সময়টা ঠিক মনে নেই
সত্তর একাত্তর কি উনিশ'বাহাত্তর হবে
ঢাকা ছেড়ে চলে আসি কলকাতায়,
চাকরীসূত্রে স্বপরিবারে --
বাবা-মা, ভাই-বোন ও আমি।
স্বল্প ভাড়াতে দু'কামরা ঘরও মেলে
এখানে আসার পর সংসারের সব
দায়-দায়িত্ব আমার হাতে আসে,
বাবা বয়সের ভারে কুঁজো আর
মা সংসারের হেঁসেল ঠেলে বিরক্ত
অগত্যা বিবাহিত জীবনে পদার্পণ ;
বছর না ঘুরতেই সংসারে আসে
আরোও এক নতুন সদস্য --
তাকে ঘিরে সবার সেকি আনন্দ
কিন্তু বছর ঘুরতেই আনন্দের আঁচ যায় নিভে,
তুমি সবাইকে নিয়ে কুলোতে পারলে না
অথবা সবাই তোমাকে নিয়ে।
তোমার চাহিদার অন্ত খুঁজতে আমি
পথ হাঁটতে নয় দৌড়তে লাগলাম –
আলাদা করে একটা আলাদা বাড়ি হল
বাড়ি তো নয়, যেন বাহুল্যতা
ঝকঝকে সাদা রঙের দোতলা বাড়ির
নিচে দুটি শোবার ঘর, একটি বসবার
অপরটি তোমার নৃত্য-শিক্ষার আসর
এছাড়া রয়েছে পায়চারি করার বারান্দা।
উপরে একটি ঘর রূপচর্চার, একটি বিশ্রামের
আরেকটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে
একটি স্টাডি অপরটি ষ্টোররুম
খাবার ঘর, রান্না ঘর, স্নানের ঘর এসবতো আছেই;
আসবাবপত্র কি যে নেই তা বলা-বাহুল্য
একটি সোফা-সেট , একটি সোফা-কাম-বেড
ডাইনিং সেট, ফ্রীজ, কাঁচের আলমারী
উপরে-নীচে এ.সি. মেশিন আর
ঘরের মধ্যে বক্স-খাটের পাশেই সংযুক্ত বাথরুম মানানসই,
চেয়ার-টেবিল এসবতো মামুলি যত্রতত্র।
বাড়ির পিছন দিকে এক ফালি জমি ছিল
সেখানেও তুমি চাহিদার মাপে ঘর বানালে
ভাড়াটে বসালে উপরি আয়ের জন্য,
আবশ্যকভাবে ইচ্ছাপূরনের আনন্দে !


এত বছর পর আমি আয়নার সামনে একা
সবাইকে ছেড়ে আজ আমরা তিনজন
নিশ্চিন্ত, নিরাপদ আশ্রয়ে স্থায়ী নীল জীবনে,
তুমি আছো নিজের মতো শিল্প চর্চায় --
আমি আমার অফিস নিয়েই ব্যস্ত
ছেলে বড়ো হচ্ছে বোডিং স্কুলে
শুধু সময় নেই মুখোমুখি বসবার
সময় নেই সময়ের মূল্য চোকাবার !