...আর যারা সন্তানকে দুধেভাতে রাখার
শুভবুদ্ধিটুকু নিয়ে মোটামুটি মানুষ।  
যারা জানে, কোরান অথবা গীতা,
ধর্মগ্রন্থমাত্র, ভগবান বা আল্লাহের
লিপিবদ্ধ অনুশাসন, কোন শেষকথা নয়।  
এই সব নীতিবাক্য আচরণীয় কারণ,
ধর্ম মানুষকে শান্তি দেয়।  
যা খুশী তাই করার প্রবল ইচ্ছাকে
অল্প বেঁধেছেঁদে রাখে।
প্রয়োজনে অন্ধ বিবেকের
চোখ খুলে তাকে বাঁচায়,
খাদে তলিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে।


এই তারা কি হিন্দু ও মুসলিমদের
থেকে আলাদা হয় কখনো?
ওরা জেহাদি নয়তো ওরা কাফের,  
একবগ্গা গোঁড়ামির জমাট পিন্ড সব!
মজ্জায় মজ্জায় ভ্রূণের গোড়াপত্তনে,
জঙ্গীহানা অথবা জাতিদাঙ্গার নীল নকশা।
তবুও যারা একহাতে গোরু আর
অপর মুঠিতে শূকরের মাংস নিয়ে,
অনবরত মন্দির বা মসজিদে হানা দেয়।
আমরাই তাদেরকে একাধারে দিয়েছি
রক্ষক ও ভক্ষকের স্থান।


এসব ঠান্ডা মাথায় বলা কথা এখন,
নেতিয়ে পড়ে থাকে রক্তমাখা রাস্তায়।  
যে রক্ত নিজস্ব সম্পর্কগুলিকে
পৈশাচিক উপায়ে রোজ খুন করে।
এরপর লাল রঙ দাউদাউ করে জ্বলে,
ছাই করে দেয় নীতিমালার জমানো জঞ্জাল।
হিন্দু হলে মুসলিমকে আর
মুসলমান হলে হিন্দুদের থেঁতলে কুপিয়ে,
মাংসপিণ্ডের দলায় পরিণত করতে
কলম নয়, তখন মনে হয় সঠিক অস্ত্র চাই,
চাই চপার, নিদেনপক্ষে তরোয়াল!


এই তো স্বাভাবিক ছিলো তবে।
ক্ষতি যেখানে ব্যক্তিগত, তারই ছায়ায়  
ক্ষত এক অমরত্ব লাভ করে!
সেই যে গুজরাতের হিন্দু দম্পতি,
যাঁরা মৃত্যুর নেকনজরে থাকা বিধর্মীদের
আশ্রয় দিয়েছিলেন অথবা
আসানসোল মসজিদের ইমাম,
দাঙ্গায় পুত্রকে হারানোর পর
যাঁর কণ্ঠে বদলা নয় বরং
ঝরেছিল ক্ষমার আশ্চর্য আলো!
তাঁদের মানবিকতা ব্যতিক্রম শুধুই,
হত্যার নিয়মকে আরো স্পষ্ট করে তোলে।
তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে অন্যকে মারো,
নিজের যন্ত্রণা তবে উপশম পাবে।


কিন্তু আমাদের হাতে নেই
মানুষ খুনের মতো পবিত্র উৎসবের অধিকার!
চামড়ার চালচিত্রে আঁকা দগদগে 'ঘা'য়ে,
উস্কানির তেল আর ছদ্মদরদের
জল বুলিয়ে, যারা নিজেদের  
অন্তর্ঘাতী ভাণ্ডারকে অমরত্বে নিয়ে যায়।  
যারা কোনদিন মানুষকে নয় বরং
বাঁচিয়ে রাখে ঘটনাকে, সেই তারা খুন করে।
এক রক্তফেনামাখা পুঁজ থেকে আবার,  
ভরপুর পুঁজির সুযোগ খুঁজে উড়ে যায়,  
মর্গের নীল ডুমো মাছির মতন।
মন্ত্র আউড়ে চলে ঘ্যানঘ্যান করে,
'কই আগে তো দেখিনি কোনো  
মঞ্চে, অনুষ্ঠানে, সুতরাং…
আজ কোনো প্রতিবাদ নয়।'  


এরপর কোনোক্রমে বেঁচে থাকা ছিলো,
শ্মশানের ধোঁয়া তাও ঝাপসা করে দেয়।
নাকি চোখ ভরে গেছে ঝুরো মাটিতে?
হয়তো কবরে থেকে পচে গেছে লাশ!
সেই তো নাভী খোঁজা ছাইয়ের ভিতর,
চুকিয়ে দিতেই হবে কাফনের দাম।
বিষণ্ণ ভাবনা এক মগজ কুরে কুরে খায়,
নারা-এ-তকবীর আর জয় শ্রীরাম,
উচ্চনাদে দুই স্বরই এক সুরে লাগে!
-------------------------------------------