জীবন নিয়ে বলিহারি অনেক কথা বলি আমরা। এর অনেক সংগত কারনও আছে। আসলে শুধু জীবন নয় প্রকৃতির দিকে তাকালেও তাই দেখি।
সাগরের যে ঢেউ এই মাত্র পুরোনো পাড় ধুয়ে দিয়ে গেল সেই ঢেউ কি আর একই ভাবে ফিরে আসে?
যে তারাটা গতরাতে খসে পড়ল সে কি আর ফিরে আসে?
নদীর যে জল সম্মুখে বয়ে গেল সে কি আর ফিরে আসবে?
বসন্তের যে মাতাল হাওয়ায় ফুল ঝরে পড়ল, পাতা ঝরে গেল সেই একই বাতাস কি আর ফিরে আসে আসে? আসে না। আসে না মানে একই ভাবে আর ফিরে না!


আসে যা তা নতুন করে নতুন আঙ্গিকে নতুন আসরে নতুন তরঙ্গ নিয়ে আবার ফিরে আসে। ফিরে আসে তা মানুষের মনে, মননে, শরীরে, চোখের দৃষ্টিতে, কানের কুহরে। নিঃসাড় হলে তো কিছুই আর ফিরে আসে না সেটাই প্রকৃত বাস্তবতা। যেমন রাত ফিরে আসে, চাঁদ ফিরে আসে, দিন ফিরে আসে, সূর্য ফিরে আসে। অথবা যে নীলসাগর ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে আজ চলে গেল সেও ফিরে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী কি বুঝে এই ফিরে আসার দৃশ্য, দর্শন, তরঙ্গ বা সৌন্দর্য?


আসা যাওয়া নিয়ে প্রকৃতির সাথে এমন অনেকের কত কথা, বন্ধুত্ব, প্রেম, মান অভিমান মনে পড়ছে আজ। আমাদের সকলেরই কোন না কোন ভাবে সকাল বিকেল রাত্রি এক আড্ডার হাট ছিল, যাকে বলি "চাঁদের হাট"। কিন্তু কালবোশেখী ঝড়ের চেয়েও ভয়ংকর কি এক মহামারী করোনা সে চাঁদের আকাশকে করল আঁধার কালো। ভেঙে দিল সে চাঁদের হাট। আমাদের সেই আড্ডা, সেই বন্ধুত্বকে দূরে সরাতে সরাতে করে দিল পর। কবে যে এ থেকে মুক্তি পাব, কবে যে ফিরে পাব সেই হাট, সে আড্ডা, কে জানে?


করোনা উত্তর আমরা যেন চাঁদের হাটে আবার একত্রে বসে জোছনার পেয়ালায় চুমুক দিয়ে উল্লাসে মেতে উঠতে পারি, আবার যেন সাগর বেলায় নতুন নতুন ঢেউয়ের জলে পা ভেজাতে পারি, আবার রাতের আকাশে তারার সাথে বলতে পারি প্রেয়সী সংলাপ, আহ্লাদী হতে পারি পলি মাটিতে ফসল ভরার গানে বয়ে চলা শান্ত নদীটির সাথে, প্রেমের শিহরণে ভাসতে পারি বাতাসে গন্ধে মাতাল করা বসন্তের সাথে- যতদিন বেঁচে থাকব। সে স্বপ্নটুকু নিয়েই মনকে এখনও লগডাউনে রেখেছি বন্দী, যদিও এ বন্দীদশা জীবন যেন অন্ধকার কারাগারের চেয়েও ভয়ংকর, এ বন্দীদশা জীবন যেন " কন্ডেম সেল" এ আটকা পড়া খুনি কয়েদীর চেয়েও যন্ত্রণার! অথচ খুনি করোনা অবাধে বিচরণ করছে সারা পৃথিবী!


০৭ জুলাই, ২০২১।