এবারও কি শীতের কাঁপন মনে করিয়ে দিবে ওদের গায়ে শীত বস্ত্র নেই,
ঘরে খাবার নেই। পেঁয়াজের কেজি কত হল  ও নিয়ে ভাবনা না
থাকলেও এবারের শীতে দুধের বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে কি না অথবা
ঘরে মৃত প্রায় রুগ্ন মা কে মা বলে কিংবা জরাগ্রস্থ বাবা কে বাবা বলে
আর কখনো ডাকতে পারবে কি না কুঁড়ে ঘরের চালায় হেলান দিয়ে বসে
ভাবে তারা মিয়া।


খাস জমির এক চিলতে ঘুঁটা উঠোনে ঝাঁটার পরশ বুলিয়ে সকালের বাসি
উঠোন ঝাড়ু দিতে দিতে বউ তার মনটাকে পরিষ্কার করছিলো যেন, রাত
কষ্টের নির্ঘুম কালশি পড়া চোখ ভালোবাসার কাজল বানিয়ে বলে-
তারা মিয়া আজ এত উদাস কেন, বেলা গড়িয়ে গেলো, কাজে কখন যাবে
সে। তারা মিয়া হাতে পাওয়া খড় টুকরো টুকরো করতে করতে যেন নিজের
মনের কষ্ট গুলোকে টুকরো করছিলো, তাই বউয়ের আর্তি কানে গেল না।


তারা মিয়ার ঠোঁটে কষ্টের হাসি জমে থাকে, ভাবে বাবা-মা তার নাম
কেন যে তারা রেখেছিলো, আজকাল তো  তারাদের মেলা হয়, ‘ষ্টার’
খ্যাতি পায়, মানে তারা ‘তারা’ হয়ে সমাজের কর্নধার হয়। ঐ ‘তারা’-দের
সাথে কত মন্ত্রী  মিনিষ্টারগন এসে শীত বস্ত্র দিতে দিতে বলে- এবার দেশ
ধনাঢ্য হবে, বস্তিবাসীদের পাকা কলোনী হবে, অন্ন, বস্ত্রের সংস্থান হবে,
আর কাউকে শীতের যন্ত্রনায় মরতে হবে না। অথচ তারা মিয়া তারা
হয়েও গন্ধ বস্তির ধুলোয় লুটায়  প্রতিদিন।


তারা মিয়া এখন বুঝে সব ভোটের রাজ নীতি, ‘তারা’ হতে গেলেও
আজকাল ভোট লাগে, টাকার পাহাড় গড়তেও ভোট লাগে, বস্তিবাসীরা
তারা মিয়া না থেকে ‘তারা’ হোয়ে গেলে ভোট পাবে কোথায়, শীতের বস্ত্র
বিলাবে কোথায়, কষ্টের হাটে মৌসুমী ভোটের জন্য মায়া কান্না করে
‘তারা’-র দ্যুতি ছড়াবে কোথায়। তাই শীতের কাঁপন থাকবে, অভাব
থাকবে, মৃত্যু থাকবে, আর থাকবে ‘তারা’-দের সাথে কত মন্ত্রী মিনিষ্টারদের  
আনাগোনা বস্তিতে চিরকাল।


ঘরে ছাই সর্বস্ব শুকনো চুলো্র পাড়ে শুন্য হাড়ি উপড় হয়ে পড়ে থাকা দেখে
বউটার চোখে জল আসে, বউ বলে- শীতের কথা চিন্তা করে কি করবে সে,
আবর্জনায় আগুন লাগিয়ে ফির বছরের মত আবার বাঁচার চেষ্টা করা যাবে।  
তারা মিয়াকে এ কথা বলতেই তার চোখে আগুন ঝরে, তার মন পুড়ে, মন
পুড়ার তাপ যেন ধাক্কা লাগে কল্পনায়। তারা মিয়া দিব্যি দেখে একটা
দিয়েশলাই। ভাবে পেঁইয়াজের দাম বাড়ুক, ‘তারা’-দের দাম বাড়ুক, ভোটের
দাম বাড়ুক, কিন্তু দিয়েশলাইয়ের দাম এখনও তো এক টাকা। এবার মন
পুড়া নয়, এবার আবর্জনার আগুনে শীত পোহানো নয়, নয় শীত বস্ত্রের ভিক্ষা।
এবার সভ্যতার ‘তারা’-দের গায়ে কলঙ্ক এঁকে দিতে নিজেরাই পুড়ে মরবে বস্তিশুদ্ধ!