তোমার দৃষ্টির রঙয়ের সাথে আমার দৃষ্টির বনেদী রঙ মিশে গিয়ে  
এতো গাঢ় হয়েছে বলেই ছাতিম গাছের ফুলকেও লাগে অসাধারণ!
অসাধারণ লাগে তার গন্ধ আর তার সবুজ বেষ্টিত ভরাট শরীর।  
কেমন থাক থাক করে থরে থরে সাজানো, রুপ যেন উছলে পড়ে
কারো দৃষ্টি কাড়ার জন্য। অথচ আমি অনেক আগেই ছাতিমের রুপে
ঘায়েল হোয়ে বসে আছি এ কেবল তোমার দৃষ্টি- প্রকৃতির অনেক রঙ  
চোখের আলোয় ভরে আমাকে আপন করে গেঁথেছিল বলেই।


তোমার স্বপ্নের সাথে আমার স্বপ্ন মিশে গিয়ে এত নিগূঢ় হয়েছে
বলেই ভীষন ভালো লাগে সবুজ ধান ক্ষেতের বুকে ঢেউ খেলে যাওয়া
ফেরারী বাতাস। পুয়াতি ধান গাছের সবুজ পাতায় লেগে থাকা
প্রভাতের আলোকোজ্জ্বল শিশির দানা আর অজানা মুগ্ধতায় রঙ্গিন
প্রজাপতিদের ডানা মেলে ইতস্ততঃ উড়া উড়ি। তাই স্বপ্নের ধান্য
আঙ্গিনায় দেখি চঞ্চলতা ভুলে উতলা প্রজাপতিও বাতাসকে স্বাক্ষী
রেখে আমায় নিয়ে কি যেন কথা বলে শিশিরের কানে কানে
তোমার স্বপ্নকে ঘিরে।


তোমার চন্দ্রমুখী হাসির সাথে আমার হাসি মিশে গিয়ে এত সুরেলা
হয়েছে বলেই এখনও হারিয়ে যায়নি পল্লী, ভাটিয়ালী কিংবা লালনের সুর,
হারিয়ে যায়নি একতারা, দোতারা আর খঞ্জনের শরীর দোলানো কম্পন।
আবার কখনো শুনি বেহাগী ঠাটে মাদলের আঘাতে নূপুরের নিক্বণ ধ্বনি।
তাই তোমার বিরহী জলসায় এখনো গ্রামীন ঐতিহ্যের হাট বসে, অনেক
দুঃখ্যকে সয়েও সাধারণের মুখে তোমার হাসি লেগে থাকে আমাকে সুখী
করতে। আমি হাসির মধ্যেও অনুক্ষন সেই আদি সুরের মূর্ছনার গভীরে
ডুবে থাকি।


তোমার দুলকি শরীরের পরিনত গন্ধের সাথে আমার গন্ধ মিশে গিয়ে
এত মুখরিত হয়েছে বলেই এখনও কামনায় ভাসে মরা নদী, পাড়ে ফুটে
থাকা শরতের কাশ ফুল আর তার বুকের ঘোলা জলে বেয়ে যাওয়া নৌকোর
পালে বেতসি বাতাস থাকে উত্তেজিত আজীবন। তাই মরা নদী, শুকনো
খাল বিল, সম্ভাব্য ফুলেল বনভূমি বাতাসে মেঘের গন্ধ খুঁজে তোমার গন্ধের
জলে ভিজে মুখরতায় সাজতে চায় সজীবতায়। আমিও শরীরের
সেই গন্ধের ভেতরে হাত পা নাড়িয়ে সাঁতার কাটি পরম উত্তেজনায়।  


এখন তাই যেদিকেই দৃষ্টি দিই তোমাকে দেখি, যা-ই কল্পনা করি তোমাকে
নিয়ে তার স্বপ্ন দেখি, যেখানেই যত শব্দ শুনি সেখানেই ভেসে বেড়ায় তোমার
হাসি, তোমার কথা, গান আর সুর, যা বড়ই আপন, আদি এবং অনন্ত।
যেখানেই বাতাস খেলা করে সেখানেই তোমার শরীরের অদৃশ্য গন্ধ নাকে এসে
লাগে আর নতুন জলে ভরা মরা নদীটির মতই ফিরে পাওয়া স্রোত ধারায়
তোমার মাঝে আমি হোই একাকার।