আমার কবিতাতেও একটা আকাশ আছে। সে আকাশে আমিঃ  
সাত রঙা রঙধনু দেখি
জল শূন্য অথবা জল ভরা মেঘ দেখি
সন্ধ্যা তারা দেখি
সকাল করা প্রকান্ড সূর্য দেখি
প্রকৃতি নগ্ন করা চাঁদ দেখি।


সে আকাশে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ এসে ভিড় করে।
আমি তাদের কাছে একটা মায়াবি সন্ধ্যার ব্যাখ্যা চাই। আমি
ব্যাখ্যা চাই একটা কবিতা লিখতে নিদ্রাহীন রাতের কথায় কে
এসে দাঁড়াত তাঁদের সম্মুখে, আমি জানতে চাই কতটা দীর্ঘশ্বাস
হাওয়ায় মিলালে একটা কবিতার হয় জন্ম।


আমি তাঁদের কাছে ভালবাসার নারীদের প্রেম উপাখ্যান চাই।
জানতে চাই ভালোবাসা কি পাপ, ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে
যে নারীরা কাছে এল কবিকে ভালোবেসে, কবিতাকে ভালোবেসে
সে নারীরা কতদিন ভালোবেসেছিল কবিকে? আবার চলে যদি
যায় দূরে সরে, তবে কবিকে কি অপবাদ দিয়ে চলে গিয়েছিল!


আমার কবিতাতেও একটা মাঠ আছে। সে মাঠে প্রতিদিন এ প্রান্ত
থেকে ও প্রান্তে আমিঃ
ফসলের বীজ বুনি
মাটির কথা শুনি
আগাছা নিয়ে হয় টানাটানি
গাছের গোড়ায় ঢালি পানি
কখনও জনতার মঞ্চে হই মধ্যমনি।


সে মাঠে জনতার ভিড়ে দেখি শহীদ সোহরাওয়ার্দি, ভাসানী আর  
জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তাদের ভাবনায় যে স্বাধীনতা আর গনতন্ত্রের সংগ্রাম ছিল
তার কথা জানতে চাই। জানতে চাই একটা ভাষণ কি করে হয়ে
যায় কালজয়ী অমর কবিতা। সে কবিতা লিখতে কতটা বছর
নিদ্রাহীন কেটেছিল নিজেকে প্রতিনিয়ত জেলখানায় পুরে রেখে!


আমি জানতে চেয়েছিলাম মাঠের যে মানচিত্র এনে দিলে আগামী
প্রজন্মের জন্য সে মানচিত্রে কত নদী, পাহাড় আর সাগরের সাথে
মায়ার বাঁধন ছেড়া যে বসবাস ছিল, স্বাধীনতার আড়ালেও দেশকে
ভালোবাসার স্বার্থহীন যে দায়বদ্ধতা ছিল, সেই দায়বদ্ধতার
শেকলে কেন বেঁধে রাখোনি এই বংগবাসীকে!


আমার কবিতাতেও একটা পাহাড় আছে। কাঁটাতার মাড়িয়ে সে
পাহাড় গিয়ে মেশে ভিন্‌দেশী পাহাড়ের শ্রেনীতে। সে পাহাড় থেকে
প্রতিদিন আমিঃ
ঝর্ণা হয়ে মিশি সাগরে
সবুজকে আগলে রাখি পাথরে
বাতাসের সখ্যতায় বৃষ্টি মাখি গতরে
নতুন দিনের প্রতিধবনি ছড়াই ইথারে
কখনও নিঃশব্দ পায়ের আওয়াজ পাই বনের ভিতরে।


সে পাহাড়ের গুহায়, গভীর বনে অথবা নিরাপত্তা চৌকিহীন
পাদদেশে এসে এবার আমিই স্বপ্নের ঘোরে দাঁড়িয়ে যাই । দেখি
হেরা পর্বত, আসহাবে কাহফ আর আর সিয়েরা সায়েস্ত্রি পাহাড়
আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে। হেরা আমার নতজানু অভিজ্ঞান। তাই
জানতে চাই কাহফবাসীর কাছে , জানতে চাই চে’ গুয়েভারার কাছে।
পাহাড় থাকলেই কি সত্য ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করা যায়? নাকি
নিজের রোমান্স্‌কে লালন করতে হয় জ্ঞান আহরণ আর জীবন
উৎসর্গ করার ব্রত নিয়ে। শক্ত হোয়ে দাঁড়াতে হয় সত্যের বুনিয়াদে।


