১ -গ্রীষ্ম

এমন মায়াবী আলো,
দেখিনি কখনো আগে |
চোখে রহস্যময় বিভ্রম লাগে |
যুবা সূর্য সতেজে, দশদিক কাঁপিয়ে
হেসে ওঠে-
উচ্ছল যুবতীদের মতন,
ঝলমলে প্রজাপতি পাখা |
গাঙ ফরিঙের লেজে সুতো বেঁধে,
ছুটে চলা দুরন্ত বালকের মতন,
মাঝে মাঝে আসে দমকা হাওয়া |
এই বেশ-
সত্য হোক চাওয়া |
সত্য হোক সকল প্রত্যাশা |
প্রকৃতি-পুরুষ আর মহৎ ভালবাসা |
হাতে হাত রেখে,
নদীর তরঙ্গ গুনতে গুনতে,
চল খুঁজি-
অন্য জীবনের স্বাদ |

২ - বর্ষা


সমুদ্রে মেঘের গর্জন |
বালিতে পায়ের ছাপ,
মুছে দিল ঢেউ |
হাওয়ায় নুয়ে পড়া,
বৃক্ষরাজি ছাড়া,
জানলো না কেউ-
বর্ষা এসে গেছে |

সেদিন বিকেলে,
আবহাওয়া দপ্তরে,
গনকযন্ত্রে আলো জ্বেলে-
কাঁটা ওঠে নড়ে |
রণসাজে,
খ্যাপা হাতি মেঘের পিঠে চড়ে,
জানান দিল বর্ষা,
সে এসে গেছে |

বুকের বোতাম খোলা অকপট যুবা,
ছাঁটের হাত থেকে বাঁচতে,
দৌড়ে আশ্রয় নেয়,
টিনের শেডের তলায় |
লাল ছাতা যুবতীর সাথে চোখাচোখি হতেই,
লাজুক হেসে ফেলে |
বর্ষা এসে গেছে |

তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিয়ে বুকে,
কাশির দমকে,
যে বৃদ্ধ কাটিয়েছে,
একটা গোটা বছর হাসপাতালে-
জানলার কাঁচে,
লেগে থাকা,
চুইঁয়ে পড়া জলে,
মনে মনে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে,
ছেলেবেলাকে ভালোবেসে-
মৃত্যুর জন্যে,
প্রস্তুত হতে হতে,
সে জেনে যায়-
বর্ষা এসে গেছে |

৩- শরৎ

কাশফুল, শিউলি বা নীলাকাশে নয়,
আমার শরৎ আসে,
স্তূপ করে রাখা বাঁশে,
আর প্যান্ডেলের কাপড়ে |
অলিগলি দিয়ে হেঁটে,
ওভারহেড তারের ফাঁক দিয়ে,
যেটুকু আকাশ-
তাতে ঋতু চেনা যায়না |
আমার শরৎ আসে আমার হৃদয়ে |
আমার শরৎ মানে তোমার বায়না |
কেনাকাটা আর,
একটু ঘুরে আসার,
আবদারে |
এসেই হারিয়ে যায়, শহরের ধুলো বালি মেখে,
ট্যাক্সির মিটারে আর বাসের চিত্কারে |
মাস দুই পরে,
পুরনো কাগজওয়ালাকে কিলো দরে-
বিক্রি করা পূজাবার্ষিকীর সাথে
বিদায় নেয়,
আমার শরৎকাল |
তবু এর মাঝে,
একরাশ চিন্তা,
ঠোঁটে লেগে থাকা বিরক্তির মাঝে,
লাউড স্পিকারের তীব্র বিকৃতির মাঝে,
হারানো সময়ের মধুর আমেজে,
আমার বুকের মাঝে সহসা ওঠে বেজে-
ঢাকের বোল |

৪ - হেমন্ত


নদীর নামে তার নাম,
তার চুলে মেঘেদের খেলা |
গাছেদের গায়ে মাখা,
লালচে সবুজ এক আলোয়-
হেমন্তের বিষন্ন সন্ধ্যেবেলা |
গ্রীষ্ম অতীত স্মৃতি শুধু,
বর্ষাও চলে গেছে কবে-
ভালোলাগা বিকেলের সাথে,
শরতের নীলাকাশ,
হিমঝরা রাতেরাও নেই |
কুয়াশা ভরা নিঝুম চোখে,
পাখিদের গান থেমে গেছে |
এমন সময় হেঁটে এলো,
নিশ্বাসের বাষ্পভরা পথে-
একটুকরো হাসির উপহার,
শেষ না হতেই চলে গেল |
কতদিন হয়নি কোনো কথা,
কত কথা রয়ে গেছে বলার |
হেমন্ত গভীরে চেপে বসে,
হেমন্তের বিষন্ন সন্ধ্যেবেলা |

৫ - শীত

একাকিনী-
তুষারপাতের কালে,
তুমি নিশ্চিন্তে থেকো |
সত্য, গোপনে রেখেছি লুকিয়ে-
বরফে ঢাকা
ছিন্নমূল ফুলেদের মাঝে |
নামে হিংস্র হলেও,
আসলে কাগুজে বাঘ আমি |
নিশ্চিন্তে থেকো |
ঘাসের উপর শুয়ে থেকে,
উপুর হওয়া বুকে,
লেগেছে ও কি?
ঘাসের নাকি আচড়ের দাগ?
শীতের বাঘনখে?
তীব্র আশ্লেষে,
মরণ কামড় দেয়-
মৃত্যু ভালোবেসে |
অঙ্কুরে বিনাশ |
আর যা কিছু,
বাকি ইতিহাস,
যা কিছু বলার বা জানার,
আমার কোর্তার জেবে |
তুমি নিশ্চিন্তে থেকো |


৬ - বসন্ত


এই বসন্তে,
আমি কোনো কথা শুনব নাকো |
আমি আমার মতন হব |
এই বসন্তে |

এই বসন্তে-
আমি দিকে দিকে যাবো |
পুরাকালে রাজাদের মতন,
রাজ্যজয়ে |
এই বসন্তে নিজেকে হারাবো,
খুঁজে পাব-
তোমার সাথে, তোমার মতন করে |
এই বসন্তে আমি তোমার মতন হব |

এই বসন্তে-
পলাশের মুকুট মাথায় মেলে,
বনে বনে রঙের খেলা খেলে,
মৃত্যুকে দুরে ঠেলে,
জরাকে ছুড়ে ফেলে দেব |
আকন্ঠ আসব পান করে,
তোমার কাছে যাবো |
পুরনো বিষাদ ভুলে যাবো,
নতুন জীবন খুঁজে পাব |
মৃগয়ার ছলে-

এই বসন্তে-
কোনো কথা শুনব নাকো |
আমি আবার, আমার মতন হব |
আমি আবার, তোমার মতন হব |