আমার চোখে জল, নাকি লিখব আমাদের চোখে জল। তোমার চোখে রোদেলা
রঙ্গিন চশমা, নাকি লিখব তোমাদের চোখে রোদেলা রঙ্গিন চশমা। ইদানিং
ফাগুনকে বাংলার রৌদ্ররস জনপদে সন্ধিভঙ্গ পুড়তে দেখে ভেতরে কষ্ট হচ্ছে,
সারি সারি শুকনো খড়ের গাদার পাতে যে আঙ্গিনায় ফাগুনের বসন্তে পুর্ণিমায়
বসত পাশা খেলা, দাবা, লুডু, শাপ লুডু খেলা, আর প্রশান্তির হুঁকায় গড়
গড় শব্দে পুঁথি পাঠের আসর, সে সব কেমন থমকে আছে।


আমি ভিতু হচ্ছি নাকি আমরা ভিতু হচ্ছি, তোমার জল কামানে রঙ্গিন জলের
ভয়াল পিচকিরি নাকি তোমাদের জল কামানে রঙ্গিন জলে ভয়াল পিচকিরি
মেরে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টায় কি আমার নাকি আমাদের মনে পুষে রাখা ক্ষোভ
ভংগ হচ্ছে, নাকি আরও বাড়ছে। এ নিয়ে আমি মানে আমরা বেশ বিচলিত।
কিন্তু তোমার বা তোমাদের কোন কিছুতে এসে যায় বলে মোটেও মনে হচ্ছে না।


ইচ্ছে ছিল তোমাকে নিয়ে লিখব, তোমার কাছে অভিমান, রাগ, শঙ্কা আর
অযাচিত কষ্টের কথা লিখব। কিন্তু তোমাকে লিখতে গিয়ে আজকাল সামগ্রীকভাবে
সকলের মুখ ভাসছে। যারা আমার মত নয় বরং আমার চেয়েও নির্ঘুম কষ্টের
রাত কাটাচ্ছে, আমার চেয়েও বেশী ক্ষতি মেনে নিতে নিতে স্বপ্ন দেখাও ভুলে গেছে,
যারা ভুলে গেছে পাখি ডাকা ছায়া ঘেরা আপন কুঁড়ে ঘরের আঙ্গিনা, ফসলী
মাঠের ডাক, ভুলে গেছে প্রায় মেঠো পথে হেঁটে যাওয়া গঞ্জের হাট, খেয়া পার,
উদাসী দুপুরে আড় বাঁশির উদাস করা সঞ্জীবনী সুর, তাদের কথা মনে পড়ে।


মনে পড়ে তাদের মায়া ভরা চোখ, করুণ হাসি, নিবু নিবু স্বপ্নের ভেতরেও
ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস, তখন ইচ্ছে করে না তোমাকে নিয়ে শুধু ভাবতে, ইচ্ছে
করে না কেবল তোমাকে নিয়েই শুধু লিখতে। সামগ্রিক ভাবেই তাই তোমাকে
প্রাত্যহিক অভ্যেসের বিষয় লিখতে গিয়ে তোমাদেরকে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে,
তোমার কাছে কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তোমাদের কাছে কষ্টের কথা বলতে
মন ব্যকুল হয়ে উঠছে। তোমার মানে তোমাদের চোখ থেকে, মন থেকে
এমন কি পদ থেকে যদি রঙ্গিন জগত সরিয়ে আমাকে অর্থাত আমাদেরকে দেখতে
শান্তির কাঙ্গাল হিসেবে তাহলে ভালো হত।