সূর্যের আগে আমাকে জাগতে হয়
তাও তো কোনো পাখির ডাকে নয়,  
কানের পাশে কলিং বেল বাজে খুব কর্কশ
সম্ভিত ফিরে আসতে সময় লাগে, তখনও অলস
দুটি চোখ তন্দ্রাচ্ছন্ন, বুঝি দেরী হয়ে যাচ্ছে,
নাকি তখনও বলবো, মা, আমার ঘুমই পাচ্ছে?
কিভাবে সূর্য উঠে দিগন্ত ভরিয়ে দেয় আলো,
চারদেয়ালের পৃথিবীতে আমি জানিনা তা ভালো।
কী এক অবারিত ধরায় তোমাদের বসবাস!
তোমাদের মাথার উপরে উন্মুক্ত নীলাকাশ,
আমার উপরে শুধু কংক্রিটের বিশালকায় ছাঁদ,
তোমাদের আকাশ দেখা আমার থেকে যায় বাদ।  
তোমাদের ছুঁয়ে যাওয়া প্রত্যুষের সতেজ হাওয়া
সে যেনো আর কখনও আমার হয় না যে পাওয়া।  
কম্প্রেসরের হাওয়ায় শীতল হই বরফের মতো।
ভোরের সে ফুলেল জগত জানিনা সুন্দর কতো।
শহুরে জীবন আমার স্থাপত্যে গড়া এক বন্দীশালা,  
আমাকে পাহারা দেয় আভিজাত্যের আধুনিক সব তালা।
তোমাদের দুরন্তপনা সে বুঝি খোলা কোনো মাঠে?
আমার সাথে সন্ধি করেছে ইটপাথর আর কাঠে।
তোমরা সবাই বাঁধাহীন ছুটো ক্ষেত, নদী, বনবাদাড়ে।
আমাকে জাপটে ধরে রাখে আবছা আলোর আঁধারে।
রাখালের দলে বুঝি মিশে যাও? গাও রাখালিয়া গান?
যান্ত্রিক বিনোদনে হয় আমার সকল দিবসের অবসান।
শিয়রে বসে বসে তোমাকে শোনায় কেউ রুপকথার গল্প?
আমি বসে বইয়ের অক্ষর গিলি, আমার সময় যে খুব অল্প!  
চঞ্চল দুটি পায়ে তোমরা সারা পৃথিবীটাই বেড়াও ঘুরে?
হিমায়িত যানে বিস্তরণ আমার শুধু এই শহরটাই জুড়ে।  
সবুজ কেমন হয়, কেমনে ছেয়ে যায় সবুজ বন-বনানীর বুক,  
সে তো জানি না আমি, দেখিনি তো কভু ওই সবুজের মুখ।
রাতের আকাশে চাঁদের সাথে কেমনে থাকে তারা,
আমি জানিনা তাও, জানিনা কিছুই এই শহর ছাড়া।
আমার শহুরে আভিজাত্য, জৌলুশ, বিলাসিতা তোমরা কি কেউ নেবে?
বিনিময়ে তোমাদের আকাশ থেকে এক টুকরো আকাশ আমাকে দেবে?