এবার বিদ্রোহী নয় বিরহী হব। একটা বিরহী চাঁদ হতে খুব ইচ্ছে হয় এখন। দেখি প্রেমিক প্রেমিকেরা দূরাকাশের ঐ বিরহী চাঁদকে খুব ভালোবাসে। তাকে অপলক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে। দেখে মানে কি?   রীতি মত খুঁজে বেড়ায় রাতের অন্ধকার ঘিরে ধরলে চারিপাশ। তারপর কত কাব্য লিখে, গান গায়, প্রিয়ার মুখের সাথে তুলনায় কখনও চাঁদের সাথে কথা বলে, মান করে, হাসে, কাঁদে, আর ভালোবাসে কেবল ভালোবাসাবাসি।


বিদ্রোহীদেরকে কেউ কেউ লক্ষে অলক্ষে ভালোবাসলেও সকলেই ভালোবাসে না। বিদ্রোহী মানেই তো  গলা উঁচিয়ে উচিত কথা বলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, একই মনের লোক খুঁজে বেড়ানো। নয়ত নীরবে হলেও কলমের ভাষায় কথা বলা।  তাতেও ভয়, গ্রেফতারের ভয়, প্রান নাশের ভয়, সম্মুখে পা বাড়ালেই পা হারানোর ভয়। তখন চলার পথ হয়ে যায় ঠিকানা বিহীন। আর সব চাইতে বেশী ভয় হয় তোমার। তখন আমি খুঁজে বেড়াই আমাকে তুমি কি হিসেবে দেখলে বেশী খুশি হতে?


এবার কৃষ্ণ নয় কৃষ্ণকলি রাত হব। একটা নয় বরং অনেকগুলি বিরহী রাত, যারা গোপীহীন আমার শিয়রে অপেক্ষা করবে আমার সাথে মিশবে বলে। অবশ্য তখন প্রেমে পড়া ভালোবাসার মানুষটি আমার প্রেমের পাগলামোতে আমায় ছ্যাঁকা দিয়ে চলে গেছে এমন হলে খুব ভাল হয়। ঘরের আলো যাবে নিভে, দরজায় দেয়া থাকবে খিল। শুধু খিল খোলা থাকবে বিরহী মনের জানালার। খিল খোলা থাকবে দু’চোখের পাতার। কান্নারা গড়িয়ে গড়িয়ে ভেজাবে বুকের জমিন। সে জলে জন্ম নেবে বেদনার চারা। দেখব তাতে কার ভুলের কতগুলো ফুল অথবা কাঁটা জন্ম নিল!


ভিরু প্রেমিককে কেউ ভালোবাসে না।  ভিরুতার যন্ত্রনা কেন বুকে তার খোঁজও কেউ করে না। তখন   ভালোবাসা- মনের আকাশে উদিত সুখ তারা নয়, কেবল খুঁজে বেড়ায় পায়ের নীচে অস্তিত্বের জমিন। তাই তো ভাবি ভালোবাসা নিঃস্বার্থ হয় কি করে? যারা বলে ভালোবাসা নিঃস্বার্থ- তারা মিথ্যুক, তারা বিরিহী রাত চেনে না, তারা দু’চোখে কান্নার ভাষা বুঝে না, তাদের বুকে জন্মও নেয় না বেদনার চারা গাছ। বরং ভিরু মনের তারাই, ভিরুতা সে সব প্রেমিক প্রেমিকারই গপোন লব্ধ ক্লিষ্ট্তায়!


এবার পাহাড় নয় ঝর্ণা হব। কেননা একটা স্রোতশ্বিনী বিরহী নদী হতে খুব ইচ্ছে করে। পাহাড় কেমন দূরদেশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। কাছে আসে না। অথচ নদী, কত মাঠ, প্রান্তর, জনপদ পেরিয়ে কাছে আসে। তার বিরহী জল সে নিজেই বয়ে নিয়ে বেড়ায়। সে জলে নৌকা চলে, লঞ্চ চলে, স্টীমার চলে, কত মানুষ তার আপন জনের কাছে ছুটে যায়, কতজন বিরহী নদীর ঘাটে উদাস চেয়ে থাকে তার প্রিয় জনের জন্য। আমারও ইচ্ছে করে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো ঘাটে বসে আমার অপেক্ষায়। যেন এক সাথেই পার হোই নদী। যেমন করে সকলেই চায় তাদের জীবন নদীর ঠকানা।


০৫ অক্টোবর, ২০২০।