অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে মনের মধ্যে তোমায় নিয়ে গড়েছি ভালবাসার এক নিরাপদ ফ্যাক্টরী। সে ফ্যাক্টরীতে  কত কি উৎপাদন হয়ঃ মান অভিমান, রাগ অনুরাগ, হাসি কান্না, বিশ্বাস বিষন্নতা, বিরাগ বিরহ, পাপ পুণ্যি, আরও কত কি। সে যাই উৎপাদন হোক না কেন- তার সংখ্যার চেয়ে গুনগত মানের  প্রতিই লক্ষ্য থাকে বেশী। অনেকের মত মুখে বলা নয়, এ ফ্যক্টরীতে আদতেই কুয়ান্টিটি নয়, কুয়ালিটিই পায় প্রাধান্য সর্বাগ্রে। তুমিই বলতেঃ হোক উৎপাদন অল্প, কিন্তু তা যেন হয় গুনগত মান সম্পন্ন। তবু অনেক অভিযোগ জন্ম নিত প্রতিনিয়ত।  


সেদিন তুমি যখন রাগ করছিলে, তখন তুমি ভুলেই যাচ্ছিলে তোমার মুখোমন্ডল কেন গোধূলীর রংগে ভাসছিল। তুমি ঘেমে ঘেমে যাচ্ছিলে। ঘাম হলে তুমি অস্থিরতায় ভুগো। ভাবো তোমার প্রেসার বেড়েছে কিনা? আসলে প্রেসার সকলেরই বাড়ে। আকাশের প্রেসার বাড়ে, বাতাসের প্রেসার বাড়ে, প্রকৃতির, মাটির, মমতারও প্রেসার বাড়ে।  ভালবাসার ফ্যাক্টরীরও প্রেসার আছে, প্রেসার বাড়ে। ভালবাসার ফ্যাক্টরীর প্রেসার  বাড়লে নীরব হয় চারিদিকের শ্রম ঘন্টার কোলাহল।  


আট ঘন্টার শ্রম। কিন্তু ওভার টাইমে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টায় গিয়ে দাঁড়ায়। তবু প্রেসার কমে না। আর ভালবাসার ফ্যাক্টরী হল রেজিমেন্টাল। এ ফ্যাক্টরী কখনও বন্ধ হয় না। আমার এ ভালবাসার ফ্যাক্টরীর তালা খোলার পর এর চাবি ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে বুড়িগঙ্গার উতলা বুকে। চব্বিশ ঘন্টাই  ভালবাসার ফ্যাক্টরী চলে, উৎপাদন হয়।  তাই স্বপ্ন  নিয়ে রাত আর সম্ভাবনা নিয়ে দিন কাটে। তোমার পথ চেয়েই দিন কাটে বেশী। ইচ্ছে করে জানতে  তুমি কি করছ? তাই জিজ্ঞাসাও করে বসি  অন্ধ ভালবাসার দায়ে। অথচ কাজের ব্যস্ততায় কুশলাদি জজ্ঞাসা নিয়ে তুমি যেদিন বারন  করলে সেদিন থেকে সে আকুতির হয়েছে  অপমৃত্যু।


আজকাল কি তুমি বিষন্নতায় ভুগছ? আমি বেশ টের পাই তোমার উদাসীন ঘর কুনো আড্ডা। আমি দেখতে পাই তুমি কি ভাবে বাড়ির সদস্যদের সামনে লুকাচ্ছ চোখের পানি। ভালবাসায় কান্না আছে, জেনেছি কান্নাকে ভালও বাসতে হয়। তা না হলে নাকি ভালবাসাবাসি হয় না। কিন্তু  ফ্যাক্টরীর  মধ্যে কান্নাকাটি কেউ প্রস্রয় না দিলেও ভালবাসার ফ্যাক্টরীতে কাঁদতে মানা নেই। তুমি শিশির বৃষ্টি ধারায় কাঁদ আর সারেঙ্গী মুর্ছনায় কাঁদ, কেউ তোমাকে বারন করবে না। তবে জানতে চাইবে। তোমার শব্দ কান্না তো আর শোনা হয় না, তাই তোমার ভেজা চোখে তাকাতেই তুমি  এড়িয়ে গেছো চোখে অসুখের কথা বলে।


আজকাল কথা বলাও হয় না আর আগের মত। কথারা জিহ্বায় এসে বেশ ঠেলা ঠেলি করে গাল ভর্তি। কিন্তু স্বাক্ষ ছাড়াই তোমার অবুঝ মামলায় কথারা দাঁড়ায় কাঠগড়ায়। দায়ী করা, দোষ দেয়া, অভিযোগ করা, সন্দেহের জন্ম দেয়া বিভিন্ন উপেক্ষায় তারা জড়োসড় হতে হতে লুকোতে চায় অভিযোগ বাক্সে। তাই বিরহের কষ্ট নিয়েই দূরে সরে গিয়ে চলে যেতে চায় নির্বাসনে। তবু মায়া, এ যেন কি এক অদৃশ্য ভালবাসার টান। চব্বিশ ঘন্টাই মনে পড়ে প্রতিদিনের উৎপাদন। মনে পড়ে সাথে জন্ম মৃত্যুর কথা। মৃত্যু অবধারিত জেনেও কেন যে এত অভিযোগের কষ্ট নিয়ে বাঁচা। ভাল লাগে না ভাবতে। তাই উপেক্ষিত হয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কোন্‌ ঘৃণায় কথারা হয়েছিল মূক!  


এত খোলা নীতি, এত শূন্য  সহনশীলতা, এত নিয়ম শৃঙ্খলার বন্দনা, অনুশীলন, প্রেষণা। তবু অভিযোগ বাক্স কেন  ফ্যাক্টরীতে! তুমি নিজে থেকেই বলতে ক্যালিপার্স স্কেলে অথবা নিক্তি পদ্ধতিতে কি আর ভালবাসাবাসি হয়। ভালবাসার ফ্যাক্টরীতে ভালবাসতে লাগে ত্যাগ, ভালবাসতে লাগে বিশ্বাস, লাগে সম্মান, শ্রদ্ধা, কুয়ালিটি। ভালবাসতে লাগে কলংক উপেক্ষার সাহস, লাগে সম্মুখে দীপ্ত পায়ে চলার শক্তি, লাগে ভক্তি, লাগে অপবাদের শৃংখল মুক্তি। তা না হলে সব   কিছুকেই মনে হয় পাপ। ভালবাসলে পাপকেও পুণ্যে ভরে তুলতে লাগে পবিত্র মন, মনন আর মরমীয়া। অথচ ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যেদিন অভিযোগের বাক্স খুললাম, দেখি তাতে অনেক সরলতার ভীড়ে পড়ে আছে অযত্নে তোমাকে দেয়া আমার অনামিকা আংটি।