তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেই দিন, মাস, সাল
তার কোন কিছুই এখন আর মনে পড়ে না। তবে সময়টা
বেশ মনে আছে। তখন কেবল পড়ন্ত বিকেল। ব্যস্ত কোলাহল
শহর ছেড়ে আশুলিয়া বিলের শান্ত জলের উপর দিয়ে এক জোড়া
পানকৌড়ি উড়ে যাচ্ছিল সদ্য শিকারের খোঁজে। তুমি শান্ত জলে
পানকৌড়ির ফেলে যাওয়া ছায়ার মধ্যে আমার থেকে নিজেকে
আড়াল করার ভাষা খুঁজছিলে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম  
তোমার বিহ্বল চোখে বিলের জল কি ভাবে সাগর হোয়ে উঠছিল।


কান্না নয়, সেটা ছিল আবেগ। প্রথম দেখার ভীরু প্রেম নিঃশব্দ
আবেশ ছড়িয়ে তোমাকে ভেতরে ভেতরে ভিজিয়ে দিচ্ছিল চৈত্রের ঘাম,
বিলের আঁশটে বাতাস কচুরীপনার বেগুনী ফুল দুলিয়ে তোমার কানে
বার বার শুনিয়েছিল কেমন হয় প্রথম ভালোবাসার শব্দ, প্রথম
ভালোবাসার মানুষটিকে কি করে বলতে হয় সেই শব্দের কথা। অথচ
তুমি তখনও ভিজে ভিজে যাচ্ছিলে শরীর থেকে মন, মন্ থেকে আরও
গভীরে যেখানে যৌবনের গুপ্ত ভেজা আলোড়নকে তুমি এই প্রথম টের
পেয়ে শংকিত ছিলে আমার আঁতুড়ে প্রেমের কাছে।


মনে আছে তুমি একটি কথাও বলতে পারোনি মুখ ফুটে। কেবল নোয়ানো
চোখের পাতায় ভীরু দৃষ্টি ছিল আরও অবনত।পৃথিবীর শরীরে তখন সদ্য
বরষার জল শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিক্ষায়। তরুলতা, বট, শিমুল, দেবদারু,
মেহগনি  বৃক্ষের শুকনো ডাল তির তির করে কাঁপছে সবুজের রঙয়ে
ভরে উঠবে বলে। ওদের নব পল্লবে আগমনী ভাষা আমি স্পষ্ট কানে
শুনতে পাচ্ছিলাম। ওরাও তোমাকে প্রথম ভালোবাসার অনেক কথা
শুনিয়ে যাচ্ছিল অথচ তুমি যেন মগ্ন ছিলে নিজের ভেতর অন্য বাগানে।  


তুমি ছিলে অবুঝের মত, তোমার ঘামের মিষ্টি গন্ধ এসে লাগছিল
আমার উত্তেজিত নাকে।ভালোবাসার শব্দরা হারিয়েছিল কথা, সুর, ছন্দ।
বিলের শীতল জলে খেলে যাওয়া ঢেউয়ের শব্দে তোমাকে খুঁজছিলাম
পানকৌড়ির ফেলে যাওয়া ছায়ার মধ্যে কি কথা তুমি বলবে বলে
নিজেকে খুঁজেই হয়েছিলে সারা। তবুও সে কথা হয়নি বলা, যা আজও
না বলাই রয়ে গেল। আর আমি প্রথম দেখার সেই ক্ষণটুকু, তার অব্যক্ত
ভালোবাসাটুকু এখনও বুকে করে আমাদের প্রথম ভালোবাসায় আজও
হারিয়ে যাই গভীর থেকে গভীরে।