আচ্ছা এ ভাবেই এক সময় বুঝি মৃত্যুকে আর ভয় লাগে না।
একে একে তো সবাই চলে গেল। দাদা, দাদি, নানা, নানি,
বাবা, মা, পরিচিতি অপরিচিত আত্মীয় স্বজন, সহপাঠি , খেলার
সাথি। শুধু আমি বেঁচে আছি। জালালপুরে মকবুলটা এখনও
বেঁচে আছে। এ বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল।
মকবুল পক্ষাঘাতগ্রস্থ। জীবনটা তার থেকেও যেন নেই।


একদিন দেখা, চোখের পাতায় যেন নোনা জলের ভারী আস্তর পড়েছে।
পাতা ভারী হয়ে গেছে। নইলে বড় কষ্ট হবে কেন চোখের পাতা মেলে
কথা বলতে। বলল- এ বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল।
কেন যে উপরয়ালা তুলে নেয় না তাকে! অথচ এই মকবুল ভরা বরষায়  
খরস্রোতা তুলসীগঙ্গা নদীর স্রোতকে হার মানিয়ে পার হত এক নিমিষে।  
আমি অবাক হয়ে ভাবি আমিওতো ওর বন্ধু। আমারও সময় হয়ে এলো।


কিন্তু আগের মত আর মৃত্যুকে ভয় লাগে না। এখন বুঝি মৃত্যুটাই
চরম সত্য। যেমন জানি- দিন আসলে রাত্রি আসবে, সুর্য উদয় হলে
অস্ত যাবে, সাগরে জোয়ার ভাটা হবে, চাঁদ মহোনীয় আলো ছড়বেই,
বাগানে ফুল ফুটবে, পাখিরা গান গাইবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এ সব  
জানাটাও প্রকৃতির সাথে বড় হতে হতে, বেড়ে উঠতে উঠতে বেশ মানা
হয়ে গেছে যুগের পর যুগ।আরও জানা হয়েছে জন্ম হলে মৃত্যু হবেই।  


মৃতুটাকে ইদানিং ভয় না পেলেও বাঁচতে ইচ্ছে করে, বাঁচতে ইচ্ছে করে
কবিতার সাথে কথা বলতে, বাঁচতে ইচ্ছে করে কবি বন্ধুদের সাথে অনেক
কথা বলতে, বাঁচতে ইচ্ছে করে বিগত সুখ স্মৃতির মাঝে হাঁটা হাঁটি করতে,
ভাবতে ভালো লাগে মনের মত কাউকে নিয়ে একটা নির্জন দ্বীপে বাস করতে।
যার সাথে সারাদিনমান আমার অব্যক্ত ভাবনার কবিতার শিশুগুলোকে নিয়ে
সারা দিনমান গল্প হত, আবৃতি হত। ও তা বুঁদ হয়ে আমার কবিতা শুধু নয়
কবিতার পেছনের গল্প শোনার জন্য বায়না ধরত। আর আমি তা কবিতার
চেয়েও সুন্দর করে তার কোলে মাথা রেখে বলতাম- তুমিই আমার কবিতা।