বালখিল্যতার কলম আজও এই মধ্য বয়সে লিখছে
প্রেম ভালোবাসার কবিতা। ভালবাসার কবিতা মানেই তো
সেই রাগ অভিমান, মন কষাকষি, ভুল বুঝাবুঝি, আবার
কাছে আসা অভিসার, আবার দূরে যাওয়া বিরহ নয়ত
প্রনয়ের ডোরে বাঁধা পড়া। রাত জাগা কবিতা আর
টিকটিকির সাথে মুখোমুখি সখ্যতা। আবার বুকের
অতলে কান্নার রোল নয়ত প্রেমের জোয়ারে জন্ম দেয়া
ভ্রূণ ফুল।


ফুল পাখি নদী সাগর চাঁদ সূর্য পাহাড়ী মৌন পাথর
মেঘ বৃষ্টি কুয়াসা শীত ধূলোয় জমে উঠা বাহারী অতীত
পাতা ঝরার দিন গোধূলি সন্ধ্যা খেয়ালী রাতের অধীন।
এমন অনেক শব্দ আর বাক্য নিয়েই তো রবি ঠাকুর,
জীবনানন্দ, গোস্বামী, শুনীল, নির্মলেন্দুরা লিখেছেন
প্রেমের কবিতা। কাজী নজরুল , শেখ মুজিব, শামসুর,  
মাহবুব উল কিংবা সুকান্তের মত আজও কত কবিই
ভালোবাসার পাশ কাটিয়ে লিখছে দ্রোহের উপন্যাস
গল্প আর কবিতা।


কিন্তু রবি হতে গেলে লাবন্য আর অমিতের আর কাউকে
সাহিত্যে জন্ম দিতে পুয়াতি ভাবনারা যেন আর দোল খায় না
অধুনা মননে। অথবা জীবনানন্দের বনলতা সেন, সুনীলের
বরুণার সুগন্ধী রুমাল কিংবা নির্মলেন্দুর “আমি বলছি না
ভালবসতেই হবে,আমি চাই কেউ একজন আমার জন্য
অপেক্ষা করুক” এমন ভালোবাসারাও থমকে আছে। কেমন
যেন সোস্যাল মিডিয়ার ইলেক্ট্রনিক পাতায় পোস্টারের এলবাম
হয়ে প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে তার ধরণ বরণ।


নজরুল হতে আর কি কোন বিদ্রোহী কবিতার জন্ম হবে?
কেমন করে? সেই বৃটিশ রাজত্ব নেই, সেই শৃংখল ভাংগার
প্রতিজ্ঞা নেই, নেই লৌহ কপাট! তাহলে বিদ্রোহী কবিতা কেন?
ভাষা আন্দোলনের অগ্রনী সৈনিক হয়ে ১৪৪ ধারা ভংগের
নেশায় আত্মাহুতি দেয়ার জন্য এখন যেন আর কেউ নেই।
একাত্মতার সহযোগী, সংগী, সাথীদেরও আজকাল আর
মেলে না যে মাহবুব উল আলমের মত “কাঁদতে আসিনি,
ফাঁশির দাবি নিয়ে এসেছি” বলে দাঁড়াবে মিছিলে।
অথবা সুকান্তর মত লিখবে- “আমরা এসেছি মিছিলে, গর্জে
ওঠে মিছিল”


আর বংগ বন্ধু শেখ মুজিবের মত যদি বলি- এবারের সংগ্রাম  
মুক্তির সংগ্রাম, তাহলে গোয়েন্দাদের হাজারো অস্ত্র তাক
হবে আমার দিকে, আমি প্রসিদ্ধ হওয়ার আগেই হারিয়ে যাব
হয়ত অজানা  কোন রাজ্যে। কিংবা যদি শামসুর রহমান হয়ে
বলি- “সেই চালে ভাই মিত্র কিংবা শত্রূর, চলছে সবই মস্ত সহায়
হাতীর শুঁড়” ধুর আর ভাললাগে এ সরকার এমন বিধূর। স্বাধীনতা
অর্জন পেরিয়ে গেছে কত যুগ। এখন কি আর লিখা যাবে-
হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্য আর কত নাভিশ্বাস হবে
ঊর্ধমূল্যের বাজারে, আর কত দেখতে হবে খয়ের খাঁ’র বাহন?
এমন কিছু লিখলেই হয়ে যায় অনুসরণ। যেন এ ভাবনার ধরণ
কবি এমন করে তার নিজের বানিয়ে নিয়েছেন যে আমি তা
লিখলেই সে কবিতা হয়ে যাবে নকল!


