্ময়।
কিছু না পেয়েও অনেক কিছু পেয়ে যেতাম আমি।
ভ্রান্ত অথচ এক মধুর আনন্দে সত্যানুসন্ধানের আবেগ
ক্ষণে ক্ষণে শিহরণ জাগাতো আমার মনে,
এক দূর্বার উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে যেতো আমার প্রাণে।
আমাকে সেই অতীতের অবাধ আনন্দাবেগ ফিরিয়ে দাও
যার যাদু স্পর্শে মধুর হয়ে উঠতো আমার জীবনের সমস্ত
বেদনা, ঘৃণা, ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
আমার সেই হারিয়ে যাওয়া যৌবন ফিরিয়ে দাও।
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুরা যখন এগিয়ে আসে তখন যৌবনের প্রয়োজন,
যখন সুন্দরী যুবতী এক মধুর কামনার আবেগে
ঢলে পড়ছে আমার উদাম বুকে,
আদরে চুম্বনে বিব্রত করে তুলছে আমায়
তখন আমার নিথর দেহ শুধু যৌবনই চায়।
যখন একের পর এক নৃত্যোচ্ছল বিনিদ্র যামিনী
যাপন করতে হয় শ্বাসরুদ্ধ হৃদয়ে
তখন যৌবন আমার একান্ত প্রয়োজন।
যখন সৃষ্টিশক্তিকে সম্বল করে এগিয়ে যাবার ক্ষণ,
তখন বুকের ভিতর সাহস যোগাতে যৌবনই প্রয়োজন।
যখন দূরস্থিত লক্ষ্যস্থলবর্তী কষ্টার্জিত এক জয়মাল্য
এক নীরব উজ্জ্বলতায় প্রতীক্ষা করছে আমার জন্য
তখন আমার সেই যৌবনকেই খুব বেশি প্রয়োজন।
যখন সম্মুখে দেখি অন্যয়ের অমানবিক উদযাপন
তখন প্রতিবাদী হুংকার ছাড়তে যৌবনের প্রয়োজন।
তোমার সময়ে বাঁধা সব নিয়ম আজ ভেঙ্গে ফেলে দাও,
আমার হারিয়ে যাওয়া রঙিন যৌবন আমায় ফিরিয়ে দাও।