জানি না আমার মত আর সকল বিবাহিত পুরুষের একই অবস্থা হয় কিনা,
বিয়ে বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাওয়া। আমি তো বেমালুম ভুলে বসে থাকি।  
অথচ বউ, একটি তারিখও ভুলে না। নিজেরটাই শুধু নয়, ছেলে মেয়ে ,
তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষে ভাগ্নে, ভাগ্নি, ভাস্তে, ভাস্তি কার জন্ম দিন কবে,
জা, ভাসুর, দেবর, ননাশ, ননদিনী কার কবে বিয়ে বার্ষিকীর দিন, সব
তার মনে থাকে।মাইনের জন্য আজ মাসের কত তারিখ,পকেট ফুটো হয়ে
আছে কিনা, এ নিয়ে তার ভাবনা নেই, ভাবনা নেই অফিসে বসের মুড
কেমন।আর আমার হয়েছে যত মরণ!  


আমার মনেও থাকে না আজ ঘরে ভাতের চাল, তরকারী রান্নার তেল
আছে কি না। বাজারে শাক স্বব্জির দাম চড়া, হরতাল, অবরোধ, পরিবহন
ধর্মঘট বাজারে নাকি আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কবে যে জলের দাম ছিলো
তাও বলতে পারব না। বলতে পারব না “ভাতে মাছে” বাংগালী কিভাবে হল।
বাজারের ভয়ে ও সবের খোঁজ ইচ্ছে থাকলেও আর নেয়া হয় না। চাকুরেটে
মানুষ। সেই সকালে বের হোই জনবহুল নগরীর জ্যাম ঠেলে ঘরে ফিরতে
ফিরতে সন্ধ্যা বেরিয়ে যায়। বৌ-ই সব সামলায়। নিজ গৃহে আমি যেন এক
জায়গিরদার। তবুও বৌ ভালোবাসে!


মায়ের ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়া বাংগালী আমরা। কিন্তু আজও
ইংরেজীর মাস গুনে মাসের শেষে মাইনেটা পাই। ঐ ইংরেজী মাস আর
মাসের শেষ তারিখটা বেশ মনে থাকে। কিন্তু বাংলা মাসে্র কোন মাস,
কত তারিখ, একদমই বলতে পারব না, মনেও থাকে না। ভীষণ লজ্জা
আর কষ্ট পাই। ভাবি কি জবাব দেবো ঐ ভাষা শহীদদের কাছে? এমনই
হতভাগা বাংগালী আমি। এক চিত্রকরের ছবিতে দেখেছিলাম বাথ রুমের
টুথ পেষ্ট যখন সিপির কাছে এসে ঠেকে, তখন বুঝে মাস শেষ হল বলে।  
বাথ রুমে গিয়ে মাসের জন্য সে ভাবনাও ভেবে দেখেছি, হয় না!  


কতটা বছর পার হল, বিয়ের প্রথম রাতে কি ভাবে তাকে আদর
করেছিলাম। বউ এখনও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনতে চায়। অভিমান করে বলে,
কপালে নাকি একটা চুমু দিয়েছিলাম। ওতে ওর মন ভরেনি। কেন মন
ভরেনি, জিজ্ঞেস করলে এখনও লজ্জার মাথা খেয়ে ডেব্‌ ডেব্‌ করে চেয়ে  
থাকে আর ভাবে আমি চুমু দেয়াটাও শিখিনি। আসলেই তাই। আমি শুধু
শিখেছি সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফেরা পাখিদের আলাপন থেকে কবিতার কিছু
শব্দ, আমি শিখেছি আকাশ ভরা বৃষ্টির আবেগের কাছে কিছু ছন্দ, নভো
মন্ডলের কাছে শিখেছি নিয়মের মায়াজাল, আর শিখেছি “মামার” মদদহীন  
কষ্টে পাওয়া চাকুরীতে সকাল সন্ধ্যা কলম পেষা। বউ তবুও ভালোবাসে!  


বউয়ের এ ভালোবাসাটা অন্য রকম। এর সাথে সে বার যোগ হল
ভাগ্যের হাত। বিয়ে বার্ষিকীর দিন তো আর অফিস ছুটি থাকে না।
আমার কি দোষ। অফিস থেকে ফিরছি এক ফুল কুঁড়ি বিক্রেতা মেয়ে
চোখের সামনে এসে এক গুছো গোলাপ ফুল ধরে বলল- দাম মাত্র দশ টাকা।  
আর তাতেই মনে পড়ে গেল আজ না বিয়ে বার্ষিকীর দিন। ঐ একবারই
খুব আদর করেছিলো বউ। এ ছাড়াও সে আমাকে খুব ভালোবাসে, যত্ন নেয়।
আমি অবাক হোই। আমি তো কিছুই করি না, এক চাকুরী ছাড়া। তবুও সে
এত ভালোবাসে কেন? এক দিন এ কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল-সব নারীদের
স্বপ্ন থকে মা হওয়ার, সে মা হতে পেরেছে, আর চোখের সামনে যে সন্তানেরা
বড় হোচ্ছে, আমিই তাদের বাবা, তাই।
---------------------------------------
(১৪ নভেম্বর, আজ আমার বিয়ে বার্ষীকীর দিন। বউকে খুশি করার জন্য লিখলাম, তবুও যদি একটু পটে যায়, হা হা হা!  তোমাদের কেমন লাগলো জানাবে।)