দু'চোখের চাহুনিতে প্রসারিত করো অন্তর
এ যে এক উন্মুক্ত প্রান্তর
যে সবুজ প্রান্তরের বিশালতায়
মন্থর সমীরণ খেলা করে যায়
যেখানে কুয়াশাচ্ছন্ন গোধূলীর সুবাসিত ছায়া
ঘন থেকে ঘনতর হয়ে উঠে বাড়িয়েছে মায়া
যেখানে সোনালী আলোর দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়
সেখানে নীরব শান্তি যেনো শান্তিই বাড়ায়
চুপিসারে কথা বলে মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে,
যেখানে শিশুসুলভ চপল খেলায়
সকলেরই মন ওঠে মেতে।
রাত্রী হয়ে উঠছে ঘন
আলো আর আধারে ঢাকা পড়ছে বনও।
একের পর এক তারা ফুটে উঠছে মেঘহীন মুক্ত আকাশে
তটিনীর শান্ত জলে প্রতিফলিত হচ্ছে
সেই সব তারার চকিত আলো।
রাজকীয় ঐশ্বর্যে বিরাজমান পূর্ণয়িত চাঁদ
অতন্দ্র দৃষ্টিতে অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে
চারদিকের সর্বব্যাপী শান্তি আর নীরবতা।
নিজেকে কালের সীমাবন্ধন থেকে মুক্ত করো
দূরে ছুঁড়ে ফেলো সব বেদনার ভার,
এক পূর্ণ অখন্ড সত্ত্বায় হোক বিরাজ তোমার।
যে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলে
তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক তোমার হৃদয়রাজ্যে।
আলোকোজ্জ্বল নতুন প্রভাতের জন্য প্রতিক্ষা করো,
ঐ দেখো, আকাশে নবজাত দিনের আবির্ভাব ঘোষিত হচ্ছে প্রচন্ডভাবে,
সিঁদুরে সূর্যের উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে,
স্বর্গমর্ত্যব্যাপী সে আলোর উজ্জ্বলতায় চোখ ধাঁধিয়ে উঠছে।
চেয়ে দেখো, ভোরের কুহেলীঘেরা আরামসয্যা থেকে
পাহাড়গুলো গরব করে জেগে উঠছে,
সবুজ সবুজে ভরে গেছে পাহাড়ের ঢাল,
মাঠে মাঠে প্রভাতী আলোর ঢেউ যেনো হচ্ছে বেসামাল।
ঐ শোনো, পাহাড়ে অরণ্যে প্রতিটি কুসুমকোরকের গভীরে
অনুপ্রবিষ্ট সে প্রভাতী আলোর অশ্রুত ধ্বনি, প্রতিধ্বনি।
অসংখ্য বিহঙ্গের কণ্ঠ গুঞ্জরিত হচ্ছে কুঞ্জবনে।
প্রত্যূষের আলোর মুখ তুলে তাকাচ্ছে
জাগরিত বৃক্ষের পত্রপুষ্পশোভিত শাখাপ্রশাখাগুলো।
পৃথিবীর বুকে লাগায় দোলা সোনালী যে আলোক
সে আলোয় যেনো পুলকিত হচ্ছে দু’চোখ।
এভাবে যদি আমাদের সব ইচ্ছে পূরণ হয়,
যদি আমাদের সর্বোচ্চ আশার আলো
পূর্ণতার প্রান্তরভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়
তাহলেই সার্থক হই আমরা।
যদি সে আশার আলোর পরিবর্তে নেমে আসে
জ্বলন্ত অগ্নিপ্রবাহ, আসে ঘৃণা অথবা প্রেমের আগুণ,
আনন্দ-বেদনার দ্বৈত উত্তাপে পীড়িত হই আমরা।
তখন অনিবারণীয় কামনার আবেগে সংসারের দিকে ছুটে চলে যাই,
ছদ্ম যৌবনের মিথ্যে রঙ-রূপের অলংকারে নিজেকে সাজাই।
যদি অন্তরের অসীম অসংযত কামনাদের করতে পারো জয়
তাহলেই অদূরে দেখতে পাবে এক উজ্জ্বল গৌরবের রাজ্য
তোমার হাতেই তা ধরা দেবে নিশ্চয়।
যে মোহনিদ্রার হালকা আবরণে আবৃত তোমার জীবন
ছিন্নভিন্ন করে ফেলো সে আবরণ।
অবিশ্বাসী অপরিণামদর্শী সাধারণ মানুষ
শুধু কামনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে জানে,
কামনা পূরণের পথ জানে না।
যে দেখে সবকিছু, ভাবনা চিন্তা করে কাজ করে যায়
আকাঙ্ক্ষিত বস্তু, বিজয়মাল্য কেবল তাঁর গলেই শোভা পায়।