একটা সময় ছিল; দৈনিক এই আসরে ১৫~১৮ ঘন্টা  সময় দিতাম। প্রচুর কবিতা পড়তাম, নিজে শিখতাম আর সেই শেখাটা অপর বন্ধুর সাথে ভাগ করতাম। এখনো পড়ি, এখনো শিখি তবে সময় দিতে পারছি কম।


দুএক শব্দের চাটুকারী মন্তব্য আমি দিই না। যা কিছু বলি কবিতা পড়ে এর ভাল-মন্দ নিয়েই বলি। তাতে যেমন ভাল-মন্দের দিক নির্দেশনা থাকে তেমনি প্রণোদনাও থাকে।


আমি মনে করি, কবিরা সৌন্দর্যের প্রতীক। কবিদের সবকিছুই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হবে। তাই বরাবর আমি কবি বন্ধুদের রচনার সঠিক বানান ও অসংগতিসমূহ দূরিকরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। তাতে কারোর কাছে প্রিয় হলেও কারো কারোর চক্ষুশুল হয়েছি। তাতে কিছু যায় আসে না। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসাও পেয়েছি প্রচুর।


ইদানীং আর আগের মত সময় দিই না, দিতেও পারি না বটে। নেহায়েত ভাল রচনা মনে না হলে আর কারোর ভুল বানান বা অসঙ্গতিও দেখাতে যাই না। অনেক বন্ধুর মধুর অভিযোগ; কেন তাঁদের পাতায় যাই না, ভাল-মন্দ মতামত দিই না। নিজে আর আগের মত পোস্ট না দিলেও নিয়মিত সময় করে কিছু হলেও কবিতা পড়ি। কবি নতুন হোন কিংবা পুরনোই হোন সময় সুযোগ হলে এবং একেবারে মান বহির্ভূত লেখা না হলে অল্প কথায় হলেও গঠনমূলক মন্তব্য দিতে চেষ্টা করি।


এই পাতায় একাধিক আই ডি খুলে এক কবি বছর খানেক ধরে অসংখ্য ভুল বানান ও অপূর্ণ বোধের কবিতা পোস্ট দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার একটাই গুণ - কাব্যিকতা কিংবা বানান যত দুর্বলই হোক, লেখনী সাবলীল ও ঝরঝরে। তার মধ্যে সম্ভাবনা আছে, যতন নেই। যেমন অগোছালো তেমনি অপরিচ্ছন্ন। গত ১৬-০৩-১৮ তারিখে এই কবির এক কবিতা পড়ে মন্তব্য দিলাম -


অনিরুদ্ধ বুলবুল ১৬/০৩/২০১৮, ১৬:২৫ মি:
সাবলীল বর্ণনায় 'নারীর খেলা' সুন্দর হয়েছে বেশ। বিশুদ্ধ বানান ও শিল্পীত বিন্যাসে কবিতাটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল কবিকে।
১০৩.৬৭.১৫৭.৬০


উত্তর -


(নাম দিলাম না) ১৬/০৩/২০১৮, ১৮:০৯ মি:
অশেষ ধন্যবাদ।
বিশুদ্ধ বানানের জন্য ভুলগুলি শোধরাতে উল্লেখ করে বানানগুলি সংশোধনের সহযোগীতার হাত বাড়ালে কৃতজ্ঞ থাকব।
৫৮.১৪৫.১৮৯.২৩৩


বুঝোন অনুরোধের ঠেলা। মনে হচ্ছে, অফিসের বড় কর্তা তার অধঃস্থনকে ফরমায়েশ করছেন। এবার তো দায়ে ঠেকেছি কাজেই যতই সময়ের অভাব হোক কিংবা কষ্টদায়ক হোক সহযোগিতা যে করতেই হয়! তাই বেশ সময় ক্ষেপণ করে তার পুরো কবিতাটি ছেঁকে সংশোধনী দিয়ে আবারো মন্তব্য দিই:


অনিরুদ্ধ বুলবুল১৭/০৩/২০১৮, ০১:৩০ মি:
এত বড় কবিতা ছেঁকে এত বানানের ভুল সংশোধন করা বড় কঠিন কাজ। তবু কিছু করে দিচ্ছি কিন্তু ভুল শব্দের সংশোধনী এবং বিশুদ্ধ বাক্য বিন্যাস কবিকেই করতে হবে।


>> বেড়াজালে, সাঙ্গ, রূপের, মোহিনীর, শিকারী, মুনি, ঋষি, হুঁশ, গুণী, ভুবনেশ্বরী, ভুজঙ্গিনী, বীরাঙ্গনা, দড়ি...


সেই কবিতার পর, গত ষোলদিনে ঝড়ের বেগে ষোলটি কবিতার পোস্ট সহ অসংখ্য মন্তব্য প্রতি-মন্তব্য চালাচালি করলেও সেই কবি "কৃতজ্ঞ থাকব" দূরে থাক বানানগুলো তো সংশোধন করেনইনি এমনকি একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিতে সময় পাননি।


এবার বন্ধুরাই বলুন; এরপর কি আর কারো বনের মোষ তাড়াতে ইচ্ছা করবে? এমন প্রায়শই দেখা যায়, তবে কেউ কেউ অবশ্য জবাব দেন - 'ধন্যবাদ'। যেন তার সময়ের কত দাম, সময়ের দাম নেই শুধু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানিয়া সাহায্যকারী ব্যাক্তিটির। তিনি যে দয়া করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তা ই যেন ঢের!


তারপরও কেউ কেউ দাবি করেন, তাদের কেউ সহযোগিতা করেন না। তার মানে পাতায় তারা আশানুরূপ মন্তব্য পান না। কিন্তু অনেকেই বোঝেন না - চটকদারী সস্তা মন্তব্য এক জিনিস আর সংশোধনমূলক গঠনশীল মন্তব্য কতটা দরকারী বা উপকারী। মনে রাখা দরকার, চাটুকারী মন্তব্যে সাময়িক উদ্যম থাকলেও তা মেকি। চাটুকারী মন্তব্য কবির কবিত্বকে ধ্বংস করে দেয় আর গঠনমূলক মন্তব্য যত তেতোই হোক তা হজম করতে পারলে কবির কবিত্ব প্রভা শানিত হয়।