ভাঙা আয়নার টুকরোতে—
শৈশবের মাটির উঠোন ফেটে গেছে,
পায়ের ছাপে জমেছে রক্ত।
ঝুলে থাকা কাঁঠাল গাছের ছায়ায়
আর শোনা যায় না হৃদয় হরনী সুর।
সেই আকাশ হারিয়েছে নীল,
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে,
যেন দগ্ধ স্মৃতির বালুচর।

আয়নার ভাঁজে লুকানো শুধু
হারানো স্বপ্নের কঙ্কাল,
যে স্বপ্নগুলো ছিল
কাগজের নৌকার মত;
টুকরো টুকরো কাঁচের ভেতরে
খুঁজি ফিরি সেই দুপুর,
যেখানে খেজুর গাছের তলায়
বাতাসের সুরে ভেসে যেত আমার শৈশব।

কিন্তু আয়নার আরেক প্রান্তে দেখি—
এক ক্ষুধার্ত শিশুর ক্লান্ত চোখ,
যেখানে মেঘের ছায়া ফুরিয়েছে।
তার মুখে মাটি লেগে আছে,
যেন পৃথিবীর বুক থেকে উপড়ে ফেলা কোনো শিকড়।
আরেক পাশে দেখি
বৃদ্ধ পিতার কাঁপতে থাকা হাত,
যা একসময় শক্ত ছিল গৃহ নির্মাণে।
এখন সে হাত কেবল খুঁজে ফেরে
একটুখানি দয়া।

তবু টুকরো আয়না ফিসফিস করে বলে,
“তুমি কি জানো?
মানুষ এখনো জোড়া লাগাতে পারে
এই ভাঙা প্রতিচ্ছবি।
তোমার চোখের জল যদি বৃষ্টি হয়,
তবে পৃথিবী আবার ফসল ফলাবে।
তোমার হৃদয় যদি আশার আলো জ্বালে,
তবে আকাশে রংধনু জাগবে।”

ভাঙা আয়নায় পৃথিবীর মুখ—
যা আজ ভাঙা আয়নার চূর্ণে বিবর্ণ,
তবু তার গহীনে
আছে নতুন জন্মের অপেক্ষা,
যেন ফাটা মাটির বুকে বৃষ্টি পড়ে
নতুন জীবন ছুঁয়ে যায়।


রচনাকাল:-
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