একটা পরগাছাও বিগত জীবনের অনেক ঘটনায় স্মৃতির সাথে অকাট্য অংশ হয়ে যায়। বট গাছের সাথে তাল গাছ নাকি তাল গাছের সাথে বট গাছ, কে যে ছিল কার পরগাছা- তা নিয়ে ভাবনার চেয়ে এর সাথে কিশোর মনের একাত্মতাই ছিল পরম বন্ধুত্বের। ওর ঝুলন্ত মূলে দোল খেতে খেতে কখনও তাল গাছের দিকে চোখ পড়েছে। তখন পেছনের তুই হঠাত দেখি তাল গাছের মাথায়।


কি জানি কোন দেবতার আছর কিনা? ভূত বলে কিছু থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু আমার সে বিশ্বাসের ভীরুতায় শীতল পরশ অনুভূত হলেও তোকে ভালই লাগত যখন আমার মধ্যদুপুর হয়ে তুই আমাকে ইশারায় ডাকতিস মধ্যযুগীয় দেবীর ইশারায়। আমি ইচ্ছে করেই আর পিছন ফিরে তাকাতাম না। যদি তুই হারিয়ে যাস,  তুই যদি পড়ে যাস, যদি তুই দেবীর সৌন্দর্য্য বিবর্জিত হয়ে আমাকে সন্ধ্যার আঁধারে ডুবাস।


তার পরও সন্ধ্যা নামে বটের ঝুলন্ত মূল বেয়ে বেয়ে, সাথে নেমে আসে তোর অস্তিত্ব, গ্রীবায় কার উষ্ণ নিঃশ্বাস হয় অনুভূত। লোমশ হাতের অস্তিত্ব টের পেতেই ফিরে দেখি তোর এলো চুলে আমার হাত। বট মূল ছেড়ে তোর চুলের সাথে নিজেকে হারাই। সন্ধ্যা পালানোর আগেই তোকে নিয়ে পালিয়ে বাঁচি। বাতাসে মিলায় কোন অপ্সরীর খিল খিল হাসি। ভয় হয় ভাবতে। সত্যিই কি আমি তোকে জড়িয়ে আছি নাকি তুই আমাকে জড়িয়ে! মুহুর্তে হয়ে যাই পরগাছা।


এখনও তাই কোন পুরনো বট গাছ, পাকুড় গাছ, তাল গাছ, খেজুর গাছের সাথে জড়ানো পরগাছা  অথবা পোড় মসজিদ, মন্দির, গীর্জার চূড়ায় শ্যাম কালো পরগাছা দেখলে মনে পড়ে তোকে। মনে পড়ে তোর সেই মধ্যযুগীয় দেবতার ইশারায় ডাকা চোখের  চাহনী, মুখের হাসি, শুভ্র ঘাগরার  আস্তিনে অর্ধ ঢাকা মসৃণ হাত, পায়েল পড়া রাংগা পা, কপালে সিঁদুরে রাংগা টিপ । জানিস আমি আজও টিপ পরা কপাল বড্ড ভালবাসি। এর জন্য আমি পরগাছাও হতে রাজি !