অরুণ কারফা রচিত ‘জটিলতা’ শির্ষক কবিতা নিয়ে আলোচনা


অনেক ব্যস্ততা আর মানসিক অস্থিরতা কাটাতে মনোবিজ্ঞানের সূত্রটাকেই কাজে লাগালাম আজ। ভাবলাম আজ  একটা কবিতার আলোচনা লিখলে কেমন হয়! শুরুর দিকে যেমন লিখতাম? বলা যায় আলোচনা পাতায় পাঠক এবং লেখকের সমাগম বাড়াতেই তখন সেই প্রচেষ্টাটি চালিয়েছিলাম। দেখাদেখি একে একে পাতায় কয়েকজন   আলোচকের সমাগম হলো। তুমুল লিখছিলেন, তাঁদের প্রেরণা দিতে দিতে একসময় নিজেই থেমে গেছি। বহুদিন পর আবার চেষ্টা করছি। তাই আমার সাথে খুব অল্প পরিচয়ের একজন প্রবীণ কবির কবিতাই বেছে নিলাম। আজকের কবি - অরুণ কারফা।


ভারতের শিল্প-নগরী জমশেদ পুরে কবির জন্ম ও কর্ম। ষাটোর্ধ বয়েসী স্থপতি অরুণ কারফা বাংলা-কবিতার প্রায় শুরুর দিককার নিবন্ধিত সদস্য। তিনি কবিতা পড়তে এবং লিখতে ভালেবাসেন। নিভৃতচারী এই কবি ১০ বছর ১ মাস সময়কালে ১০৫৩টি কবিতার পোস্ট দিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তাঁর কোন বই প্রকাশের তথ্য পাতায় নেই। মাসিক গড়ে তিনি ৮/৯টি করে কবিতার পোস্ট দিয়ে থাকেন। কবিতার আসরে কবিতা পোস্ট আর কদাচিৎ দু’একটি কবিতায় মন্তব্য দেয়ার বাইরে আর কোন পাতায় তাঁর খুব একটা গতায়াত নেই।
মনে পড়ে, আমার প্রথম কবিতা পোস্টে তিনি একটি বানান সংশোধনী নির্দেশক মন্তব্য দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৮ বছর সময়ে তাকে আর পাইনি। তবে তাঁকে দুই কারণে বেশি চিনি -  এই নামে পাতায় দ্বিতীয় কোন কবি নেই এছাড়া তাঁর বেশকিছু কবিতা পড়েছি বলেই কবি হিসাবে চিনি। মাঝে মাঝে মন্তব্যও দিয়েছি তবে ব্যক্তিগত জান-শোনা নেই। প্রথমেই আজকের বাছাইকৃত কবিতাটি হুবহু তুলে দিচ্ছি:


জটিলতা
- অরুণ কারফা


কোন দৃশ্যে তাকে মানায় বেশি ....
             প্রসারিত চোখের পাতার তলে
             তুলতুলে কোলে কুচকুচে কালো
ব্যাকুল মনির আকুলতা,


    নাকি উপেক্ষা করে সবার অনুরোধ ঢেকে দেয় যখন তার সেই বোধ
               'আত্মকেন্দ্রিক নিষ্ঠুর পাতা' ,
             
এই নিয়ে যখন চলছে ঝড় নিঃশব্দে নীরবে মনের ভিতর
ঠিক তখন রুপোর মত দু ফোঁটা মুক্তো
                   ঝরঝর করে অঝোরে ঝরে দুর করে দিল সব ভ্রম
           কেটে গেল মনের জটিলতা।


ছোট্ট একটা ভাবনার অসামান্য প্রকাশ! এ-ই হলো কবিতা! এ-ই হলো কবিতায় রূপক উপমা আর ভাবের বহুমুখীতার নান্দনিক প্রকাশ! একটা কবিতায় কত অল্প কথায় কত বিস্তৃত ভাব প্রকাশ করা যায় তা দেখিয়েছেন কবি এই কবিতায়।


একটা গানে আছে; “চোখের ভাষা বুঝতে হলে / চোখের মত চোখ থাকা চাই।” এখানেও একই কথা সাজে - কবিতার ভাব বুঝতে হলে কাব্যিক মন থাকা চাই। কবি সুন্দর ভাবে সেই কথাটিই বুঝিয়ে দিয়েছেন; কোন বাক্য ব্যবহার না করেও চোখের ভাষায় কত কী ই না প্রকাশ করা যায়। রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা, দয়া, প্রেম, ভক্তি, ভালোবাসা, উপেক্ষা, সম্প্রীতি...  আরো কত কী...


চোখ কত কথাই না বলে - এর দৃষ্টি বা চাহনী থেকেই তাকে নানান অভিধায় ফেলা যায়। চোখের দিকে তাকিয়েই সেই চোখের ধারক ব্যক্তিটির চারিত্রিক, মানসিক বা স্থানীক অবস্থান এবং অনুভূতি আঁচ করা যায়। তাই চিকিৎসক থেকে শুরু করে মনোবিজ্ঞানী ও গোয়েন্দাদের কাছে চোখের চাহনী বা ভাষার গুরুত্ব অনেক বেশি।


কবি যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন - পাতার আড়ালে কুচকুচে কালো পাথর সদৃশ চোখের মনি দু'টি অনেক কথাই বলতে পারে, অনেক পরিচয়ই বহন করতে পারে, অনেক অভিধায়ই ফেলা যায় তাকে কিন্তু চোখ থেকে নির্গত মুক্তো দানার মত দু'ফোঁটা জল - তার আর কোন পরিচয় নেই, আর কোন তুলনা নেই। তা কেবলই অশ্রু, অশ্রু আর অশ্রু। তা আনন্দেরই হোক বা ক্লেশ দুঃখ যাতনারই হোক। অভিজ্ঞ জনের পাঠ করতে অসুবিধা হয় না।


চমৎকার এই কবিতার কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।