একটা ইজেলে ছবি আঁকব আঁকব করে সে যে কবে থেকে আর্ট পেপারটা ক্লীপ দিয়ে
আটকিয়ে রেখেছি, মনে নেই। মন ভাঙ্গা শরীর গড়িয়ে দেখি তাতে এখন অপেক্ষার
ধুলোবালির আস্তর পড়েছে, ধরেছে কালচে রঙ। আশ্চর্য হয়ে ভাবি অন্য কোন রঙ
নয় কেন? তাহলে প্রতিক্ষার রঙ কি কালো, পোড়ার রঙ তো কালো জানি। শোকের
রঙও কালো জানি। তাহলে প্রতিক্ষায় মন নিশ্চই পুড়ে পুড়ে যায়। অলক্ষ্যে
শোক বাঁধে বাসা।


আমি বার বার যতই আঁকতে চাই একটা সুন্দর নীলনয়না রমনীর মিষ্টি হাসিমাখা মুখ,
ততই তাতে আঁকা হয়ে যেতে চায় অসম যুদ্ধে খন্ডিত শিশুর বীভৎস মুখমন্ডল, যুদ্ধ
বিদ্ধস্থ জনপদের ছবি। আমি হাসির জন্য টোল খাওয়া গালের ভাঁজ যতই আঁকতে চাই
তাতে ততই তার ছায়া গভীরে চোখের জল গড়িয়ে এসে বন্যা বইয়ে দেয়। আমি  যতই
কালো চুলের খোঁপার কুন্ডলী খুলে এলো চুলে কদম ফুল এঁটে দিতে চাই ততই দেখি
বিধ্বংসী বোমার আঘাতে কালো মেঘের কুন্ডলী হয়ে আকাশে উড়ছে যেন হাজারও
নারীর ছিন্ন ভিন্ন কেশ।


আমি তাই দ্রুত শাড়ির আঁচলের কথা ভাবি। এ আঁচল যে ভালবাসা নারীর প্রেমের
আঁচল, এ আঁচল যে মমতাময়ী মা’র শান্তির আঁচল, এ আঁচল যে জন্মভূমি মায়ের
সবুজ আশ্রয়ের আঁচল। তাই তাতে সাদা সবুজ রঙ ঢেলে দিতে চাই। সবুজ রঙ
যতই ঢালি দেখি তা দগ্‌দগে রক্ত গড়ানী লাল রঙ হয়ে ঝরতে থাকে, মনে হয়
আমি সদ্য প্রায়াত  কতগুলো অকাল লাশের মধ্যে প্রান নিয়ে পড়ে আছি, সাদা রঙ
যতই ঢালি ততই দেখি তা কালো রঙ হয়ে শোকে আচ্ছন্ন করছে চারিদিক। যেন শোক
শোক আর শোকে মুহ্যমান প্রিয় জন্মভূমি।


তাই আমার কল্পনায় নীলনয়না ভালবাসা রমনীর প্রিয় মুখ আর আঁকা হয় না। কেননা
আমি কোন দিনই অসম্পূর্ণ স্বধীনতা, অধিকার, দেশ যেমন ভালোবাসি না তেমনই
ভালবাসি না অসম্পূর্ণ প্রেম, অসম্পূর্ণ ভালবাসা, অসম্পূর্ণ নারী, অসম্পূর্ণ রঙ। তাই
আমার ছবি আঁকা অসম্পূর্ণই থেকে যায় বিদ্ধস্থ জনপদের আহাজারি মিছিলে।