যে জ্ঞান লব্ধ বিশ্বাস নিয়ে কতটা বছর কেটেছে তাদের পাহাড়ে
পাহাড়ে, সে পাহাড়ের সবুজ, সে পাহাড়ের ঝর্ণা, সে পাহাড়ের কীট
পতঙ্গের সাথে পশু পাখির সাথে কি কথা হত, কি মায়ায় তারা
তাদেরকে আগলিয়ে রেখে দেখিয়েছিল মুক্তির আলোর পথ!
সে পথে পা থাকলেই কি হাঁটা যায়? নাকি সম্মুখের ধাপ আগে চিনে
নিতে হয় সঠিক ভাবে!  
  
আমার কবিতাতেও একটা সাগর আছে। নদীরা এসে মেশে তাতে।
আবার সে সাগরের জল গিয়ে মেশে মহা সাগরে।  সে সাগরে আমিঃ
জলচ্ছ্বাসেও সাঁতার কাটি
নতুন জনপদে ডাকে কাছের মাটি
মহাসমূদ্র পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনায় করি ইতস্ততঃ হাঁটাহাঁটি
তাতে জোয়ার ভাটায় চলে জলের লুটোপুটি
দিন শেষে সূর্য অস্ত যায় যেখানে সীমান্ত ভাটি।


সে সাগরের সৈকতে চেনা অচেনা অনেক নৌযান থাকে নোঙ্গর করা।
অজান্তেই কোনটার মাস্তূলে এসে আমি দঁড়াই। নেমে যাই  ইঙ্গিন রুমের
ভেতরে। দেখি কোম্পাস হাতে অ্যানাক্সিম্যান্ডারের মানচিত্রে
ভাস্কো দাগামা, ক্রিস্টোফার কলম্বাস আর আর্যদের অধিপতি কি এক
পরিকল্পনায় ধ্যান মগ্ন। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার সুজোগ খুঁজি।
আমার উপস্থিতি টের পেয়েই একজন আমার দিকে তাকাতেই
আমি জানতে চাইলাম সমূদ্র আর দেশ জয়ের সাথে সাথে এই যে
নতুন দেশ সন্ধান করার নেশা সে নেশায় কার হাত ছিল বেশী-
স্ত্রী’র, পিতা’র, না- মাতার?


আটলান্তিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরকে এক করার যে সমুদ্র পথ
পুর্তোগীজদের নিয়ে এলো এই ভারত বর্ষে এ কি ভারত জয়ের নেশা ছিল নাকি
বিশ্বটাকে এক করে ভাবার নেশা। কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কার কি ছিল
মানবতার জয়? তাহলে আমেরিকা কেন মারনাস্ত্রের নেশায় থাকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে
সারা বিশ্বব্রম্মান্ডে! কেন ভারত তথা গঙ্গা পদ্মার অববাহিকার আর্য- অনার্যরা হল
অবহেলিত!  তাই কি আজও মানবতা আর মানব সভ্যতা পিছিয়ে?  

আমার একটা কবিতা আছে। সে কবিতায়ঃ  
আছে আকাশ, চাঁদ তারা সূর্য প্রকান্ড
আছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ।
আছে খোলা মাঠ। আছে সত্যের আহ্বান
সহোরাওয়ার্দি, ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আছে পাহাড় ঘেরা সবুজেরা  
আছে আসহাবে কাহফবাসী, আছে চে’ গুয়েভারা।  
আছে কীটপতঙ্গ, ফুল পশু আর পাখি
আছে সমূদ্রের অজানা রাজ্যের হাতছানি ডাকাডাকি।  


আমার কবিতাতেও আছে নীল জলধারার ঊর্মীমালার স্বপ্নীল ফেনায়
অজানা পথের আলোক বর্তিকা। ভাস্কোদাগামা, আর্য, অনার্যরা
এসে এখনও অনুসন্ধান দেয় অজানা অনেক রাজ্যের। শোনায়
সভ্যতার কথা, উন্নয়নের কথা, স্বাধীনতার কথা। আর বলে যায় নতুন উন্নত
দেশ পেতে কি ভাবে হতে হয় সুশৃংখল জ্ঞানলব্ধ বিপ্লবী যোদ্ধা ও কবি।  
শুধু চাওয়া এ কবিতা যেন পড়ে সেই জ্ঞানী যোদ্ধার হাতে কোন একদিন।