আমি সারা দেশ জুড়ে ভালোবাসা, সহমর্মিতা,ভাতৃত্ত ও ধর্মনিরপেক্ষতা শ্লোগানের বিলবোর্ড হতে চাই।
আমি কথা নয় উন্নয়নের কাজ নিয়ে অনুপ্রেরণার মন্ত্রে বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনার বিলবোর্ড হতে চাই।
আমি তাই বড় বড় শহরের জনাকীর্ণ সড়ক দ্বীপে আহাজারি আর ফেলে আসা দিনের  নৈতিকতা স্খলনের বিলবোর্ড হতে চাই না।


অথচ আমার গায়ে হল মার্ক, যুবক, ডেসটিনি আরও কত অনাকাঙ্খিত ঠগ মনোগ্রামের স্লোগান সেঁটে থাকে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, গায়ে ফোসকা পড়ে। আমি বলতে পারিনা এরা কি ভাবে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে করল অচল। কেন সখিনার বুকের দুধ শুকালো, কেন কাঁদছে শিশু, কেন যুবকেরা আজ বেকার, কেন মুক্তি যুদ্ধ আজ অভিশপ্ত।


আমি কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি নয়, বরং সম্পর্ক উন্নয়ন আর দেশ প্রেম বোধের উদ্দীপনা নিয়ে বিলবোর্ড হতে চাই।
প্রতিদিন এই মনে যে প্রেম, রাষ্ট্র ভালোবাসা, না বলতে পারা সত্য উচ্চারণ, মৌলিক অধিকার গুমরে গুমরে কেঁদে মরে, আমি সেই অনুভূতির জোরালো প্রকাশের বিল বোর্ড  হতে চাই।  
আমি তাই তথ্য অধিকারের আড়ালে কণ্ঠ রোধ করা গনমাধ্যমের রকমারি কথার বিলবোর্ড হতে চাই না।  


বড্ড কষ্ট হয় যখন দেখি আমার সামনে গাড়ি পুড়ছে, সাধারণ মানুষ গুলি বিদ্ধ হচ্ছে, বোমা ফুটছে। আমার খুব কান্না পায়, যখন দেখি কি ভাবে ভাঙ্গছে সাজানো সংসার, ভাঙ্গছে সম্ভাবনার মুখ্য সিঁড়ি। আমি চিৎকার করে কান্না করি কিন্তু কেউ শোনে না। অথচ আমার গায়ে ছল চাতুরীর রঙ্গিন শ্লোগানের কথায় ভরে দেয়ার জন্য প্রতিদিন কত কৌশল হয়, কখন কেউ গড়ে, কখনও আমাকে ভাঙ্গে, কখন দখল করে আবার কখনও হারায়।


আমি সবুজ বিপ্লবের জোয়ার আনতে তের কোটি নারীপুরুষের বলিষ্ঠ হাতের বিলবোর্ড হতে চাই।
আমি শিল্প কারখনায় উৎপাদন, কারিগরি শিক্ষা, প্রজুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের বিলবোর্ড হতে চাই।  
আমি তাই গার্মেন্টস পাড়ার প্রেক্ষাগৃহে শ্রমিকের বিনোদনের নামে নিষিদ্ধ নারীর পোস্টার ছাওয়া বিলবোর্ড হতে চাই না।


উন্নয়নের বেয়াড়া শ্লোগানের আড়ালে থলে থেকে কালো বিড়াল বের না হলেও কালো টাকারা গন্ধ ছড়ায়। আমি দেখি দেশের বখে যাওয়া কর্ণধাররা বিলাশ বহুল গাড়িতে বসে কালো গ্লাসের আড়ালে মুখ টিপে হাসে। আর বলে হায়রে বেওকুফ জনগন, বিচারের চোখ যে কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ওটা তো তোদেরই চোখ। তোদের কালো কাজল চোখে কেবল জলই থাকে। আর কালো রাত থাকে কালো বিড়ালের নিরাপদ চলাচলের জন্য। এটা আজও বুঝলি না, আফসোস!


আমি সারা দেশ জুড়ে সুশাসন, গনতন্ত্র, স্বাধীনতা আর মানবতা অধিকার উন্নয়নের বিলবোর্ড হতে চাই।
আমি ঘৃণ্য যুদ্ধ অপরাধী রাজাকারের ফাঁসির দাবী নিয়ে উচ্চ কণ্ঠ শ্লোগানের বিল বোর্ড হতে চাই।
আমি তাই আভিজাত্য পাড়ায় অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিপরীতে বাহারি পণ্য বিক্রির নামে অর্ধ নগ্ন অশালীন ছবির বিলবোর্ড হতে চাই না।


আমার কথা কেউ শোনে না, আমার দুঃখগুলো কেউ বুঝেনা। আমার মাথায় পক্ষীকুলের কেউ কেউ ক্ষণিকের জন্য উড়ে এসে বসে, ওদের বিষ্টায় আমার চেহারা পাল্টায় তবুও ভালো লাগে। কেননা ওদের সাথে আমার কথা হয়, প্রতিদিনের কষ্ট কিছুটা শেয়ার করি। নইলে উত্তেজনায় প্রতিদিন বেহুদা কারো মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে নিবৃত্ত করতাম মনের ক্ষোভ। একবার গুলশানে এ ভাবে আত্মাহুতি দিয়েছিলাম।


আমি সোনার বাংলাকে ভালবাসতে কবি গুরু রবি ঠাকুরের গীতাঞ্জলী প্রেরণার বিলবোর্ড হতে চাই।
আমি চির উন্নত মম শির নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী চেতনার বিল বোর্ড হতে চাই।  
আমি তাই সৃজনশীলতার আকুতি বিসর্জন দিয়ে রাত কেড়ে নেয়া উল্লম্ফ নৃত্যের মোবাইল ফোন কল রেটের অসাবধানী বিল বোর্ড  হতে চাই না।


বাতাসের তীক্ষ্ণ ফলা কখনও কখনও ভেদ করে বেরিয়ে যেতে চায় আমার আহত হৃদয়। আমি দুঃশ্চিন্তায় থাকি। তবুও বোশেখের নটী ঝড় আমার খুব পছন্দ। তখন আমি ইচ্ছে করলে অনায়াসে অসভ্য শব্দের কথা আর স্লোগানকে বাতাসে ভাসিয়ে দিতে পারি। নতুন প্রজন্মকে সাথে করে অদূর ভবিষ্যতে আমাকে তা করতেই হবে। যদি না তোমরা আমার সত্য চাওয়াগুলো তের কোটি মানুষের একান্ত দাবী মনে করে একত্রে এক সাথে তা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে সম্মুখে পা বাড়াও।  


আজীবন রক্ত দিয়ে হলেও-
আমি আদর্শ সভ্যতার জন্য স্রষ্টার মহা কাব্যে আলোকিত ধর্মীয় অনুশাসনের বিল বোর্ড হতে চাই ।  
আমি মানবতা উন্নয়নের জন্য সারা মানব শ্রেষ্ঠ মহানবী (সঃ)এর উৎকৃষ্ট বাণীর বিল বোর্ড হতে চাই।  
আমি জাতির পিতা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সকল মুক্তি নির্দেশনার বিল বোর্ড হতে চাই।  
আমি বীর উত্তম সৈনিক জিয়াউর রহমানের জাতি উন্নয়নে বলিষ্ঠ রণ হাতের বিল বোর্ড হতে চাই।
আমাকে তাই বাঁচার মত বাঁচতে দাও। যে বাঁচার আড়ালে মৃত্যু নয় বরং শত শত জন্ম অপেক্ষায় আছে নতুন দিনের আশায়।