বন্ধুরা, এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা তোমাদের ঈদ এবং পূজোর শুভেচ্ছাসহ জানিয়ে  গিয়েছিলাম। শহর থেকে ঐ যাত্রা পথে যে বিড়ম্বনা, কষ্ট, দুর্ঘটনা (পথে যেতে যেতে ৩টি জীবন সঙ্ঘারকারী দুর্ঘটনা সেদিন দেখে আঁতকে উঠেছিলাম) এড়িয়ে শেষ অবধি মার বুকে ফিরে যাওয়ার আনন্দ পেয়েছিলাম তার অনুভূতিটুকু শেয়ার করার জন্য এই প্রয়াস। কবিতা হয়ে উঠলো কিনা যানি না, তবে লিখা শেষ করতে পারার আনন্দও কম ছিল না...
---------------------------------------------------
জানি না তোমার কি মনে হয়  


সুউচ্চু পর্বত আরোহনের স্বপ্ন দেখা আর চূড়ায় উঠে নিজেকে বাস্তবে আবিষ্কার
করা এক কথা নয়।একজন পর্বতারোহী এই দুইয়ের মাঝে বিগত পথের
সময়্টুকুতে যেন জীবনকে হাতের মুঠোয় বন্দী করে রাখে, মৃত্যুকে আড়াল করে
অথবা মৃত্যু আর অক্সিজেনের সাথে সন্ধি করে চলতে থাকে দিনের পর দিন,
রাতের পর রাত। এবড় থেবড় উঁচু বন্ধুর পথকে সম্মুখে দেখে পায়ের ধাপ হয়ত
ছোট হয়ে আসতে চায়,কখনো মন সাড়া দিলেও শরীর সাড়া দেয় না, আবার
শরীর সাড়া দিলেও মন সাড়া দেয় না, এখানেও সন্ধি করতে হয় নিজেকে নিজের
সাথে অনুক্ষন হয়ত।তার পর একদিন শিহরিত হয় শরীর, জাপ্টে ধরতে চায়
স্বপ্নের চূড়াকে দ’হাত বাড়িয়ে, চোখে জল নামে শিতল বরফ হয়ে, মৃত্যু ভয় হয়
যেন মৃত্যুঞ্জয়ী সাহস। আমি সেই পর্বতারোহী না হয়েও তার সুখকে অনুভব করি।
কিন্তু বাস্তবতার সে সুখ কেমন, তা কি অনুভব করতে পারি?  


তেমনই সমুদ্র পথে জাহাজডুবি যাত্রির কিংবা কোন নাবিকের মৃত্যুর সাথে
রক্ত পিপাসু ভয়ংকর হাঙর, সমুদ্র ঝড় কিংবা জীবননাশী প্রতিকূল
স্রোতের সাথে যুদ্ধ করতে করতে, দ’হাতে মৃত্যুর জলকে সরিয়ে ভেসে ভেসে
ক্লান্ত পায়ের তলায় যখন ডুব চর কিংবা পাহাড়ের অস্তিত্ত টের পায়, তখন
বেঁচে থাকার অনুভূত অস্তিত্তে যে সুখ ভেংগে পড়ে সারা শরীর ও মন জুড়ে,
আমি কি ভাবে সে প্রানের বেঁচে থাকার আনন্দকে করব
অনুমান?যদিও কল্পনায় তার চিত্র এঁকে দিতে পারি অবলীলায়।


আমি একদিন শহর থেকে দূর গ্রামের পথে দগ্ধ ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে
গাড়িতে ছিলাম বসে, আমার সারা শরীর বেয়ে তখন ঘাম যেন তপ্ত
শিশার ধারা হয়ে নামছিলো মাথা থেকে বুক এবং নিতম্ব হয়ে পায়ের দিকে।
আমি ঠাঁই বসে ছিলাম আর ভাবছিলাম গ্রামে পথ চেয়ে বসে থাকা মায়ের
কথা। ভাবছিলাম ওই পর্বতারোহী, জাহাজডুবি যাত্রি কিংবা নাবিকের কথা।
কি নেশার টানে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় পুরে ছুটে চলে স্বপ্ন চূড়ায়,জীবনের
মায়ায় কি গভীরতার টানে মৃত্যুর মুখো মুখি কোন প্রান মাটি কিংবা
পাহাড়ের অস্তিত্ত খোঁজে। তাই বিরক্ত হয়ে যাত্রা ভঙ্গ করতে চেয়েও পারিনি
বরং এমন ভাবনায় লজ্জিত হয়েছি নিজের অস্তিত্তের কাছে। আর ভেবেছি মাকে
কাছে পাওয়া কি এর চেয়েও বড় নয়। তাহলে সামান্য এ যাত্রার ক্লান্তি কেন
বাঁধন ছেঁড়ার ষড়যন্ত্র করবে। আমি তাই মাকে কাছে পাওয়ার স্বপ্নে প্রতিক্ষায়
অবিচল ছিলাম, ছিলাম উদ্বিগ্ন এবং উত্তেজিত।


তার পর প্রতিক্ষার প্রহর শেষে মা’র কন্ঠে সেই মায়া ভরা আদরের ডাক যখন
শুনতে পেলাম-‘খোকা, তুই এলি বাবা?আয় আমার কাছে আয়, কতদিন দেখিনা
তোকে।এত শুকিয়ে গেছিস কেন বাবা?’ এর পর মাথায় বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে
আদর করতে করতে চোখে জল আসে,আঁচলে মুছে ফেলতে চায় পথে দুর্ঘটনার
দুশ্চিন্তা। আমার বুক ভরে উঠে অহংকারে, বাঁধ ভাংগা আনন্দ বার বার লুটে
পড়ে মায়ের কোলে, মাকে বুকে জড়িয়ে আগলে রাখতে চাই সুখ আর মূর্তমান
মায়ের কোলের সর্গীয় গন্ধ পাওয়ার আনন্দ। তখন ভেবে পাইনা কোন সুখকে
এগিয়ে রাখব আমি, পর্বত চূড়ায় ভয়ংকর আরোহন শেষ করার সুখ, জাহাজডুবি
যাত্রি কিংবা নাবিকের মৃত্যুর মুখো মুখি কোন মাটি কিংবা পাহাড়ের অস্তিত্ত খোঁজে
পাওয়ার সুখ, নাকি ট্রাফিক জ্যামে পড়ে বিড়ম্বনার দগ্ধ যাত্রার পরে গ্রামে পথ
চেয়ে বসে থাকা দরদী মাকে বুকে জড়িয়ে ধরার সুখ? আমি যে কোনটাকেই
খাটো করে দেখতে পারছি না। জানি না তোমার কি মনে হয়!