ঘুম আসবে কি করে বল, অথচ ঘুমটাও ভীষণ প্রয়োজন।
আশেপাশে কত কি ঘটছে। সিনহা হত্যা আর সিনাই পাহাড়ে  
বরফ গলা অথবা ছিন্ন পাতায় আলগা বাতাসের শিহরণ আর
শিপ্রা বয়সীদের বালখিল্যতা নাকি সমাজে হাওয়া বদলের
ডিজিটাল জীবন চিত্র! এ সব ভাবতে ভাবতে ঘুম আসছে না।
নাকি আমিই ঘুমাচ্ছি না?


সেটাই যে ঠিক তা বলি কি করে। আসলে নিজের জীবনেও তো
কত কি হত্যা করছি প্রতিনিয়ত। অথবা হত্যা হতে দেখছি।
এই যে আজ বয়সটা বেড়ে গেল দেখে উদোম মাঠে চিত হয়ে
শুয়ে থেকে রাতের আকাশে চাঁদ তারাদের সাথে কথা বলব;
সেটা হচ্ছে না। তাই ইচ্ছেটাকে হত্যা করতে হল।


প্রান খুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেব, একটা প্রজাপতির সাথে  
উড়তে উড়তে গাছের সাথে, ফুলের সাথে, কাঁটার সাথে, বাকলের
সাথে কথা বলব; বলা হচ্ছে না। মাথায় কতগুলো অসম্পূর্ণ
অথবা অঘটনের সালতামামি এমন হারামী যন্ত্রনায় দগ্ধ করছে
আর প্রতিনিয়ত হত্যা করছে মনের ইচ্ছা আর স্বপ্নগুলোকে।  
তাতে ঘুমাব কি করে?


এই ধরঃ
-বউটা বাতের ব্যাথায় কোঁকাচ্ছে, হাত-পা আড়ষ্ঠতায়
বিছানাগত প্রায়। ফলে বাসার জানালায় দেয়ালে ঝুল
পড়েছে, টয়লেটের টাইলসে আইরন পানির রঙ ধরেছে,
-বড় মেয়েটার চাকুরী থেকেও নেই, ঘটা করে বিয়েও
দিয়েছিলাম একটা, জামাই ভাল না তাই ছাড়াছাড়ি।
এখনকার ছেলেমেয়েদের বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে এই এক
কেমন যেন চারিদিকে হত্যার হোলি খেলা চলছে।
মাঝে পিষ্ট হচ্ছে বাবাদের প্রয়োজনীয় ঘুম!
-ছোট মেয়েটার পড়া শেষ হতে চায় না। তাতেই আবার  
বাধ সেধেসেছে মহামারী করোনা। ডিজিটাল স্ক্রীনে
পড়াশোনায় বসে সমাজের অসংগতিতে নিজের প্রকৃত
সত্তার আর নৈতিকতার হত্যা হচ্ছে কতটূকু প্রতিদিন
কে জানে। দেখি তো কত অসভ্য তথ্য আর ছবি ভেসে
বেড়ায় ডিজিটাল জীবনে।
-আর ছোট ছেলেটা কবি হতে চায়। মা বলে মরার কপাল!
এক কবি নিয়ে জীবন জ্বলেপুড়ে ছারখার হল, ছেলে
বলে কি? তুমি ডাক্তার হবে। বাবা হয়ে মনের চাওয়াটা
হত্যা করে বলিঃ তুই ইঞ্জিনীয়ার হবি। অথচ মন তো
বলে ছেলে কবি হোক, বাবার মত কবিতা লেখুক!
-শুভাকাংখি হয়ে কোন বন্ধু কথা বলতে চায় না। আমার
মত মুখফুটে না বললেও তার ঘরেও যে কোন না কোন
হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ঘুম তারও নেই। কিন্তু সত্যটা
বলে না। আসলে বলতে চায় না। বলে কি লাভ। সব ভুল
ব্যাখ্যায় ভরা। একটা মেয়ে সমব্যথী হয়ে মেশে বন্ধুর মত।
অথচ বলা হল সে পরকীয়া করে। এই শব্দ ছাড়া প্লেটনিক
ভালোবাসায় কি মরমিয়া বন্ধু থাকতে পারে না?


তাই আর ইচ্ছে করে না জানতে প্রদীপ গংয়েরা আজ কতগূলো নীরিহ
প্রান হত্যা করল ক্রস ফায়ারের ধোঁয়া তুলে, ইচ্ছে করে না পড়তে কতগুলো
নারী আজ ধর্ষিত হল, শুনতে ইচ্ছে করে না আজ কোভিড-১৯ এর
করোনা ভাইরাস হত্যা করল কতগুলো নারী-পুরুষ, জানতেও চাই না কতগুলো
মামলা আজ নিরপেক্ষতার জন্য ন্যায়বিচারের অভাবে খুন হল, কতগুলো চোখ
কষ্টের কান্নায় ভেসে নদী হল? কারন নিজেই যে প্রতিনিয়ত খুন হয়ে
যাচ্ছি, আর হত্যা করছি অনেক সাধ, আহ্লাদ, স্বপ্ন আর চাওয়া। তাই
ঘুম নেই চোখে।



২৩ আগষ্ট, ২০২০।