ভালবাসার নীল খামে ছিল গোলাপী আঁধার চিঠি। তাতে ছিল লেখালেখি, পড়াপড়ি, উড়াউড়ি। আসলে পড়াপড়ির  জন্য চিঠি উড়ে যেত অথবা উড়ানো হত স্বপ্নের পাখায়। প্রেয়সী তার ঝুল বারান্দায় হরকরার পথ চেয়ে দিন গুনত। প্রতিক্ষার অবসানে দরজায় খিল এঁটে চুম্বনে চুম্বনে ভরাত চিঠির পাতা। তারপর নরম পদ্মবুকে সে চিঠি লুকিয়ে রেখে অনুভব করত প্রিয় মানুষের উষ্মতা, আদর আর অকৃত্রিম ভালবাসা।
এখনও আদর হয়, ভালবাসা হয়, প্রেম হয়, চুম্বন হয়। তবে সব আলোর পাতায় নির্ধারিত সাজানো গুছানো। এ যেন  লেখালেখি নয়- ইথারে পাঠাপাঠি, পড়াপড়ি নয়- আলোর পর্দায় দেখাদেখি। ভালবাসা নিয়ে বলবে? লিখা আছে শুধু ইথারে পাঠিয়ে দাও। দুঃখ নিয়ে লিখবে? আগেই লেখালেখি হয়ে আছে শুধু পাঠিয়ে দাও। প্রেমের আদর নিয়ে লিখবা? লিখাই আছে শুধু কষ্ট করে অপশনে পাঠিয়ে দাও।


সেই ভালবাসার জগতে এখন আমিও বাধ্য হোয়েই গা ভাসিয়েছি। পোষ্ট অফিস কি আছে এ পাড়ায় তাওতো খোঁজ রাখিনি অনেক বছর! কিন্তু লেখালেখিটা ভুলে যাইনি বলেই আজও ম্যাসেঞ্জারের পাতায় ভালবাসার চিঠিই লেখার চেষ্টা করি। বাংলিশ নয় একেবারে বাংলা অক্ষরে লিখি- “তোমাকে ভালবাসি”, কিন্তু সাথে হয়ত হৃদয় চিহ্নের “ইমুজি”টা গুঁজে দিতে ভুলি না। অভিসারের কথা লিখে স্থান আর সময়টা দিতেও ভুলি না ছন্নছাড়া হব না বলে।

ম্যাসেঞ্জারে যখন কিছু লিখে তোর মোবাইলে পাঠাই, যখন দেখি তোর ছবিটা গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে যায় তখন বুঝি সদ্য পাঠানো আমার লেখাটা তুই পড়ছিস, মনে হয় তুই এখন কথা বলতে বলতে গড়াগড়ি দিচ্ছিস আমার বুকে, তখন যে কি ভাল লাগে তা তোকে বলে বুঝাতে পারব না। অনুভবে এমন গড়াগড়িও যে কত মধুর, প্রানবন্ত, কত যে প্রেম আর ভালবাসার ছোঁয়ায় জড়িয়ে থাকে সমস্ত শরীর আর মন, তা আমাকে টের পাইয়ে দিয়েছে প্রতিদিন তোর অভিমান করে অনেক দূরে চলে যাওয়া।


এ জন্যই একটা কথা লিখে বার বার আলোর পর্দার দিকে চেয়ে থাকি আর ভাবি এই বুঝি তুই গড়িয়ে এলি আমার এই শুন্য বুকে আমাকে জড়িয়ে ধরতে। এমন করে গড়িয়ে এলেও মনের অভাব তো গড়ায় না, আদর আর ভালবাসার অভাব তো গড়ায় না। চুম্বনের স্বাদ তো গড়ায় না। এখন ভাবতে পারিস কেন আমি এখনও চিঠির আফসোস বুকে ধরে তবুও আলোর পাতায় খুঁজি তোর প্রেম।


ভালবাসার নীল খামে গোলাপী আঁধার চিঠি লেখালেখির মতই আলোর পাতায় ম্যাসেঞ্জারে বুঝে নিই কি ভাবে ভাবনারা গড়ায়, আদর গড়ায়, কথারা গড়ায়, হাসি কান্না গড়ায়, সুখ দুঃখ গড়ায়, মান অভিমান গড়ায়, ভালবাসার মানুষ গড়ায়।কেমন করে ভালবাসার মানুষের বুকের মধ্যে গড়াগড়ি হয় অনুক্ষন। যেখানে রাত নামে,  ঘুম নামে, সকাল হয়, দুপুর হয়, কুয়াসা সুর্য উঠে জমানো অভিমান রাংগাতে, সন্ধ্যা নামে তার পর আবার উষ্মতার একটি রাত। কখনও স্বপ্নের মধ্যে দেখি গড়িয়ে যাচ্ছি তোর অকৃত্রিম ভালবাসার মহোনায়।

কিন্তু ভয় কিছুতেই গড়ায় না, গড়াতে চায় না, সময় গড়ায় না, কেমন স্থির হয়ে থাকে আশা আকংখার দোলাচালে। আসলে দূর হতে ম্যাসেঞ্জারে প্রেম তো কেবল সাজানো কিছু লুকোচুরি গল্প আর প্রেমের আলাপ বলেই মনে হয়। কি হবে যদি কোনদিন অনেক সাজানো গল্পের দাবী নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াস। তাই ভয় হয়, অনেক ভয়- ভালবাসার এ জীবন থেকে তোকে হারানোর প্রচন্ড ভয়! তবুও তো ভাল যে হারানোর ভয় উপেক্ষা করে তোকে ম্যসেঞ্জার এখনও গড়িয়ে গড়িয়ে পাই একান্ত ভালবাসার জগতে।