রাত্রির নগরিতে নিয়ন বাতির রংগিন আলো চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিলো
ওর মুখোমন্ডলের উপর। অস্পষ্ট আলোয় হাল্কা  প্রসাধনীর কাঁচা
পার্লারের সাজ আর সস্তা অডোরের বোঁটকা গন্ধ বাতাসের নাককে
যেন ভেংচি কাটে। পায়ে চটা  উঠানো অতি সাধারণ ম্যাচ করা
স্যান্ডেল পরিধানের প্রয়াস। মেয়েটি এ গভীর রাতে পাঁচতারা হোটেলের
হাইব্রীড চত্বরে জীবনের বাস্তবতাকে সংগী করে একা দাঁড়িয়ে, ওর চোখে
ভয় নেই বরং আছে ভয়কে উপেক্ষা করার সাহস, কেননা ও একজন
কর্পোরেট বারবনিতা।


এবার শীত যেন জোট বেঁধে নেমেছে, সাথে কন কনে ঠান্ডা হাওয়া।
পাঁচ তারা হোটেলের পরিবেশ তখন মধ্য প্রহরের সুধায় মাতাল।
তাই ঠান্ডারা হোটেলের বার, লবি আর নিবু আলোর গ্রান্ডুইস রেস্টুরেন্ট
থেকে যেন উধাও।তখনও   কেউ কেউ শিশার ধুমায়ীত ওয়ার্ল্ড থেকে নিজেকে
মুক্ত করে ছুটছে সুগন্ধী টয়লেটে দীর্ঘ শ্বাসের আশায়। এত ঠান্ডার ভেতরেও
মেয়েটির শরীর জড়ানো শিফনের হাল্কা ওড়না নিয়ে বাতাস এমন ভাবে খেলা
করছে, তার সুডৌল স্তনের মাংশের গন্ধ যেন ফুটে ফুটে বেরুতে চায়। এত ঠান্ডা
তবুও ঠান্ডারা যেন হার মানছে ওর যৌবনের কাছে।

বঞ্চনার উতকন্ঠা মুখের নির্বাচিত হাসির আড়ালে ঢেকে, খদ্দেরের আশায়
ও তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। ঘরে দুগ্ধ পোষ্য শিশু। বুকে দুধ নেই, প্যাকেটে
দুধ নেই, ফিডারে দুধ নেই, তবুও শিশুর দুধের আশায় রাত জাগা চোখ ভরে
দেখে কিভাবে মদের গেলাস ভরতে ভরতে দুধ হোয়ে যাচ্ছে তার সারা শরীর,
কি ভাবে ব্রার হুঁক খসে যাচ্ছে অন্যের মুখে  দুধের বুঁটি ভরতে। তবুও চোখে
কেলেন্ডারের স্বপ্নরা পৃষ্ঠ না দেখিয়ে আগলে রাখে নষ্ট যৌবন।  


তবুও নগরের গভীর রাতের ঠান্ডা ভারী বাতাস অভিসম্পাদ দেয়, অভিসম্পাদ
দেয় ঐ নিয়ন বাতির একলা নগ্ন আলো, তিরস্কার করে সভ্যতার ঘড়ির কাঁটা
ঐ আভিজাত্যের জৌলুসে চুঁড় হওয়া সুশীল সমাজের মুখোশ পরা খদ্দেরকে,
অভিসম্পাদ দেয় তার সম্পদকে।। কখনও নীরবে কেঁদে কেঁদে যায় বারবনিতার
সম্ভ্রমকে খান খান হতে দেখে।আর ভোর রাতের বিছানায় বিভক্ত বাতাস হোয়ে
পথ দেখায় আগামীর।  


বারবনিতার নিষ্পেষিত জীবনে এমনি করে একটি রাত আসে আবার যায়,
আবার আসে আবার যায়। আবার একটি রাত, রাতের পর রাত শিশুর মুখ
চেয়ে যৌবন নিংড়ানো স্বপ্ন দেখে বারবনিতা খদ্দেরের আশায়, আর সে স্বপ্ন নিয়ে
যেন রাত্রিরা জাগে বারবনিতার চোখে।