স্যাকুলারিজ্‌ম কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতা, তা যাই বলো, ওটা তোমাদের বানানো শব্দ।  
এ দেশে হাজার বছরের পরম্পরা হল একই সময় সন্ধ্যার হোমানলে বাজছে শাঁখ,
পূজোর ঘন্টা আর মসজিদের মিনার থেকে ভাসছে মুয়াজ্জ্বিনের  আযান। রামাবলি
গায়ে দাদারা ছুটছে মন্দিরে আর টুপি মাথায় ছুটছে ভাইয়েরা মসজিদে। পথে ধাক্কা,
গলাগলি, ঢলাঢলি, আদাব অথবা সালাম বিনিময়। কি অসাধারণ এ আত্মিয়তা যেমন
কাজী নজরুল গাইলেন যেন- ‘একই বৃন্তে দু’টি ফুল’।


আতপ চাল, আর গঙ্গার জলে কলা চট্‌কানি প্রসাদের মধুর স্বাদ আজও জিভে  
লেগে আছে, যেমন লেগে আছে সিন্নীর সুমিষ্ট দানা দাঁতের ফাঁকে। মন্ত্র তন্ত্র
বুঝি না, ঠাকুর মশাই ভালোবাসার কথা বলতেন, অমঙ্গল দূর করতে প্রজ্জ্বলিত
শিখার আলো মূঠোয় ভরে ছুঁয়াতেন কপালে, আর মুয়াজ্জ্বিনের ঠোঁট নাড়ানো দোয়ার
ফুঁকে বিপদ আপদ কাটিয়ে দেখতে দেখতে বড় হলাম, আত্মিয়তা বড় হল, সমাজ
বড় হল, বড় হল স্বপ্ন, অথচ কেমন জানি বিশ্বাস ছোট হতে লাগলো দিনের পর দিন।  


কাদের অলক্ষ্য ইশারায় যেদিন থেকে ঐ শব্দেরা এসে- মাঠে, ময়দানে,
সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে উচ্চারিত হতে লাগলো, আর অমনি সেদিন থেকে অলক্ষ্যে
আত্মিয়তার গাঁথুনিতে ছন্দহীনভাবে দুরত্ব বাড়তে শুরু করলো, এখন দাদারা
হাসেন ঠিকই তবে তাতে আন্তরিকতার অভাব, ভাইয়েরা সালাম নেন ঠিকই
তাতে সন্দেহের দোলাচাল, মাশির আঁচলে নাড়ু লুকানো, দিতে ভয়! ভাবেন
যদি অসুস্থতায় বিনা কারনে অপবাদের দায় নিতে হয়, খালারাও কেমন ভুলেও
আর বলেন না- বাবুরে, চালের আটার রুটি আর সূজির হালুয়া আছে সময় করে
খেয়ে যাস বাবা।  

এখন সন্ধ্যার আযান কিংবা পূজোর ঘন্টায় বিরক্ত লাগে, কারও কোন অসুবিধা
হচ্ছে কিনা তা ভাব্বার সময় নেই, কেননা স্বধিনতা, এ শব্দটাও ঠিক যাচ্ছে না,
মৌলবাদী- নাহ্‌ এটাও কেমন গোলমেলে ঠেকছে। কারণ এমন অনেক শব্দ শেখানো
হয়েছে, যেমন ওদের থেকে এখন শিখেছি সমঅধিকার। তাই শালীনতারা মুখ
গুঁজে কাঁদে, পরম্পরা, ঐতিহ্য আর ইতিহাস আঘাত সইতে না পেরে আত্ম হত্যায়
মরে যেতে চায় কাউকে কিছু না জানিয়ে। কিছু ভয়ংকর শব্দরা যে এ ভাবে হত্যা
করবে বাঙ্গালীর হাজার বছরের সুখ, আনন্দ, বিশ্বাস, ঐতিহ্য আর ইতিহাস,
তখন কে জানতো! তাই সকলেই সাবধান! বিনিতভাবেই বলছি- শব্দ চিনতে হবে,
শব্দ চেনার প্রয়োজোণ আছে। শব্দ যেন স্বপ্নের মৃত্যু না ঘটায়, হিন্দু মুস্লিম নয়,
শব্দ যেন আর কোন ভাবেই হত্যা না করে বাঙ্গালীর গর্ব, ঐতিহ্য আর পরম্পরা।