পশ্চিম দিকে দিয়েছি মাথা
পূর্ব দিকে পা,
দক্ষিনের জানালা খোলা
বাতাস এসে জুড়িয়ে দিচ্ছে গা।


পূর্ব দিকের জানালা দিয়ে
দেখা যাচ্ছে গাছপালা,
কচি কচি পাতা বাতাসে নড়ছে
আর, আনমনে ভাবছি ছেলেবেলার কথা।


সেই কতদিন আগে
দলবেঁধে একসাথে
বড়দের কথায় কান না দিয়ে
ছোটাছুটি করেছি পথে পথে।


জৌষ্ঠের কাঠ ফাঁটা রোদে
ঝাঁপিয়ে পড়েছি পুকুড়ের জলে,
সারা গায়ে কাদা মেখে
আনন্দ করেছি সবাই মিলে।


জৌষ্ঠের ঝড় মাথায় নিয়ে
আম কুঁড়িয়েছি দলবেঁধে,
ঘড়ে তো আম অনেক আছে
সাথীদের সাথে কুঁড়াতে, তবু কি মন বাঁধে?


জমিতে ধান কাটা হয়ে গেলে
বন্ধুরা সব দলবেঁধে ধান কুঁড়িয়েছি,
সেখানেই আগুন জেলে
ধান থেকে খৈ ফুটিয়েছি।


আষাঢ় মাসে বৃষ্টি এলে
সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজেছি,
আবার বন্যার পানিতে
ঝুপঝাপ সাঁতার কেটেছি।


সেই সব দিন
পার করেছি কবে,
সেগুলো ভাবি এখন
বিছানায় শুয়ে শুয়ে।


টাকা পয়সা যার যা লাগবে
মিটিয়ে নিয়েছি বড়দের কাছ থেকে,
মেলায় গিয়ে খেলনা কিনে দিতে হবে
আর মিষ্টি খাওয়াতে হবে পেটপুরে।


শর্তানুসারে বন্ধুরা মিলে
একসাথে গিয়েছি মেলাতে,
সবাই মিষ্টি খেয়েছি পেটপুরে
আর খেলনা কিনে এসেছি বাড়িতে।


অনেক খুঁনসুটি করে, মেলার খেলনা দিয়ে
রাজি হয়েছি বর-বৌ খেলাতে,
খেলা শেষ হওয়ার একটু আগে
ধুম ধাম করে বৌ-কে এনেছি শ্বশুর বাড়িতে।


বউ ধূলার বাসর ঘরে এসে
দুই হাত রেখেছে আমার কাঁধে,
সবাই তাই দেখে
অট্টহাসিতে ফেঁটে পরেছে একসাথে।


ওখানেই হয়েছে খেলার শেষ
ভেঙ্গে ফেলেছি তখন খেলাঘর,
এই দীর্ঘ জীবনও যখন হবে শেষ
আবারও ভেঙ্গে পড়বে অতি যত্নে গড়া সংসার খেলাঘর।


কোনদিন কাঁনামাছি খেলেছি
দলের একজনের চোখ বেঁধে,
আবার কোন দিন বৌ-ছি খেলেছি
বড় একটা চার কোনা দাগ টেনে।


আমরা গোল্লাছুটও খেলেছি
বন্ধুরা দুই দলে ভাগ হয়ে,
যখন আমরা পেরেছি, আনন্দে হাততালি দিয়েছি
যখন হেরেছি, গোমড়া মুখে কিছুক্ষন থেকেছি বসে।


আবার কোনদিন নদীতে নেমে
জাল দিয়ে মাছ ধরেছি,
তারপর সব বন্ধুদের বাড়ি থেকে
চাল, তেল, পিয়াজ, লবন, মসলা তুলেছি।


আর পাশের জমি থেকে
বেগুন, আলু, মরিচ চুরি করে এনেছি।
তারপর সবকিছু দিয়ে
চড়ুই-ভাতি খেলেছি।


খোলা জমিতে খোলা বাতাসে
আগুনকে ধরে রাখা যেত না চুলায়,
তাই ধোঁয়া লাগতো যখন চোখে-মুখে
চোখ থেকে জল গড়াতো অবিরাম ধারায়।


কি যে অপরূপ লাগতো তখন আমার ঐ বোন’টির মুখ খানা
এখন আর সেই রূপ নেই বোন’টির মুখে
সংসারের যাঁতাকলে তাকে সইতে হয় শুধু যাতনা
আর বেদনার জল ঝরে ওর চোখ থেকে।


আজ সবাই বড় হয়েছে
কেউ রাখে না কারো খবর,
কে কেমন আছে?
সময় নেই কারো খবর রাখার।


সবাই নিজ নিজ স্বার্থ
পালন করে চলছে,
দেখার সময় নেই কারো স্বার্থ
ব্যাবহারেই তা প্রমান করে দিচ্ছে।


ছোট বেলার খেলার সাথী
যে বৌ সেঁজেছে লাজুক চোখে,
আজ বড় হয়ে, হয়েছে চঞ্চলা হরিনী
এখন দুষ্টমি খেলা করে দুই চোখে।


মাঝে মাঝে যদি দেখা হয়ে যায়
মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায়,
আমি যেন পরিচিত কেউ নই
তাই কুশলাদি জানারও নেই সময়।


তবে, এখন আর আমি কিছু মনে করি না
কারন, এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম,
কখনো কেউ কাছে আসবে আবার দূরে চলে যাবে
এটা না হলে যে, প্রকৃতির নিয়ম হবে অনিয়ম।


আমার জন্য কেন প্রকৃতি এই নিয়ম ভাংবে
তারচেয়ে চলুক না জন্ম জন্মান্তরের রীতি,
আমার যেদিন দম ফুরাবে
সেদিনও যেন থাকে প্রকৃতির এই রীতি।