তাই কবিতা লিখে যে প্রসিদ্ধ হব সে সুজোগই যে আর নেই।
তবুও কবিতা লিখছি। উপনিবেশবাদ নেই, পরাধীনতা নেই,
স্বাধীনতার যুদ্ধ নেই, বিজয়ের মাস দিন তারিখ  কি আর
দুটো হয়! হয় না। তবুও কবিতা লিখছি। স্বাধীনতা পেলে
আবার কি স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়, হয় না। তবুও কবিতা লিখছি।
দেশ পেলে পতাকা হয়, জাতীয় সংগীত হয়, নতুন করে কি
দেশ হয়, জাতীয় সংগীত হয়?  হয় না। তবুও কবিতা লিখছি।


বালখিল্যতায় কবিতা এখনও  লিখছি। তবে সে কবিতা ভালবাসার,
প্রেমের, বিরহের। হাসি কান্না আর মান অভিমানের, অপেক্ষার
আর তালাকের। শুধু প্রেম নয় সম্পত্তি ভাগাভাগির। তবুও ভাবি
এমন কবিতা লিখে প্রসিদ্ধ হতে গেলে কি ডিজিটাল ভাবনায়
এমন কবিতা লিখবঃ
- তোমার এনরোয়েড মুঠো ফোনের আলোকিত স্ক্রীনে
গিয়ে ভাসে আমার ঠোঁটের নিত্য যে চুমু, তুমি তাকে
ওষ্ঠে জিহবায় চেটে চেটে নিও আর অনুভব করো
আমার কামনার স্বাদ!
- মেঘ ভাংগা বিকেলের কি দরকার, রংগীন শার্সিতে
মোড়ানো আয়েসী বেডরুম আছে আমার। চার তলার
পুরোটা জুড়ে সুইমিং পুল। এসো, জলকেলির পোষাকে
জলে ডুবে ছুঁয়াছুঁয়ি যুদ্ধ হবে সময় করে।
- হীরের নেকলেসের জন্য অভিমান করো নাতো ছাই!
অনুরাগও ভালো লাগে না আজকাল। তবে রাগ করে
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে অন্ততঃ একবার ভেবো-
এবার তোমায় পেঁয়াজের গহনা গড়িয়ে দেবো। একদম
পাক্কা ওয়াদা, প্রমীজ!
- মিনি ক্যাসিনোটা ছাদ ঘরে সাজিয়েছি। কাজল ধোয়া
কান্না নয়, পাশে আছে প্রসাধনী আর বাহারী পার্লার।
রঙয়ের আড়ালে  ক্যাসিনোর টেবিলে ইচ্ছে করেই
বন্ধুদের কাছে হেরে যাব। যাতে যৌবন সুধায় ভাসিয়ে
নিতে অচেনা যৌলুসের বিছানায়। রাত্রি বাসটা ভিন্ন
রকমের ফেসবুক বন্ধুদের সাথে  তা না হলে এত অর্থের
কোন অর্থই হয় না।
- জেল খানার ভয়ে কাতর হোচ্ছ কেন? বাইরের উঁচুপাঁচীল
যতই আড়াল করুক পালিয়ে যাওয়া তার চেয়েও আড়াল
করা থাকবে নিজ কৃত কর্মের জঘন্য অপরাধ! টাকায়
কিনা হয়? তাই সময় হারিয়ে বৈধ অবৈধ ভেবে লাভ নেই ,
বরং ভুলকেও ভালোবেসে যাও নির্দ্বীধায় এবং নিঃসংকোচে!