শহুরিয়া বিদল জীবনে ব্যস্ত রান্না ঘর মাড়ানো তোমার আটপৌরে শাড়ীর
নেতানো আঁচলে কাঁচা মাংসের গন্ধ, স্বব্জীর গন্ধ, গরম মশল্লা, পাঁচ ফোড়নের
গন্ধ, ভাতের বলক তোলা উতল ফেনার গন্ধ বড্ড কাঁচা কাঁচা মৌলিক এবং
সঙ্গিন সখ্য মনে হয়।


দগ্ধ ভাবনায় তবুও ভাল লাগে যখন ঐ আঁচলের গন্ধের মাঝে খুঁজে পাই সরষে
ক্ষেতের হলুদ গন্ধ, মৌলিক স্বব্জী ক্ষেতের সবুজ গন্ধ, গাভীন ধান ক্ষেতের
জীবনের গন্ধ আবার কখনও বাতাসে ঝলসানো আগুনের রক্তিম গন্ধ- তখন
রান্না ঘরে তোমাকে বার বার উঁকি মেরে দেখতে ইচ্ছে করে!


দেখি তুমি ঘামছ, তুমি ভিজছ আর নেতানো ঐ আঁচলে খুঁজছ স্বস্তির অবকাশ
পরম যত্নে। বরফ নিয়ে নয় এ সৃষ্টি যে আগুন নিয়ে খেলা। আগুনের জিহ্বায়
উঠানো বাড়ানো তপ্ত শিখার ঝলসানো খেলা। মাঝে মাঝে মনে হয় সকল
সৃষ্টির উৎসই যেন জলজ, ভেজা ঘাম নির্ভর খেলা। তাইত সৃষ্টি এত মধুর,
এত তৃপ্তির এবং আনন্দের।


ব্যাঞ্জনার অনেক বয়ামের মাঝে তোমার হাত বড় সতর্ক থাকে লবনের বয়ামে।
এ জন্যই কি যে তুমি আজও বিগত স্মৃতির কাছে ঋণী সে প্রথম রান্নার কথা
ভেবে- আমি লবন বেশী পছন্দ করি না। নাকি সত্যিই তুমি মানো এত  
আয়োজনের পরও রান্নার আসল স্বাদটাই আনুপাতিক লবন মেশানোর দক্ষতায়
নির্ভর, নাকি ভাবছ- বয়স বাড়ছে, উচ্চ রক্ত চাপ, কি জানি কি সর্বনাশের
নেশায় মেতেছে রক্ত আমার শরীর নিয়ে!


তুমি বড্ড যত্নশীল খেয়ালী, বড্ড হিসেবি এবং সচেতন বধু, বন্ধু এবং মমতাময়ী
মা। তাইত আজও এত কষ্টের শরীর নিয়েও তপ্ত রান্না ঘরের ঝাঁঝালো গন্ডিতে
নিজেকে গরম তেলে ভেজানো সশব্দের মাঝেও খুঁজে নিতে পারো স্বার্থক জীবনের
গান, ভালবাসা নিখাদ বিশ্বাস। আর পরম মায়ায় আগলিয়ে রাখতে পার একান্ত
তোমার সাজানো স্বপ্নের সংসার।