বহুদিন পর আজই তোমার পত্র পেলাম অপরাহ্নের শেষ আলো অস্ত যাওয়ার মতো। তুমি লিখেছো, সুদূরে থাকলেও সব সময় তোমারই কথা মনে পড়ে। অফিসের কাজের ফাঁকে, কফি শপে একঘেয়েমি কফি পানের সময় কিংবা অফিস ফেরত রুটি-তরকা কিনে বাড়ি ফেরার সময়ও কেবলই তোমার মুখটা মনে পড়ে। তুমি লিখেছো, আজকাল আর ছায়াছবি দেখতে ভালো লাগে না একা একা। ভালো লাগে না কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে হাততালি কুড়াতে কিংবা নৈশভোজে গিয়ে মেকি হাসি হাসতে। বিনিদ্র রাত একা একাই জেগে কাটাই তোমার কথা ভেবে। হয়তোবা তুমিও আমারই মত রাত জাগো! না না, বেশি রাত করে শুতে যাবে না, শরীরের দিকে নজর না দিলে নিজেই যে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন কে তোমার কপালে দেবে জলপটি, কে দেবে পথ্য।
তুমি হয়তো ভাবছো এত কথা কেন তোমাকে লিখতে গেলাম। লিখছি কি সাধে, তোমার ভালোবাসার ভালোটা আজও রেখেছি সংগোপনে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। এমনই এক শীতের সন্ধ্যায় প্রথম আলাপ তোমাদের বাড়িতে চতুর্থী তিথিতে মাকালী মায়ের পূজায়। অনেক ভীড়ের মাঝখান থেকে আমাকে আলাদা করে জানতে চেয়েছিলে আমাকে। আমি অপলক দৃষ্টিতে তোমার মুখপত্রে এঁকেছি বাঁশরীর সুরসাধা।
সেই সুর আজও বেজে চলছে আমার কর্ণে। সেদিন তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। তারপর অনেকগুলো দিন আমরা একই ফ্রেমে বন্দী হয়েছিলাম আড়ম্বরহীন পাণিগ্রহণে। অনেকবার চেষ্টা করেছি নিজেকে তোমার কাছে নিঃশেষে নিবেদন করতে, কিন্তু পারিনি। পারিনি একখন্ড কাগজে কালির আঁচড়ে তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাতে। অথচ তুমি এসেছিলে আমার সুখে-দুখে অসুখে তোমার সুরের পথ্য নিয়ে, আমাকে প্রস্ফুটিত করতে। তাই অনেক পাওয়ার মাঝে তোমাকে না পাওয়ার সুখ আজও আমাকে 'তোমাকে' ভাবায়। 'সুখ' বলছি কেন? সুখই তো। তোমাকে ভেবে এতটা কাল বেঁচে থাকা, কী মধুর তোমার স্মৃতি, কী অপরিমেয় তোমার ভালোবাসা।
কাল মধ্যরাতে তোমাকে স্বপ্ন দেখলাম আমি। বাসন্তী রঙের শাড়িতে তুমি একটি সুতিকায় গাঁথছিলে পুষ্পমালা।  আমার উপস্থিতিতে তুমি তৎক্ষনাৎ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলে। অথচ সেই পুষ্প মালা আমাকে আলিঙ্গন করেনি। সবকিছু কেমন বিপরীত মেরুতে মিলিয়ে গেল। এই যা, লোডশেডিং হয়ে গেল। অন্ধকার হাতড়ে দেশলাই মিলল যখন, তখনও তোমার ভাবনা আমাকে আবৃত করে রেখেছে এক অমোঘ ভালোবাসার বন্ধনে। এখন আবার মোমবাতির হিম আলোয় তোমার ছবি ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে উঠছে। রাত অনেক গভীর হলো, এবার শুতে যাও। নবজীবনের দোলায় তুমি চিরকালের অন্যন্যা হয়েই থেকো। তুমি ছিলে, তুমি থাকবে, তুমি আছো চিরদিন ঐ সমুদ্রের ফেনায় সফেদ হাসির ছটায়। তোমাকে লেখা এই পত্র আমার শেষ পত্র। আর কিছুক্ষণ পরেই পূবের আলো মেখে নিত্যকাজে বাহির হবো তোমারই খেয়া বাইতে। অনামিকা, এই ছোট্টো জীবনে যদি কিছু ভুল করে থাকি কখনও, তবে ক্ষমা করে দিও তোমার ভালোবাসার প্রদীপ শিখায়।
ভালো থেকো প্রিয়।
ইতি -
তোমারই সৌমেন