শতভাগ বলে যতই বলি আসলে কি শতভাগ পূরণ করা সম্ভব? সম্ভব নয়। এ সম্ভাবনাটা অদৃশ্য  কোন পরম শক্তির কাছেই যেন ন্যাস্ত। তাই বিজ্ঞাপনে প্রচারিত শতভাগ জীবানু ধ্বংসের কথা বললেও দেখা যায় একটা জীবাণু তবুও নড়ছে। কারণ কেউ স্রস্টার মত হতে পারে না। তাইত আজকাল বলা হয় নিরানব্বই দশমিক নয় নয় শতাংশ। ঐ যে অসম্পূর্ণতায় অনুভগ্নাংশটুকু যে রয়ে গেল- ওটাই হল অদৃশ্যের কাছে সমর্পণ। ওখানেই পরম শক্তি বিজারিত।


এই যে শতভাগ ভালবাসার কথা বলি, আসলেই কি কাউকে শতভাগ ভালবাসা যায়? প্রসংগত যুক্তিতে তা যায়  না। তবে এও তো বলা যায় বস্তুগত সংখ্যায় যুক্তি খাটলেও আবেগের পরিসংখ্যানে যুক্তি হয়ত অচল। তাই ভালবাসা আর প্রেমকে পরিসংখান দিয়ে পরিমাপ করা কঠিন। তবুও শতভাগ ভালবাসাটা হল অন্ধের মত কাউকে ভালবাসা। এ ভালোবাসাতেও সুখ আনন্দ তৃপ্তির সাথে অতৃপ্তি এবং দুঃখ কষ্টও বিরাজমান। তবুও ভালবাসাটাই শুধু মূখ্য বলে অন্ধত্বের কাছে তা সদা উপেক্ষিত।


কখনও মনে হয় অন্ধের মতও ভালোবাসতে শিখলাম কোথায়। অথবা এই যে অনেকে ভালোবাসাবাসি করছে তাদের ভেতরেও তো দেখছি না অন্ধের মত শত ভাগ ভালোবাসা। তাইত এখন আর জন্ম নেয় না রোমিও-জুলিয়েট, শিরি-ফরহাদ, লাইলী-মজনু , রাজলক্ষ্মী-দেবদাস, রাজা এডওয়ার্ড-ওয়ালিস সিম্পসন কিংবা হাসনরাজা- পিয়ারী। এখনকার প্রেম বড্ড হিসেবের! সকালে কি পেলাম, তার পর দুপুরে? দুপুর  গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যা মাড়াতেই রাত্রিতে কি পেলাম জমা-খরচের খাতায় এমন দেনা-পাওনার হিসেব।


অথচ সব কিছু এক জনমে পাওয়া যায়? অর্থাৎ সব কিছুর শতভাগ এক জনম কেন, শত জনমেও পাওয়া যায়? যায় না। বা বলা যেতে পারে পাওয়া সম্ভব না। তাহলে যে স্রস্টা উপেক্ষিত হয়। স্রস্টাও যে বাস্তবের চেয়ে অনুভবের এবং আবেগের। তাইত যুক্তি দিয়ে বা পরিসংখ্যান দিয়ে নয় বরং অন্ধের মত ভালোবেসেই তাকে পেতে হয়। আর এই পাওয়াটা দুপুর গড়ানোর আগেই যদি শেষ হয় সকালের পাওয়াটুকু নিয়ে অথবা রাত্রি আসার আগে দুপুরেরটুকু পেয়ে সেটাই যেন হয় বড় পাওয়া।  


আর প্রকৃত প্রেম ভালোবাসায় কি শুধু একটি সকাল, একটি দুপুর, একটি সন্ধ্যা কিংবা রাত্রি নিয়ে ভাবলে চলে? বরং যতটুকু পাওয়া তার শিহরণটুকু নিয়ে হাজার সময়ের অপেক্ষাই যে অন্ধের ভালোবাসা। সেখানে কে কি ভাবে তাকে দেখল, কে কি ভাবে তাকে ভাবল, কে কি ভাবে তাকে কলংকিত করল তা নিয়ে ভাব্বার সময় কোথায়। অথবা নাইবা থাকল সেখানে শত ভাগ পাওয়া সব কিছুতে। তবুও যাকে ভালোবাসি তার সুখ আর আনন্দটাই হোক ত্যাগের মাঝে সময়ান্তে বয়স্ক শেষ পাওয়া না হোক তা শত ভাগ।    


১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯।