জেলে মাঝির বউয়ের চোখে লোনা জল উছলায়,
কি জানি কোন মেরুতে বরফ গলছে কি হারে
আর ওমনি নাব্যতা বৃদ্ধি, জল বৃদ্ধি, ফুঁসছে সাগর।
সৈকত ভেঙ্গে প্লাবনে ভাসিয়ে নিতে চায় বাস্তু ভিটা,
ফসলী আবাদ আর সাগরের জলে চিৎ হোয়ে
কূল ঘঁষে পড়ে থাকা একমাত্র সরল ডিঙ্গি।


কোন কথাই মানছে না। গাংচিলেরা এসে জলোচ্ছ্বাসের
আতংকহীন পুর্বাভাস দিয়ে গেছে, সুর্যদোয়ের প্রথম আলো
কপালে চুমু দিতে দিতে বলে গেছে মউসুমী মেঘের শুন্যতার
কথা, জোয়ার ভাটার জল গড়িয়ে চাঁদ বলে গেছে আগের
মতই ফিরে যাবে সাগরের বাড়তি জল প্রকৃতির হৃদয় ভিজিয়ে।


তবুও শংকা কাটছে না। মেরুর বরফ গললেও মনের মধ্যে
আশংকার জমাট বাঁধা বরফ গলছে না বরং আরও কষে
জমছে। তাইতো রাত্রির নিকোষ কালো অন্ধকারও হার মানছে
জেলে মাঝির বউয়ের  চোখের দুই পাতাকে এক করতে,
যে চোখে প্লাবন সে চোখের কাছে ঘুম তো হার মানবেই।


কারনটা এখনও অজানা। জেলে মাঝির বউ সাগরের গর্জনে
কান পেতে শুনতে চেয়েছে প্রপেলের যান্ত্রিক শব্দ, সৈকতের
মাথায় মুকুট হয়ে ফুটে থাকা শোভিত টিলার চূড়ায় উঠে
দু’চোখে আলো আড়াল করা হাত রেখে দূরে দৃষ্টি মেলে খঁজেছে
মাছ ধরা ট্রলারের লাফিয়ে উঠা গুলোই, তবুও মাঝির দেখা নেই।


রেডিও সংকেতও বলে যায়নি আজ ক’টা ট্রলার ডুবি হয়েছে।
তা হলে ফিরবে না কেন খগেন জেলে মাঝি? অথচ যাওয়ার
আগে কথা দিয়েছিল নভেম্বরের এ সময়টায় ডিম ভর্তি পুয়াতি
ইলিশ মাছ তারা ধরবে না। বউ পুয়াতি তাই  বাচ্চার কচি
মুখের গন্ধ মাঝি প্রতিদিন বয়ে নিয়ে বেড়াত আর ভাবত
ইলিশ মাছও তো মা হবে।


লোকটার বুকে ভিষন মায়া। এতো সুন্দর মানুষ কি
হারিয়ে যেতে পারে? মাছের জন্যও যে মানুষটার চোখে
জলের ঝিলিক দিত দেখা, সে কেমন করে তার মনের মানুষকে
ঘরে একা ফেলে আজও ফিরছে না। জেলে মাঝির বউয়ের
চোখে লোনা জল তাই আজ বেপরোয়া, ফঁসছে চোখের সাগর,
গলছে বরফ অথচ বুকের মধ্যে আশংকার জমাট বাঁধা
বরফ গলছে না বরং আরও কষে জমছে দিনের পর দিন।
আর চোখের লোনা জলে জিহ্বা কামড়িয়ে ভাবছে, বাড়তি টাকার
দুষ্ট গন্ধে জেলে মাঝি কি ইলিশ মাছের লোভে পড়েছিলো!