অগ্নিগিরির উদগীরণ থেমে গেলে লাভাও থামে
তরল গলিত লাভা ক্রমশ শীতল, জমে পাথর
যেমন কঠিন তেমনই ঠান্ডা - নাগিনী বপুষ্মতী।


নির্ঝরিণীর চুঁইয়ে পড়া খরধারাটি নদী বয়ে চলে:
ভেঙেচোরে ধেয়ে যায় কত লোকালয় প্রান্তর,
দিগন্ত-বিদারী ফসলের ভুঁই, বনবীথির দীঘল বেণী,
কখনো শুকিয়ে ধু-ধু, সীমান্তের সিঁথি!
উপচে পড়ে কখনো আবার শতধা উচ্ছ্বাস-বানে;
ভাসায় দুকূল।


কালের প্রবাহে,
গতির প্রস্রবণে নদীও মিশে সাগর মোহনায়
থাকে না কলগীতির মৃদুল তরঙ্গ,
উদ্দাম নৃত্য কি-বা ক্ষীপ্রতর প্রগলভতা...


জীবন নদীর চঞ্চল ধারাটিও সময়ে স্তিমিত হয়ে আসে
মোহ-মাদকতার সোনালি দিনগুলো অনুক্রমে জলো হয়
প্রিয়তমের কুন্তলবেণী ছুঁয়ে ফসকে আসা হলকা বাতাস
যে মনকে মৌতাত-মাধুরিমায় উন্মন করে দিত,
আঁচলের আলতো ছোঁয়া রক্তরেণুতে উদ্দাম স্রোতের নহর বইত,
কপোলের কুমকুম আভা, ললাট-চর্চিত শিল্পিত পট,
অধরের ক্ষীণ ভাঁজ... প্রাণ-মন উদ্বেলিত হয়ে উঠত
তারুণ্যের প্রগাঢ় চেতনার সেই ঝাঁঝালো শিখাটি
সময়ের বাস্পীয় ভাঁপে কোথায় উড়ে উবে যায়!


গড়িয়ে যাওয়া সময়প্রবাহে সবই ঝাপসা হয়ে আসে!
এ-ই কি তবে জীবন? এ-ই কি বাস্তবতা!
জীবনের চাওয়া-পাওয়া লব্ধ হয়ে গেলে
সবই কি-না এমনি করেই ফুরাতে থাকে!
“লব্ধ হলে সকল চা্ওয়া এমনি বুঝি যায় ফুরিয়ে জীবন
না পাওয়ার আকাশ ছুঁতে ছড়ায় তবু ডালপালা এ মন!”


চোখের রঙিন কাঁচটি ঘোলা হয়ে এলে
মননের ঝিল্লিও পলেস্তারায় ঢাকে,
স্নেহক্ষরা পেলব কামনা তখন মোহন লাগে না আর
প্রিয়তমের উষ্ণ পরশ, চুম্বনের প্রগাঢ় আবেষ্টনী
মননে নাগিনীর ঠান্ডা অনুভব!
সতত রয়েছে কাছে তবু মনে হয়;
জানি সে কতই না দূরে।
প্রতীতির নব জাগরণে শুধু বিস্ময়:


“বড় বেশি কাছে থেকেও পাই না তো পাশে
ঝরা পাতার শব্দ শুনি এ কি জীবনের বাঁকে!
যে শ্বাসের হিস্-হিস‌ একদা ছিল আগুনের শিখা
সেই তনু সেই মন কেন আজ শীতল ভুজঙ্গম!”