কি বলব এখন, এটা কি প্রত্যাসিত না-অপ্রত্যাসিত?
যেখানেই যাই, যে জনপদেই হাঁটি
সেখানেই কোন অপরিচিতজন সম্পর্কের
রাখি বন্ধন নিয়ে সম্মুখে এসে দাঁড়ায়।
মনে হয় কত জনমের পরিচিত কেউ এসে কথা বলছে
বা কথা কইতে চাইছে পরম স্রদ্ধায়।
এড়াতে চাইলেও পারি না।


আজ যেমন হোটেলের আবাসিক তদারককারীর জিজ্ঞাসাঃ
আপনি কি একজন যোদ্ধা?
বললামঃ কেন বলুন তো! কি করেইবা বুঝলেন?
- আপনার শরীরীয় গড়ন গঠন কেমন যোদ্ধার অহংকারে ভরা।
আপনাকে দেখলে নিজেকেও ভাল লাগে যে,
কোন যোদ্ধার সাথে কথা বলিছি যেন।
- আমি যোদ্ধা তবে অবসরে।
রণে ভংগ দেয়া রনাংগনের স্মৃতিতে কাতর।

বলিঃ কেন বলুন তো?
- না, মানে আপনার কথা শুনলেও তো ভাল লাগে,
মানে ভাল লাগছে। আর অস্ত্র সংবরণে রণে ভংগ দিলেও
যুদ্ধ কৌশলের শিক্ষা তো আর জমা দেননি।
সুতরাং আপনি অমূল্য!
আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে, কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে।


- আসলে আমরা সকলেই যোদ্ধা।
তা না হলে মক্কা থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফাত,
আরাফাত থেকে মুজদালিফা, মুজদালিফা থেকে জামারা,
আবার মিনা আবার জামারা আবার মক্কা,
এ নিয়ে যে যুদ্ধ হল, যুদ্ধ ছিল, যুদ্ধ হয়,
যুদ্ধ হোচ্ছে এবং হবে আগামীতে শত সহস্রব...
এ যুদ্ধ তো হাজারও রনাংগনের বিজয় থেকেও
অনেক বড় অহংকারের!
তদারককারীর মুখ উজ্জ্বলতায় ভরল, যেন এ ভাবে তো
কেউ তাকে যোদ্ধা বলেনি কোনদিন।


একজন অতি সাধারণ মনের তদারককারী আমাকে বুঝলেও
তুমি কেবল আজও বুঝলে নাঃ
- আমি যোদ্ধা নাকি কাপুরুষ,
- আমি প্রেমিক নাকি প্রতারক,
- আমি হিংস্র নাকি মায়াময়,  
- আমি সৎ নাকি মিথ্যাচারী,
- আমি কেবল মরুচারী নাকি বহতা নদী!


অস্ত্র হাতে নিতে শিখলেও যে,
এ হাতেই গোলাপের কাঁটায় রক্ত ঝরিয়ে তবু বসে থাকি
তোমায় গোলাপের নিঃসৃত লালায় ভরাব বলে বুকের আংগিনা,
যোদ্ধার অহংকার থাকলেও ভালবাসার কাংগাল হয়ে বসে আছি
সেই কবে থেকে তোমায় জড়াব বলে এ বাহু ডোরে,
যুদ্ধাংগন ছেড়ে এলেও ভালবাসার জগত নিয়ে আজও
প্রহর গুনি তোমার আদরে হারাব বলে তোমার ভেতর।


অথচ তুমি আজও মুখ ফুটে বললে নাঃ
তোমাকে আমার এখনও দেয়ার মত আছে অনেক,
আমি পতিত হলেও ফুরিয়ে যাইনি,
আমি মরুচারী হলেও আমার ভেতর বাস করে সহস্র সবুজ প্রকৃতি,
আমি ঋদ্ধ হলেও রিক্ততা আজও ছুঁয়ে যায়নি।
অথচ আজও জানা হল না আমাকে কেমন করে কতটুক হৃদয় দিয়ে  
ভালবাস তুমি, নাকি ভালবাস না আদৌ!


০৬ জুলাই, ২০১৯ (২৬ আগস্ট, ২০১৮)।