বাংলার বুকে জন্ম আমার, বাংলা আমার প্রাণের ভাষা,  
বাংলা জুড়ে স্বপ্ন আমার, আশা আর অগাধ ভালোবাসা।  
বাংলার বুকে ঘুরিফিরি, বাংলাতে গাই মন মাতানো গান,
এ বাংলার প্রকৃতি জুড়ে খুঁজে পাই আমার ধ্যান ও জ্ঞান।
শয়ন আমার বাংলার বুকে, জাগি পাখির কোলাহলে,  
হাওয়ার মাঝে ধাই আমি, ভাসি মেঘের শুভ্র আঁচলে।  
আমি মেঘের ভেলায় বিচরণ করি মুক্ত নীলাচলে,  
আকাশের কানে কানে বলি লুকিয়ে রাখা সব কথা,  
বাতাসের সাথে বিনিময় করি সুখ, দুঃখ ও ব্যথা।
চাঁদের সাথে করি অমোঘ অসীম সুখনিদ্রাবাস,
তারার সাথে করি জ্বলজ্বল, মহাশূন্যে যাপন অবকাশ।
সাজি ফের এক জলপ্রাণী আমি, মিশে গেছি সব জলে,  
মুক্তোর দেশ খুঁজে পাই যেনো নীল সাগরের তলে।  
সূর্যের হাতে হাত রেখে আমি পথ চলি ফের,
দিবালোকের প্রশস্ত রাজপথে তুলি জোরে হাঁক,  
আড়ালে লুকিয়ে খুঁজি মায়াময়ীর কোমরের বাঁক।  
নগপতির ঢালে ঢালে হেঁটে আজও অক্লান্ত আমি,
ধরণীর বুকে কোন জয়রথে ছুটি, তবু না থামি।  
উপত্যাকার কোল ঘেঁষে উদাস হেঁটে হেঁটে,  
আমার সময় অসময় আজ দিব্যি যাচ্ছে কেটে।  
কামনার বিষ মিশিয়ে হিমালয়ের নাকে-মুখে
কাজল দেই কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার প্রাণঘাতী দুচোখে।
ঘন সবুজের বাঁকে বাঁকে চলি আমি নজগজে
তেপান্তরে ঘুরে ঘুরে সব বেলা করি বিস্তর পার,
তটিনীর কোলে গড়ি মহাদেশ, আধিরাজ্য আমার।
আমি ঘুমাই অমৃতকণা অসুরার উন্নত বুকে,
দিবসে দিগন্তে উঠে রবি, আমি হাসি সুখে,
ফুটফুটে দিনের আলোয় ফের জেগে উঠি,
বিহঙ্গের সাথে উড়ি, বাতাসে খাই লুটোপুটি।
কাননে ভ্রমর হয়ে নেয়া কোন ফুলে মৌঘ্রাণ,
পত্তরে পল্লবে মিশিয়েছি আমি আপন প্রাণ।
ধুমকেতুর সেতু গড়ে যাই মঙ্গলে এক লাফে,
ফিরে এসে প্রাসাদ গড়ি নক্ষত্র-নক্ষত্র মাপে।
গ্রহ গ্রহান্তরে বাঁধি বাসা, চাঁদের সাথে ঘর,
আমি আগ্নেয়গিরিতে করি সুধা পান, তারপর
টর্নেডোর ঘূর্ণিপাকে ঘুরে গাই গান দিনে রাতে,
ভুমিকম্পে নাচি অসম সঙ্গীতে, ভাবি তার সাথে
কোকিল এসে বুঝি গেয়ে গেলো বসন্তের গান,
অবারিত ফসলের মাঠে করি নবান্নের কলতান।
সরষের হলুদে মিশে যায় সারা আকাশের নীল,
মধ্যিখানে বৃত্তে বৃত্তে উড়ে একদল বড় শঙ্খচিল।
আমি বিটপীর নিচে বাজাই রাখালের সুরেলা বাঁশি,
প্রান্তরে চড়ে পশুর দল, পুকুর জলে পদ্ম যায় ভাসি,
দূরে দেখি দুচোখ মেলে, হারিয়ে যাই অজানার দেশে,
পাই খুঁজে অন্য কোথাও, আমায় ধরেছে নব্য আবেশে
এক মায়া জালে, কাছে এসে জলপরী মেলে ডানা দুটি
কানে কানে গেয়ে গেলো গান, দিয়ে গেলো বুঝি ছুটি,
আমি সমুদ্রের বুকে আঁকি আল্পনা জলে নীলে মিশে,
ভাটায় হারাই অথৈ ঢেউয়ে, জোয়ারে পাই ফের দিশে,  
আমি গ্রীষ্মের ফলপাকা রোদ, আমি কালবৈশাখী ঝর,
আমি ঘন কালো মেঘে আনি বৃষ্টি, বিজলী চমকে অনড়,
ঘুচিয়ে দেই গ্লানি যতো, বয়ে আনি মিষ্ট যতো ফলরাশি,
প্রলয়ের শাঁখ আসে বয়ে, সকল হতাশা-জরা যায় ভাসি,  
আমি বরষার দুড়দাড়ে নাচি ময়ূর পঙ্খির তালে তালে,
অঝরে ঝরি বৃষ্টি হয়ে, দমকা হাওয়া হয়ে লাগি চালে,
সোনার কাঁকন বাজিয়ে গাই গান শরতে শিউলি বনে,
উদাস বায়ু বহে যাই তরুতলে, চেয়ে থাকি নীল গগনে।
হেমন্তে হলুদ রৌদ্র হয়ে দোলা দেই পাকা ফসলের গায়ে,
দেই হাসি কৃষকের মুখে, আলতা রাঙাই কৃষাণীর পায়ে।
জ্বালিয়ে দেই হিমহিম রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
রাখি তারকার দল হেমন্তিকার গোপন আঁচলখানি ঘিরে।
শীতের সকালে ভিজি শিশিরের জলে, রৌদ্র এসে পড়ে
দিগন্তের কোলে, দুহাতে ধরি আলো অনেক আপন করে,
বাংলার প্রকৃতি মাঝে আমি খুঁজি আমার স্বপ্নের দেশখানি,
বাংলাই অস্তিত্ব আমার, বাংলা আমার প্রেয়সী রূপসী মহারাণী।