(প্রেরণা: সূরা আর-রহমান)

সূর্য ওঠে নরম আলোয়, কে দেয় সে দীপ্তি জানো?
চাঁদ হাসে রাতের আকাশে, এ আলো কার দানে মানো?
ফুল ফোটে গন্ধ বিলায়, বাতাসে চলে গান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

জল দিয়েছে তৃষ্ণা মেটাতে, বৃষ্টি নামে ধীরে,
ধরণী ধরেছে আমাদের সবাইকে তার বুকের নীরে।
সাগরের ঢেউ ছুটে আসে, গহীনে রহে জান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

নিয়ামতের রেখা ধরে, জীবন চলে বহুদূর,
দুঃখে সুখে জড়িয়ে থাকে, দয়াময় প্রভুর নূর।
হিসেব ক’করো, খোঁজ নাও, আসুক কৃতজ্ঞতার টান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

শিশুর হাসি, মায়ের দোয়া, মাটির ঘ্রাণে প্রাণ,
তুমি কি পারো অস্বীকারে সেই রহমতের দান?
জীবন যত উপহার সব, আসে তার দয়ায়,
তবুও কেন হৃদয় তোমার না কাঁদে তাঁর মায়ায়?

তাহলে বলো, হে মানুষ ও জিন,
তোমরা কার নিয়ামত করবে অস্বীকার দিনদিন?
আকাশ, বাতাস, হৃদয় জুড়ে বাজে এক আহ্বান—
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

চোখ যে দেখে আলো-ছায়া, কান শোনে পাখির গান,
হারিয়ে গেলে মন খোঁজে ফেরে, কারা দেয়া সে প্রাণ?
রাত পোহায়, দিন আসে ফিরে, নিয়মে চলে জ্ঞান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

গাছ দেয় ছায়া, ফল দেয় তৃপ্তি, নদী চলে বয়ে,
সব কিছুর মাঝে রহমতের ছোঁয়া, ভালোবাসা লয়ে।
ভয়াল ঝড়ে রক্ষা করে, বিপদে দেয় অবলম্বন,
তবুও কেন শুকরিয়া হয় না তোমার, হয় অহংকার নির্গমন ?

সাগর-গর্ভে লুকানো মুক্তা, পাহাড়ে লুকানো ধন,
মাটির নিচে ফোটে ফসল, কে করে সৃষ্টি বন?
সৃষ্টির মাঝে ছড়িয়ে আছে তাঁর কুদরতের বিবরণ,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

শ্বাস-প্রশ্বাস, নীরব সুখে, জীবন চলে যায়,
চিন্তা করো একবার, এসব কার দয়ায়?
তুমি যদি চাও করুণা তাঁর, চাও অন্তর্ধান,
তবে কেন তাঁর নেয়ামত অস্বীকারে তুমি মানব সন্তান?

তোমার চোখে জল আসে যখন, কার কাছে তবে ফিরে যাও?
কার দরজায় প্রার্থনায় ভাসো, কার দয়ায় বাঁচতে, চাও?
সেই রব যিনি সবার রব, দয়াময়, করুণাময়, মহান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

প্রেমের মায়া, বন্ধুর ভালোবাসা, কে জাগায় হৃদয়ে?
মায়ের কোলে শান্তির ঘুম, কে দেয় সে আশ্রয়ে?
ভুল করলে ক্ষমা করেন, ফিরে ডাকেন বারে বারে,
কোন দয়ালু আছে এমন, ডাকো তাঁরই দরবারে।

তুমি পথ হারালে, তিনি দেন পথের আলো,
তুমি দুঃখে ডুবলে, কে শোনেন তোমার কাঁদা, বলো?
তুমি নিঃস্ব হলে, তিনি পূর্ণ করেন শূন্য প্রাণ,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

তোমার চোখের অশ্রু পড়ার আগেই জানেন সব,
তিনি তোমার সৃষ্টি কর্তা তিনিই তোমার রব।
তবুও তুমি ভুলে যাও, তাঁর কীর্তি আর দান,
কোন নিয়ামতে করোনা তুমি শুকরিয়া মেরে জান?

নক্ষত্রভরা রাতের আকাশ, নদীর বুকে চাঁদের আলো,
জোনাকির মেলা সন্ধ্যায়, শিশিরে ভেজা ভোর ভালো।
প্রতি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি ক্ষণে, রয়েছে তাঁর দান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

আকাশটাকে ছায়ার চাদর, কে ঢাকে প্রতিরাতে?
সূর্য ওঠে ঠিক সময়মতো, সে তো তাঁরই আয়াতে।
সবকিছুরই এক নিয়মানুবর্তী নিয়মের ভিতর প্রাণ,
তবুও তুমি ভুলে যাও, কার হাতে নিয়ন্ত্রণ সে যে মহান?

