বসন্ত তো বসন্তই। তবু পহেলা ফালগুনটুকু নিয়েই যেন বেশী মাতা মাতি। এ যেন শিশু বসন্তকে  নিয়ে    হলুদ মাখামাখি আর পিদিম জ্বলানো নাচানাচি। আচ্ছা ফালগুন এলে কী হয়, কেমন লাগে শরীর, মনে আর মননে, কেন এমন লাগে? আমার মত সকলেরই কি এমন লাগে, তা টের পায়? নাকি অনেক ভালবাসার বন্ধুটি বলেছে সাজতে হয় আজ তাই সেজেছি,  বোন বলেছে তাই হলুদ গাঁদা খোঁপায় পরেছি, মা বলেছে তাই জেনেছি আজ পহেলা ফাল্গুন। অথচ দেহে মনে তখনও বসন্ত স্পর্শ কেমন করে মনকে নিয়ে যায় কোন পারাবারে তা হয়ত এখনও অস্পষ্ট।  পহেলা ফালগুন যেন শিশু বসন্ত। তাকে নিয়ে  উচ্ছ্বলতায় হারাতে হারাতে ভুলেই যাই এর পরও যৌবনা বসন্ত এবং শেষে বুড়ো বসন্ত তখনও  অপেক্ষায়।  এ অবশ্য আমার একান্ত বিরাগ ভাবনা। বসন্ত তো বসন্তই।


তবে শিশু বসন্তেই শুধু নয় বছর ঘুরে এ বসন্তের সারা সময়ে আমার শ্রম বেচা মনটা হয়  ফুরফুরে, উচাটন কোন প্রেমের ধাক্কা লাগে মনের  দেয়ালে, কানে ভেসে বেড়ায় ভালবাসা সংগীতের আলাপন, শব্দ, সুর, ছোঁয়া। চোখ ভরে লেগে থাকে ভাললাগা আলগা বিস্ময়। তখন কাকে যেন কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। কাকে কাছে পেলে বেশী ভাল লাগত? ভাবনারা জমতে থাকে। নাকে এসে জমে  থাকে অচেনা মিষ্টি গন্ধ। কে জানে এ গন্ধ কার। ভাবি- কেমন হয় প্রেয়সীর চুলের গন্ধ, তার বুকের গন্ধ, কাছে থাকা উষ্ণতার গন্ধ। অথবা এমন গন্ধরা কি শুধু বসন্তেই উঁকি দিয়ে যায় বার বার, নাকি আমিই পথহারা হই ভেতরে ভেতরে। আমি গন্ধ নিয়ে তাই অন্ধ হয়ে যাই প্রকৃতির সীমাহীন রঙ্গিন মৌসুমী আড্ডায়।


নিজেকে দাঁড় করাই আয়নার সামনে। ভুলে যাই বিগত হাঁড় খাটুনি শ্রম বিক্রির ধকল, ভুলে যাই  মনমালিন্য, ভুল বুঝাবুঝি আর মিথ্যে অভিমান নিয়ে পুষে রাখা দুঃখ কষ্টকে। অবলীলায় ঝাঁপ দিই অনুরণিত অচেনা সুখের সাগরে। তলিয়ে যেতে থাকি গভীর থেকে অনেক গভীরে। তল পাই না, হারিয়ে যেতে যেতে তবুও চোখ বুঁজে থাকি।  চোখ খুলতে ভয় হয়। খুব ভয় হয় যদি সুখ পালিয়ে যায়, যদি ফুল ফোটা বন্ধ হয়ে যায়, যদি পাখিরা গান থামিয়ে দেয়, যদি প্রেয়সী এসে ফিরে যায়। ফিরে যায় গন্ধরা, ফিরে যায় শরীর মন জুড়ানো ফাল্গুনি বাতাসেরা, ফিরে যায় ঝরা পাতাদের বাসন্তী রাগিণী। আমি তাই জেগে জেগেও ভেতরে বসন্ত রাগের সাথে কখনও চোখ মুদে, কখনও ঘুমের ঘোরে ঘুরে বেড়াই, কথা বলি, গান গাই। আলোর হাত ধরে আবার অতল থেকে ভূতলে গড়াগড়ি দিই। বসন্ত বলে কথা।  


আর ভাল্লাগে না, মুখ গুমরো করা মেঘালী আকাশ কেমন গ্রীষ্মের অস্থিরতা নিয়ে তাড়া করছে   আজ এই ঘোর বসন্তকে। শিশু বসন্তের অবসানে ভাল লাগার চঞ্চলতা ফুরোতে না ফুরোতেই কেমন যৌবন পেরিয়ে বুড়ো বসন্তের প্রকৃতিতে আজ খেয়ালিপনা বৃষ্টি নেমেছে। শ্রাবনীয় প্রথম বৃষ্টির মত এ বৃষ্টির সাথে কেমন যেন মনটা ভিজতেও চাইছে না। এখনও যে অনেক বসন্ত সময়  হাতের নাগালে। বসন্ত তো বসন্তই। কোথায়  মনের মানুষটিকে নিয়ে  কবোষ্ণ মিষ্টি রোদের সমুদ্রে হাবুডুবু খাব,  বসন্তের শিহরিত বাতাসে আবেগী  আলাপনে মাখামাখি করব ঘর ছাড়া উদোম শরীরে, কোথায় ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে কোন মুকুলিত আমগাছের ছায়ায় করব অভিসারি খুনসুটি, তা না- আজ বৃষ্টি এসে নিরামিশ বিরহ উননে শীতলতার জিহ্বায় চাটছে দীর্ঘ অপেক্ষারত প্রেয়সীর উষ্ণ প্রেম!