আচ্ছা তোর মেয়েরা কি চেনে নল-খাগড়ার বন, জানে কি
তোর একজন দুষ্ট বাল্য বন্ধু ছিল? যে তোর মাথার কোঁকড়া
চুলে খগড়া বনের কাঁটা ফল মলে দিত, তুই হাত পা ছুঁড়ে
কাঁদতে কাঁদতে তাড়া করতিস আমাকে, আর আমি ততই  
ছুঁড়ে মারতাম খগড়ার ফল তোর নাতিদীর্ঘ কোঁকড়ানো চুলে।

আচ্ছা তোর কি মনে পড়ে বর-বধু সাজার খেলা! এটাতে  
অবশ্যি তোর আগ্রহটাই ছিল বরাবর বেশী। কি জানি হতে
পারে- মেয়েরাই অল্প বয়স থেকে কেমন কনে সাজার ইচ্ছে
নিয়েই যেন বড় হয়। তবে বর হিসেবে আমাকে কেন ভালো
লাগত তোর, সে কথা কোন দিন জানা হল না।

অনেক রঙ্গের ফড়িং উড়ে বেড়াত নয়নজলির শ্যাওলা
জল ছুঁয়ে। লাল ফড়িং ছিলো তোর সব চেয়ে প্রিয়। এই
ফড়িং গুলোও ছিল বড্ড অস্থির। ওদের ধরা যেত না সহজে,
যেমন অন্য গুলোকে যেত। তোর জন্য তবুও একবার অনেক
কষ্টে এক লাল ফড়িং ধরে তার লেজে সূতো বেঁধে বশ করা
হাওয়ায় উড়িয়েছিলাম মাঠের সারাটা বিকেল।

আচ্ছা তোর মেয়েরা কি নয়নজলি চেনে? বাহারি রঙ্গের
ফড়িং কি দেখেছে-কি ভাবে ভাবনার চোখ মেলে উড়ে বেড়ায়
উতল হাওয়ায় ছোটদের দৃষ্টি কাড়তে। আর প্রজাপতির কথা যে
কি ভাবে বলব। এর জন্য ভাল লাগাটা অবশ্যি আমারই ছিল
বেশী, নিশ্চই তোর মনে আছে। ওদের রঙ করা পাখায় ইচ্ছে মত  
ভেসে বেড়াতে একবার হারিয়ে গিয়েছিলাম কালি বাড়ির
মধ্য দুপুরে। সে যাত্রায় তোর দেয়া ইশারায় ফিরেছিলাম
আপন ঠিকানায়।


এইতো সেদিন হঠাত শহর থেকে দূরে গ্রামের এক পরিবেশে
চোখে পড়ল নল-খগড়ার বন। অনেকেই খাগড়ার শাক সংগ্রহের  
জন্য তৎপর হলেও আমি এর কাঁটা ফলের সংগে তোকে নিয়ে
হারিয়ে গেলাম আমার বাল্য জীবনে। মাথার চুলে ফল আটকালাম,
অনেকেই আমার ভালো লাগা বিগত অনুভূতির কথা না জেনে
তা সরিয়ে দিতে চাইলেও তোকে সংগে করে ডুবে থাকলাম হারিয়ে
যাওয়া আমাদের বাল্য জীবনের স্মৃতির এ্যালবামে।