তুমি হাসো, তুমি ভালোবাসো—কে রাখে তোমায় চেনো?
অজানা কত বিপদ থেকে, তিনি রাখেন তোমায় বাঁচানো।
জানো কি তুমি কতবার মৃত্যু ছুঁয়ে যায় অগোচরে,
প্রভু তোমায় আগলে রাখে, যত্নে আপন করে ।

তোমার মনে যখন অন্ধকার, হৃদয় যখন রেগে,
তোমার পাশে কে থাকে, দেখেছো কি জেগে?
মানুষ সবাই ছেড়ে দিলে, একমাত্র রব থাকে জান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

তিনিই দেন হিদায়াত, যখন তুমি পথ ভুলে যাও,
তিনিই দেন আলো, যখন জীবন দুঃখে কাঁদাও।
তুমি বলো না, বুঝো না, তবুও তিনি শুনে যান,
তিনিই তো প্রভু যিনি মাফ করেন, দয়া করেন নিরুপায় প্রাণ।

যখন তুমি ডুবে গেলে গুনাহর ঘন আঁধারে,
তিনিই তো হাত বাড়িয়ে নেন, ডাকেন ফিরে নিজের দ্বারে।
তুমি যখন ভুলে যাও তাঁকে, তিনি ভোলেন না তো তোমাকে,
সে কোন প্রেম, সে কোন মায়া, জানো তার নিঃশেষ ব্যাখ্যান?

তুমি চাও এক ফোঁটা পানি, তিনি দেন ধারা-ধারা,
তুমি চাও একটু সুখ, তিনি দেন শান্তি সাগরভরা।
তুমি এক পা বাড়ালে তাঁর দিকে, তিনি আসেন দশ কদম,
এ এমন রব, যিনি তোমায় ভুলেনা , তুমি কেন ভুলো আদম?

দেখো না তুমি শিশুর মুখে, কত শান্তির ছোঁয়া,
পাখির ডানায় ভোরের গান, কত মিষ্টি দোয়া।
জীবন জুড়ে ছড়ানো রেখা, অদৃশ্য এক কল্যাণ,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "

তুমি যখন একা থাকো, নির্জন কোন রাতে,
তোমার দুঃখে কাঁদো তুমি সে কথা হয় কার সাথেতে?
প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি হৃদকম্পনে, তাঁরই নাম গান,
সেই রবের দান অস্বীকার করো, কীভাবে বলো, হে প্রাণ?

তোমার এই জীবনের পরে, যখন থেমে যাবে চলা,
যখন নিঃশ্বাস যাবে থেমে, চোখ ঢেকে যাবে কালা—
তখনও থাকবে না কি আশা, মাফ পাবে সেই রাতে?
যদি রব বলেন, “এসো ফিরে, আমি আছি অপেক্ষাতে।”

কবরের ঘর অন্ধকার, কার দয়ায় জ্বলে আলো?
সেদিন যদি ওজু রাখা যায়, নামাজের হিসেব থাকে ভালো।
তবে হয়ত ফেরেশতা আসবে শান্তির কথা শোনাতে,
“ভয় করো না, তওবা করো, চলো শান্তির পথেতে।”

জান্নাতের সেই বাগানপথে থাকবে না কান্নার ধ্বনি,
থাকবে না কোনো হিংসা, বিষাদ, থাকবে না কেও ঋণী।
গাছের নিচে ছায়া হবে চিরন্তন প্রশান্তি,
নদী বয়ে যাবে দুধ আর মধুতে, থাকবে না কোনো ক্লান্তি।

সেখানে নেই মৃত্যু, নেই কষ্ট, নেই কোনো সীমাবদ্ধতা,
আছে শুধু রবের সান্নিধ্য, চির সুখের বাস্তবতা।

হে আল্লাহ, তুমি দয়ালু, তুমি রহিম আমাদের করো ক্ষমা,
আমরা ভুল করেছি, ভুলে থেকেছি, কতো পাপ রয়েছে জমা।
তোমার নেয়ামতের হিসেব দিতে পারব না কোনো দিন,
তবুও চেয়ে থাকি তোমার দয়ার ছায়াতলে প্রতিদিন।

আমাদের করো জান্নাতবাসী, তুমি চেনো হৃদয় খাঁটি,
তুমি ছাড়া নেই আর কোনো পথ, নেই যে কোনো সাথি।
এই কবিতা হোক আমার কান্না, হোক হৃদয়ের কৃতজ্ঞ গান,
"ফাবিআইয়ি আ-লা ই রাব্বিকুমা তুকাযযিবা-ন "