আমরা দেখি, কিন্তু দেখি কি ঠিক?
চোখে যা পড়ে, তাতেই কি নরম হয় বিশ্বাসের দিক।
পোশাকের ঝলক, মুখের হাসি,
তাতেই মাপি মানুষ, বাস্তবতা ভুলে স্বপ্নে ভাসি ।
বাইরের রঙে মুগ্ধ হয়ে যাই,
ভেতরের অন্ধকারে আলো জ্বালাই না তাই।
চকচকে মোড়কে গলে মন,
অভিনয়ের মাঝে হারিয়ে ফেলি জীবন।
নিজেরা বানাই নিয়মের ঘর,
তারপরই ভাঙি, যখন লাগে অন্তরের ডর।
বলতে শিখি, “বইয়ের কাভার নয়, ভেতরে আসল পরিচয়”
তবু ভুলে যাই বাইরের দর্শনদারীতে বিচার হয় ক্ষয় ।
মানুষ বড় অদ্ভুত, তাই না বলো?
আলোতে দাঁড়িয়ে বলি, নিজের ছায়া খুঁজি চলো।
নিজেকেই জজ, আবার নিজেই আসামি,
জীবনের এই খেলার নামই হয়তো “ভাঁড়ামি”।
আমরা দেখি, কিন্তু দেখি না সত্য,
চোখে যা পড়ে, তাতেই গড়ে ফেলি সিদ্ধান্ত।
চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ মুমূর্ষ,
আর আমরা খুঁজি তার ছায়া, তার আবরণ, তার বাহ্যিক স্পর্শ।
পোশাকের ভাঁজে খুঁজি তার পরিচয়,
ভুলে যাই, কাপড়ে আঁকা রঙ হৃদয়ের নয় ।
শব্দের ছন্দে মুগ্ধ হই,
তবু তার ভিতরের মৌনতা শুনি না, অবুঝ রই ।
আমরা বিচার করি চেহারার রেখা দেখে,
ভেতরের যুদ্ধ গুলো পড়েনা চোখের বাঁকে ।
একটুখানি আলোর ঝলকে বলি— “এ তো সফল,”
তবু সে হয়তো প্রতিদিনই জ্বলে-নিভে, হয়ে নিষ্ফল।
আমরা নিজেই বানাই নিয়মের স্তম্ভ,
তারপর সময়ের সাথে সাথে সেই স্তম্ভে ফাটল তুলি গোপনে।
বলার সময় বলি— “মানুষ বড়ই মূল্যবান,”
কিন্তু দামের ট্যাগে ঝুলিয়ে দিয়ে সেই মানুষটারই করি অবমূল্যায়ন।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলি, “আমি সত্যবাদী তো!,”
কিন্তু আয়নাও জানে, চোখের গভীরে কত মিথ্যে সঞ্চিত।
নিজের ছায়াকে প্রশ্ন করি না কোনোদিন,
সে তো চুপচাপই থাকে, জানে সত্য বললে কষ্ট হয় খুব তবু বাড়ে ঋণ।
মানুষ বড় অদ্ভুত, এই খেলায় অভ্যস্ত,
মাপজোখ চলে চোখের আলোয়, হৃদয়ের আলোয় হয় হতাশাগ্রস্থ।
আর সেখানেই, আমরা প্রতিদিন হেরে যাই,
কারণ আমরা নিজেদেরও চিনি না, আর চেনাতে ভয় পাই।
তবে যদি একদিন, খুলে ফেলি মুখোশ সব,
তবে কি চিনবো মানুষটাকে? — যার নেই রঙ, নেই ছদ্মবেশের আবরণ, যে শুধু নীরব।
মুখোশ পরে হেঁটে চলি, ভিড়ে মিশে যাই,
আসল চেহারাটা কোথায়, আমরাই তো খুঁজে না পাই ।
ছায়া গড়ি দিনের শেষে, সমাজ যেমন চায়,
আমার ভেতর আমি কাঁদি, প্রকাশ পায় চুপ করে থাকায়।
চাহনিতে ঢেকে যায় প্রাণ, হাসি যেন গল্প সাজায়,
ভেতরের আমি ডাক পাঠায়, “আমায় কি কেও চিনতে চায়?
ভুলে যাওয়া সেই মুখখানি আয়নায় আজ নাই,
আসল ‘আমি’ আড়ালে বসে, খুঁজে তারই ঠাঁই।
তবু যদি কখনো, কোনো সন্ধ্যায়,
নিজের ভেতরের দরজাটা খোলে ধীরে ধীরে,
আর আয়না চুপচাপ বলে ওঠে—
“আজ সত্যি তুমি দেখেছো,অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই...”