আমি কখনো কাউকে বন্ধু বলি না, কাউকে বন্ধু বানাই না। বন্ধু জিনিসটা আমার কাছে অনেক শ্রদ্ধা সম্মান এবং ভালোবাসার। কিন্তু অনেকেই আমাকে বন্ধু বানিয়েছে, বন্ধু বলে ডাকে। আর এমনই এক বন্ধু বা বান্ধবী ছিল আমার ছোট বেলায়, সে আমাকে অনেক পছন্দ করতো, প্রায় সময় সে বলতো 'আমরা যখন বড় হবো তোমাকে আমি বিয়ে করবো।' হঠাৎ করে তার বাবা মারা যাওয়াতে এই শহরে তাদের আর থাকা হয় না, তাদের নিজ গ্রাম রংপুর সবাই চলে যায়। তার চলে যাওয়ার পর আর কোনদিন যোগাযোগ হয়নি, সে কেমন আছে কোথায় আছে কিছুই জানি না।


একদিন মোবাইলে একটি মেসেজ এসেছিল, সেখানে লেখা ছিল 'I LOVE YOU' কাজে ব্যস্ত থাকায় তখন আর কোনো খোঁজ খবর নেইনি, কে এই মেসেজ পাঠিয়েছে। কিছুদিন পর একটি ফোন, এরপর তার পরিচয়, সে নাকি দীর্ঘদিন ধরে আমাকে পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। তার এমন প্রস্তাব আমি বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি, এবং তার কথা মতো দুই পরিবারকে রাজি করিয়ে আমাদের তিন মাসের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাই। তার বয়স আঠারো না হওয়াতে আমার আম্মু তার পরিবারকে বলেছিল আমরা এখন নাক ফুল পরিয়ে রাখবো, আঠারো হলে তুলে নিয়ে আসবো। ভাগ্য বলে একটি কথা আছে। যে মাসে তাকে নাক ফুল পরাতে যাওয়া হবে, হঠাৎ করে সে মাস থেকে তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের বাসায় গিয়ে জানতে পারি সে অন্য একজনকে বিয়ে করে রাজশাহী চলে গেছে।


প্রথম বই বের হওয়ার পর বেশকিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়, উনিশের দিকে একটি মেয়েকে পছন্দ করে বসি। তাকে জানালে সে রিজেক্ট করে দেয়। তার সাথেও আর কোনদিন যোগাযোগ হয়নি, সে কোথায় আছে কিছুই জানি না।


কলেজে চাকরি করা কালীন একটি মেয়ে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বলেছিল 'আমি আপনার প্রতিটা লেখা পড়ি এবং পছন্দ করি। আমি প্রায় সময় আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি। আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টটা একসেপ্ট করেন না।’ তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, দেখা হয়, প্রায় সময় চায়ের আড্ডা হয়। কলেজের চাকরি ছেড়ে দিলে তার সাথে যোগাযোগ কমে যায়। আমার ফেসবুক আইডিটা নষ্ট হয়ে যায়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ডিজেবল করে দেয়। সে কলেজ থেকে ভার্সিটিতে চলে যায়। হঠাৎ একদিন রাস্তায় দেখা হয়, আমরা যোগাযোগ করার জন্য নতুন করে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করি। কলেজে দেখা সে মেয়েটির মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখে আমি চমকে উঠি, মানুষ সময়ের সাথে বদলে যায়। কিন্তু আমি তো কলেজ পড়ুয়া সে মেয়েটিকে চাই। ভালো লাগা বা ভালোবাসা দোষের কিছু না, তাই বলে দিলাম তাকে 'ভালোবাসি' সে উত্তরে বলল তার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, বড্ড দেরি করে ফেলছি।


একটি সংগঠনে কাজ করার সুবাদে অনেক বৃদ্ধাশ্রম আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া হতো, মাঝেমধ্যে আমরা মিটিং রাখতাম 'টিএসসি, রমনা, গুলিস্তান পার্কে' মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে। বেশিদিন আগের কথা না, গত তিন চার মাস হবে। একটি মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, রাজি না হওয়াতে বলে তাহলে প্রেম করি। তাকে নানাভাবে বুঝিয়েছি যে আপনাকে আমি একজন সেচ্ছাসেবী বন্ধু বা ছোট বোনের মতো দেখি এবং জানি, সে তারপরও বিরক্ত করা বন্ধ করেনি। এরপর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মোবাইল নম্বর সব জায়গাতে তাকে ব্লক দিয়ে দিয়েছি।


দীর্ঘদিন ধরে একাকিত্বকে ভালোবেসে ফেলেছি, তাই কাউকে ভালোবাসতে এখন আর ইচ্ছে জাগে না। এই পাঁচ নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা সম্মান আছে। জানি না আগামী দিনগুলো কেমন হবে, জীবনে কেউ আসবে কিনা। পৃথিবীতে যা কিছু হয় সবই আল্লাহর ইচ্ছায়, তাই তার কাছে একটাই প্রার্থনা করি এখন, মাবুদ যদি জীবন সঙ্গী দান করো, এমন সঙ্গী দিও যে তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে ভালোবাসে যে, সে মানুষ ঠকায় না, সে আমাকেও ঠকাবে না।