তোমাকে নিয়ে হাঁটছিলাম শরতের মাঠ চিরে
হলুদ খাদ্য শস্যের বনেদী গন্ধ তুলে নিতে,  
শিশির খুলে দিয়েছিলো সোহাগে তোমার
পায়ের কৃত্রিম আবরণ মাটির ছোঁয়া পেতে।


ঈষত কাদা জলের বিড়ম্বনা মন্থর করতে
পারেনি তোমার মায়ের চোখে দেখা কৃষানী মন,  
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সম্মুখে কত আল পথ,
ধান পথ, নাড়া পথ মাড়িয়ে আজ তোমার আগমন।


তুমি অগ্রাহায়নের মুক্ত বাতাসে দুষনহীন হলুদ
বুকের মাঝে খুঁজছিলে সবুজ কোলাহল মন,
হেমন্তের বিশাল পাথার ঘিরে থাকা ইউক্যালিপটাস,
এক্লামেশিয়া আর সবুজের মাতাল করা ঘন শালবন-


আনন্দে যেন ভাসছিলো। শরতের সাদা মেঘেরা
কুয়াশার শুভ্রতার অপেক্ষায় ছিল রাতভোর,
মধ্যমাঠে পাকা হলুদ ধান গাছের গায়ে ফুটে ছিল
এক ঝাঁক সাদা বক রৌদ্র মেখে দিনভোর।


ধান খাওয়া পাখিকে দেখানো কাক্তাড়ুয়ার চোখ
এবং তার শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজের ভঙ্গি ছিলো ম্লান,
টিয়ে, চড়ই, কবুতর ওরাও চেয়েছিল পাকা ধান ক্ষেতে
নবজন্মের সুর বাজুক প্রানে প্রানে মিলতে নতুন প্রান।  


ধান ক্ষেতের আলে শুভ্র শামুকের ডিম পরিনত খোলসের
ভেতর শরতকে নিয়ে ঘুমিয়েছিল নবান্ন রোদ্দুর,
তুমি আসবে বলে একই গর্তে হলুদ ধানের সংগৃহীত সম্ভারে
বাস করছিল সাপের সাথে কিছু নেংটি ইঁদুর।


শিশির ভেজা জালে আটকে পড়া রঙ্গিন ফড়িংয়ের সাথে
ছিল অগ্রাহায়নী ডোরা কাটা বাঘ মাকড়সা,
এ যেন কেবল তোমার প্রতিক্ষা, তুমি শরতের দেয়া
অগ্রাহায়নের প্রকৃতি দু’পায়ে মাড়াবে বলেই এত মেলামেশা।


তুমি আসবে বলে অগ্রাহায়ন তাই আজও নবান্নের
আয়োজন নিয়ে বসে আছে আনন্দ লক্ষ্মী খামারে,
হেমন্ত পূর্ণিমার চাঁদও তাই হারায়নি ঘন কুয়াশায়
তোমাকে উষ্ণতায় ভাসাবে বলে হেমন্ত রাত্রির বাহারে।


এত কিছুর প্রতিক্ষা ছিল কেবল শিশিরের কাছে তোমার
প্রান ভরে চাওয়া, পেতে হেমন্ত অগ্রাহায়নের গন্ধ,
প্রকৃতি তাই পুরনো অভ্যেস আরও নতুন করে
গুছিয়ে নিয়েছিল তোমাকে দিতে নবান্নের অপার আনন্দ।