প্রথম ভালোবাসা কি ভোলা যায়? সকলেই বলে না। অথচ আমি
কেমন জানি ভুলতে বসেছি তাকে। ঠিক যেমন ভুলতে বসেছি আমি
কোন দিন কবিতাকে ভালোবেসেছিলাম, কোনদিন কবিতার প্রান ধার
করে নিজের প্রান পাখিকে বাঁচিয়ে রাখছিলাম প্রতিদিন অথবা কবিতার
কাছে জীবনের আশ্রয় চেয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম আগামী স্বপ্নকে ঘিরে।
তাই আজকাল কবিতা থেকে কেমন দূরে সরে যাচ্ছি মনে হয় অথবা
কবিতাই আমাকে পাশ কাটিয়ে চলছে দৃশ্যত।


ধার করা অর্থ ফেরত না দিলে কি ভোলা যায়? অথচ আমি কেমন
জানি ভুলতে বসেছি তাকে।যেমন আমি ভুলতে বসেছি প্রকৃতিকে, আমার
চারিপাশকে, আমার সোনালী সকাল, উদাস দুপুর, চঞ্চল বিকেল, আবেগী
সন্ধ্যা আর মৌনতায় ভরা স্বপ্নের সূতোয় বুনা নরম রাত্রিকে। আমি
যাদের শরীর থেকে, যাদের গন্ধ থেকে, যাদের সুখ-দুঃখ থেকে শব্দমালা
ধার করে গেঁথেছি কবিতার শরীর, সাজিয়েছি কবিতার মুখ, ভাসিয়েছি
তাকে হাজার মনের আলোক বাতাসে।


কিন্তু একটিবারও বিন্দু সময়ের জন্যও ভুলতে পারি না মাতৃভূমি মায়ের
মুখ। সে মা আমার আজ কোন অদৃশ্য চণ্ডালের ভয়াল গ্রাসের মুখে, মা
আমার আজ কেন আবার রক্তে ভিজছে, মা কেন কাঁদছে, কেন সে আজ
নিদ্রাহীন রাত্রি জাগছে, কেন তার নম্র শরীর পুড়ছে, কেন তার সন্তানেরা
আবার হচ্ছে ভিটে ছাড়া? মা আমার আজ আরও ভীত সন্ত্রস্ত যখন
দেখে ঐ চন্ডালের সাথে পুরনো অসুরের শকুনী খামচা আজও মায়ের
মানচিত্রে ছায়া হয়ে বিরাজ করছে।


মায়ের এমন কষ্টের কোঁকানিতে, ভয়ার্ত থাবার হিংস্রতার দিনে এ শান্তি
প্রিয় স্বধীন শরীর ঝলসে যেতে দেখে, রক্ত ঝরতে দেখে, মা’কে গুমরিয়ে
গুমরিয়ে কাঁদতে দেখে কোন সন্তানের ভালো লাগে কোন কিছু করতে।তাইত
ইদানিং ভালো লাগে না প্রথম প্রেমের কথা ভাবতে, ভালো লাগে না ধার
করা অর্থের মূল্যের কথা ভাবতে, ভালো লাগেনা কবিতা লিখতে। তাই
আজকাল কবিতা থেকে নির্বাসনে আছি।আর মাকে সুখ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য
কালির কলম ছেড়ে রক্তের কসম নেয়ার প্রতিক্ষায় গুনছি নেতৃত্বের প্রহর।