বয়সটা বোধ হয় বেড়েই গেলো। যদিও কবির ভাষায়-
“ সবাই বলে বয়স বাড়ে,আমি বলি বয়স কমে”।
ভাবগত ভাবে একেও এড়ানো যায় না। কিন্তু এর চেয়ে
বয়স বেড়ে গেলো বলতেই বেশী ভালো লাগে।
তো যা বলছিলাম। সেদিন চোখে  চশমা রেখেই সারা
ঘরময় চশমা খুঁজে বেড়াচ্ছি। বাড়ি প্রায় তোলপাড়।
আমার চশমাটা কোথায়, চশমাটা কেন পাচ্ছি না,
আজ আবার অফিসটা দেরী হয়ে যাবে। দেখতে হবে
অফিসের বসের শীতল দৃষ্টি!


এক সময় দেখি, মেয়ে আমাকে দেখে হাসছে, বউয়ের মুখে  
হাসি নেই বরং আমার হাত ধরে টেনে হেঁচড়ে ড্রইং রুমের
সোফায় নিয়ে বসিয়ে বলে- চশমা তো তমার চোখে।
আমি এবার লজ্জা পাই। ভাবি বয়সটা বেড়েই গেলো।
জীবনের আর ক’টা দিন বাকী! মেয়ের হাসি স্বাভাবিক
এটা ভেবে যে, বাবা কি বেখেয়ালি। কিন্তু বউয়ের চেহারায়
অস্থিরতা এবং দুঃশ্চিন্তা প্রকট। মেয়েটার লিখা পড়া শেষ
হল না, এখনও বিয়ের বাকী। আমার যদি কিছু হয় তাহলে
কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারা। বউয়ের মুখে তাই আর
কোন কথা নেই। কেবল অনিশ্চয়তার কষ্ট, মনে ভয়  
আর বিষণ্ণতার মৌনতা।


এবার বয়সটা বোধ করি বেড়েই গেলো। বয়স বেড়ে
গেছে বলে সকলেই মুখে না বলা মৃত্যুটাকেই ইঙ্গিত
করে বেশী। তা না হলে বয়স বেড়ে গেছে বলে কারো প্রাপ্য
অধিকারটুকুর দাবীই হত বেশী। আমি তাই অধিকার নিয়েই
দাঁড়াতে চাই। কিন্তু অফিসের বসের চোখে আমি বৃদ্ধ
মানুষ, আমার দ্বারা আর কোন প্রডাক্টিভ কাজ হবে না,
কেবল অফিসের ফাইল মাফিক ক’টা চিঠি লিখা,
কোন মিটিং এ বসে ঝিমুতে ঝিমুতে চায়ে চুমুক দেয়ার
ফাঁকে ইয়েস স্যার, নো স্যার বলা, ব্যাস!


আমিও কারনে অকারনে আজকাল তাই  দুঃশ্চিন্তায় থাকি।
ইদানিং আমার অনেক কাজে ভুল হয়ে যাচ্ছে। এইত সেদিনও
মোবাইল ফোনটা আমার ট্রাউজারের পকেটে রেখে সারাটা
জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছি। এবার কাউকে না বলে পারকিং এ
চুপি চুপি গাড়ীর দরজা খুলে ড্যাশ বোর্ড, সিটের নীচে, উপরে  
হন্ত দন্ত হয়ে খুঁজতে থাকি। কোথাও না পেয়ে আবার বাড়ি
মাথায় করা। এবারও বউয়ের চোখে শঙ্কার জল, বুকে অস্থিরতা।
আবার একটা মোবাইল কিনতে হলে মাসের হিসাব থেকে
বেশ কিছু টাকা খসে যাবে।আগামি মাসের দিন খসবে কি ভাবে?


মেয়ে বলে- বাবা মায়ের মোবাইল ফোনটা দিয়ে তোমার নাম্বারে  
একটা মিস কল দাও না! দেখি ঠিকই মোবাইলটা আমার পকেটে।
মেয়ে এবারও হেসে খুন। বাবা তার কি বোকা আর আত্মভোলা।
কিন্তু বউ তাদের আগামি ভয়ংকর দিনের কথা ভেবে শঙ্কিত, আঁচল  
টানা চোখ ছল ছল। মায়ের কষ্ট দেখে মেয়ে এবার বলে- বাবা দুটো
করে চশমা আর মোবাইল রাখলেইতো পারো। আর মা বলে-
দুটো করে চশমা আর মোবাইল রাখলেই কি আর আগামী
সমস্যার সমাধান হবেরে মা! মেয়ে বলে কেন- হবে না কেন?
আমি বলি মা রে, সব কিছু দু’টো করে হলেও বাঁচার জন্য  
বাবা কি আর দু’টো হয়? বয়সটা বোধ হয় বেড়েই গেলো,
এবার সকলেই চুপ!